ETV Bharat / state

Waste Plastic in Malda: বর্জ্য প্লাস্টিকের দুর্গন্ধে ঈদের খুশবু খোঁজে কালিয়াচকের 35 হাজার মানুষ

author img

By

Published : Apr 17, 2023, 5:11 PM IST

ফেলে প্লাস্টিকের বর্জ্য থেকেই পেট চলছে প্রায় 35 হাজার মানুষের ৷ মালদার কালিয়াচকে শতাধিক প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানায় বছরে অন্তত আড়াইশো কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে ৷

Waste Plastic in Malda ETv bharat
বর্জ্য প্লাস্টিকের দুর্গন্ধে ঈদের খুশবু খোঁজে কালিয়াচকের 35 হাজার মানুষ
বর্জ্য প্লাস্টিকের দুর্গন্ধে ঈদের খুশবু খোঁজেন কালিয়াচকের বহু মানুষ

মালদা, 17 এপ্রিল: কলকাতা থেকে 12 নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে শিলিগুড়ি যাচ্ছেন ৷ কালিয়াচক পেরোতেই চোখে পড়বে, রাস্তার দু’ধারে ইয়া বড় বড় প্লাস্টিকের বস্তা ডাঁই করে রাখা ৷ বস্তাগুলির আয়তন বিশাল ৷ তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝেমধ্যে নাকে দুর্গন্ধও ঢোকে ৷ আসলে সেই বস্তায় রয়েছে আমার-আপনার বাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বর্জ্য ৷ এ বার সেই বর্জ্যের দুর্গন্ধেই ঈদের খুশবু খুঁজছেন কালিয়াচকের হাজার পঁয়ত্রিশ মানুষ ৷

এই মুহূর্তে শুধু এই রাজ্য কেন, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের বর্জ্য প্লাস্টিকের হাবে পরিণত হয়েছে মালদার কালিয়াচক ৷ রাস্তায় ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে এখানে বছরে অন্তত আড়াইশো কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে ৷ মূলত সুজাপুর এলাকায় দু’দশক ধরে এই ব্যবসা ধীরে ধীরে বেড়েছে ৷ এখনও বাড়ছে ৷ এই ব্যবসার উপর নির্ভর করে রয়েছেন অন্তত 35 হাজার মানুষ ৷ রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা প্লাস্টিক ভাত জোগাচ্ছে তাঁদের ৷ দিচ্ছে ভবিষ্যতের ভরসাও ৷

কী করে হচ্ছে এই ব্যবসা ? মালদা-সহ বিভিন্ন জেলা, রাজ্য, এমনকী উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য প্লাস্টিক সুজাপুরে নিয়ে আসা হচ্ছে ৷ প্লাস্টিক সংগ্রহের কাজ মূলত করেন কাগজ কুড়ুনি এবং বাড়ির পুরনো জিনিসের ক্রেতারা ৷ তাঁরা মানুষের বাড়ি অথবা রাস্তা থেকে সংগ্রহ করা প্লাস্টিক নিজেদের এলাকার ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করে দেন ৷ ঠিকাদাররা তা পাঠিয়ে দেন মালদায় ৷ সুজাপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা ৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা বর্জ্য প্লাস্টিক সেখানে প্রথমে বাছাই করা হয় ৷ তারপর ধুয়ে এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে কিছু প্লাস্টিক রাজ্যের বিভিন্ন কারখানায় পাঠানো হয় ৷ বাকি প্লাস্টিকের টুকরো শোধন করে, শুকিয়ে, গলিয়ে এলাকার কারখানাগুলিতেই বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হয় ৷

আম, লিচু, রেশমের পর প্লাস্টিক শিল্প এই মুহূর্তে মালদা জেলার অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে ৷ অথচ করোনা হানা দেওয়ার পর প্রায় তিন বছর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এই শিল্প ৷ কারখানাগুলিতে তালা পড়ে গিয়েছিল ৷ বিপুল সংখ্যক শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়েও পেট চালাতে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন ৷ করোনার হামলা প্রতিহত করে দেশের অর্থনীতির চাকা গড়াতে শুরু করলেও তার অভিঘাতে আরও একটা বছর এই শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছিল ৷ অবশেষে চলতি বছর থেকে ফের এই শিল্পের চাকা স্বাভাবিকভাবে গড়াতে শুরু করেছে ৷ হাসি ফুটেছে শ্রমিকদের মুখে ৷ খুশি মালিকপক্ষও ৷ সবারই বক্তব্য, এ বার তাঁরা সত্যিকারের খুশির ঈদ পালন করবেন ৷

মসিমপুরের এক্রামূল হক এমনই এক প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিক ৷ তিনি জানাচ্ছেন, “আমরা গরিব মানুষ ৷ প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করেই সংসার চালাই ৷ এ সব কারখানা না থাকলে কালিয়াচকের মানুষ অভাবেই থাকত ৷ করোনার সময় কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ৷ এখানকার মানুষের খাবার জুটছিল না ৷ করোনাকাল কাটিয়ে ফের কারখানা খুলেছে ৷ ফের মানুষ কাজ পাচ্ছে ৷ এ বার আমাদের ঈদের বাজার করতে সুবিধে হবে ৷ ঈদ এ বার ভালোই কাটবে ৷”

একই কথা আরেক শ্রমিক বাবুল শেখের ৷ তিনি বলেন, “করোনার সময় আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল ৷ খাবার জুটছিল না ৷ ফের কারখানা খুলেছে ৷ পকেটে পয়সা আসছে ৷ এ বার রমজান মাস ভালো কাটাচ্ছি ৷ এ বার ঈদ ভালোই হবে ৷”

বয়স 70 পেরিয়েছে আবদুল হকের ৷ এই বয়সেও প্লাস্টিক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন তিনি ৷ তাঁর বক্তব্য, “করোনার সময় এলাকার সমস্ত প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ৷ খুব সংকটে পড়ে গিয়েছিলাম ৷ ফের ফ্যাক্টরি খুলেছে ৷ কোনওরকমে জীবনযাপন হচ্ছে ৷ অসুবিধে এখনও সম্পূর্ণ মেটেনি ৷ রমজান মাসে কাজের অভাব হয়নি এ বার ৷ আশা করছি, চার বছর পর এ বার ঈদ ভালোই কাটবে ৷”

এমনই এক ফ্যাক্টরির মালিক হাফিজুল আলম বলছেন, “করোনার ধাক্কা সামলে এখন ফের ব্যবসার হাল ফিরেছে ৷ এতে শুধু আমাদের মতো ফ্যাক্টরির মালিকরাই নন, এলাকার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান এলাকাতেই হচ্ছে ৷ তাই এ বারের ইদ সত্যিই আমাদের সবার কাছেই খুশির ঈদ হতে চলেছে ৷"

আরও পড়ুন: ঈদ-দুর্গাপুজোয় বিনামূল্যে দেওয়া হবে লুঙ্গি, শাড়ি! উদ্যোগ কলকাতা পৌরনিগমের

বর্জ্য প্লাস্টিকের দুর্গন্ধে ঈদের খুশবু খোঁজেন কালিয়াচকের বহু মানুষ

মালদা, 17 এপ্রিল: কলকাতা থেকে 12 নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে শিলিগুড়ি যাচ্ছেন ৷ কালিয়াচক পেরোতেই চোখে পড়বে, রাস্তার দু’ধারে ইয়া বড় বড় প্লাস্টিকের বস্তা ডাঁই করে রাখা ৷ বস্তাগুলির আয়তন বিশাল ৷ তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝেমধ্যে নাকে দুর্গন্ধও ঢোকে ৷ আসলে সেই বস্তায় রয়েছে আমার-আপনার বাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বর্জ্য ৷ এ বার সেই বর্জ্যের দুর্গন্ধেই ঈদের খুশবু খুঁজছেন কালিয়াচকের হাজার পঁয়ত্রিশ মানুষ ৷

এই মুহূর্তে শুধু এই রাজ্য কেন, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের বর্জ্য প্লাস্টিকের হাবে পরিণত হয়েছে মালদার কালিয়াচক ৷ রাস্তায় ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে এখানে বছরে অন্তত আড়াইশো কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে ৷ মূলত সুজাপুর এলাকায় দু’দশক ধরে এই ব্যবসা ধীরে ধীরে বেড়েছে ৷ এখনও বাড়ছে ৷ এই ব্যবসার উপর নির্ভর করে রয়েছেন অন্তত 35 হাজার মানুষ ৷ রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা প্লাস্টিক ভাত জোগাচ্ছে তাঁদের ৷ দিচ্ছে ভবিষ্যতের ভরসাও ৷

কী করে হচ্ছে এই ব্যবসা ? মালদা-সহ বিভিন্ন জেলা, রাজ্য, এমনকী উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য প্লাস্টিক সুজাপুরে নিয়ে আসা হচ্ছে ৷ প্লাস্টিক সংগ্রহের কাজ মূলত করেন কাগজ কুড়ুনি এবং বাড়ির পুরনো জিনিসের ক্রেতারা ৷ তাঁরা মানুষের বাড়ি অথবা রাস্তা থেকে সংগ্রহ করা প্লাস্টিক নিজেদের এলাকার ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করে দেন ৷ ঠিকাদাররা তা পাঠিয়ে দেন মালদায় ৷ সুজাপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা ৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা বর্জ্য প্লাস্টিক সেখানে প্রথমে বাছাই করা হয় ৷ তারপর ধুয়ে এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে কিছু প্লাস্টিক রাজ্যের বিভিন্ন কারখানায় পাঠানো হয় ৷ বাকি প্লাস্টিকের টুকরো শোধন করে, শুকিয়ে, গলিয়ে এলাকার কারখানাগুলিতেই বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হয় ৷

আম, লিচু, রেশমের পর প্লাস্টিক শিল্প এই মুহূর্তে মালদা জেলার অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে ৷ অথচ করোনা হানা দেওয়ার পর প্রায় তিন বছর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এই শিল্প ৷ কারখানাগুলিতে তালা পড়ে গিয়েছিল ৷ বিপুল সংখ্যক শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়েও পেট চালাতে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন ৷ করোনার হামলা প্রতিহত করে দেশের অর্থনীতির চাকা গড়াতে শুরু করলেও তার অভিঘাতে আরও একটা বছর এই শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছিল ৷ অবশেষে চলতি বছর থেকে ফের এই শিল্পের চাকা স্বাভাবিকভাবে গড়াতে শুরু করেছে ৷ হাসি ফুটেছে শ্রমিকদের মুখে ৷ খুশি মালিকপক্ষও ৷ সবারই বক্তব্য, এ বার তাঁরা সত্যিকারের খুশির ঈদ পালন করবেন ৷

মসিমপুরের এক্রামূল হক এমনই এক প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিক ৷ তিনি জানাচ্ছেন, “আমরা গরিব মানুষ ৷ প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করেই সংসার চালাই ৷ এ সব কারখানা না থাকলে কালিয়াচকের মানুষ অভাবেই থাকত ৷ করোনার সময় কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ৷ এখানকার মানুষের খাবার জুটছিল না ৷ করোনাকাল কাটিয়ে ফের কারখানা খুলেছে ৷ ফের মানুষ কাজ পাচ্ছে ৷ এ বার আমাদের ঈদের বাজার করতে সুবিধে হবে ৷ ঈদ এ বার ভালোই কাটবে ৷”

একই কথা আরেক শ্রমিক বাবুল শেখের ৷ তিনি বলেন, “করোনার সময় আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল ৷ খাবার জুটছিল না ৷ ফের কারখানা খুলেছে ৷ পকেটে পয়সা আসছে ৷ এ বার রমজান মাস ভালো কাটাচ্ছি ৷ এ বার ঈদ ভালোই হবে ৷”

বয়স 70 পেরিয়েছে আবদুল হকের ৷ এই বয়সেও প্লাস্টিক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন তিনি ৷ তাঁর বক্তব্য, “করোনার সময় এলাকার সমস্ত প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ৷ খুব সংকটে পড়ে গিয়েছিলাম ৷ ফের ফ্যাক্টরি খুলেছে ৷ কোনওরকমে জীবনযাপন হচ্ছে ৷ অসুবিধে এখনও সম্পূর্ণ মেটেনি ৷ রমজান মাসে কাজের অভাব হয়নি এ বার ৷ আশা করছি, চার বছর পর এ বার ঈদ ভালোই কাটবে ৷”

এমনই এক ফ্যাক্টরির মালিক হাফিজুল আলম বলছেন, “করোনার ধাক্কা সামলে এখন ফের ব্যবসার হাল ফিরেছে ৷ এতে শুধু আমাদের মতো ফ্যাক্টরির মালিকরাই নন, এলাকার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান এলাকাতেই হচ্ছে ৷ তাই এ বারের ইদ সত্যিই আমাদের সবার কাছেই খুশির ঈদ হতে চলেছে ৷"

আরও পড়ুন: ঈদ-দুর্গাপুজোয় বিনামূল্যে দেওয়া হবে লুঙ্গি, শাড়ি! উদ্যোগ কলকাতা পৌরনিগমের

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.