মালদা, 25 এপ্রিল: আগে তাঁকে চাকরি দিতে হবে, তবেই পরিশ্রুত পানীয় জল পাবেন গ্রামবাসীরা ৷ এই দড়ি টানাটানির জেরে দু'বছরের বেশি সময় ধরে পানীয় জল থেকে ব্রাত্য অন্তত চারশো পরিবার ৷ ঘটনাটি ঘটেছে চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের দইভাত্তা গ্রামে ৷ ওই মহিলার দাবি, তাঁর জমিতে বসানো হয়েছে পিএইচই দফতরের পাম্প ৷ এর জন্য জমির ভাড়া এবং তাঁকে চাকরি দেওয়ার কথা জানিয়েছিল সংশ্লিষ্ট দফতর ৷ কিন্তু পাম্প বসিয়ে ঘর তৈরি হয়ে গেলেও তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়নি ৷ তাই তিনিও ওই পাম্প হাউসে তালা মেরে রেখেছেন ৷ এদিকে খরা মরশুমে পানীয় জল না পেয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন গ্রামবাসীরা ৷ বিষয়টি কানে যেতেই সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলেছেন এলাকার বিধায়ক ৷ দ্রুত সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি ৷
দইভাত্তা গ্রামে চারশোটিরও বেশি পরিবারের বসবাস ৷ দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টি এবং তাপপ্রবাহের জেরে ওই গ্রামের ভূগর্ভস্থ জলস্তর এই মুহূর্তে অনেক নীচে নেমে গিয়েছে ৷ বেশিরভাগ গ্রামবাসীর বাড়িতে নলকূপ থাকলেও সেগুলি এখন কোনও কাজ করছে না ৷ অবশ্য, প্রায় প্রতিবারই গরমের সময় পানীয় জলের সংকটে ভুগতে হয় এই গ্রামের বাসিন্দাদের ৷ এই সমস্যা মেটাতে বছর তিনেক আগে গ্রামে একটি গভীর নলকূপ বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ৷ এক গ্রামবাসীর জমিতে বসানো হয় সেই পাম্প ৷ পাম্প হাউসও তৈরি করা হয় ৷ কিন্তু চাকরি না পাওয়ায় সেই পাম্প হাউসে তালা মেরে দিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দা ছবি মণ্ডল ৷ ফলে গ্রামে পাম্প বসলেও দুটবছর ধরে খরা মরশুমে পানীয় জলের সংকট মিটছে না গ্রামবাসীদের ৷
ছবি মণ্ডলের বক্তব্য, "পাম্প বসানোর সময় পিএইচই দফতর আমাকে কথা দিয়েছিল, যেহেতু পাম্পটি আমার জায়গায় বসানো হচ্ছে, তাই আমাকে চাকরি এবং জায়গার ভাড়াও দেবে ৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা আমাকে চাকরি কিংবা জায়গার ভাড়া দেয়নি ৷ তাই আমি পাম্প হাউসে তালা মেরে রেখেছি ৷ এর জন্য গ্রামবাসীদের যে চরম সমস্যা হচ্ছে, তা আমি জানি ৷" তিনি জানান, তাঁর দাবি মিটিয়ে দিলেই তিনি জল ছেড়ে দেবেন ৷ কিন্তু কেউ তাঁর কথা শুনতে রাজি নয় ৷ যদিও গ্রামবাসীদের দাবি, ওই জায়গাটি এখন আর ছবির নেই ৷ তাঁরা জায়গাটি গ্রামের আরেকজনকে বিক্রি করে দিয়েছেন ৷
এনিয়ে পূর্ণিমা দাস নামে এক গ্রামবাসী বলেন, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই নলকূপ আছে ৷ কিন্তু এক মাস ধরে জল উঠছে না ৷ জলের প্রচণ্ড সমস্যা ৷ জমিতে জল দেওয়ার পাম্প চালানো হলে তাদের দু'এক কিলোমিটার দূর থেকে জল আনতে হচ্ছে ৷ এলাকার পুকুরগুলো সব শুকিয়ে গিয়েছে ৷ স্নান-সহ গৃহস্থের কাজকর্মও ঠিকমতো করা যাচ্ছে না ৷ জলের সংকট মেটাতে গ্রামে পিএইচই’র পাম্প বসেছে ৷ কিন্তু দু'বছর হয়ে গেলেও তার জল পাচ্ছেন না তারা ৷ ছবি মণ্ডল নামে এক গ্রামবাসী গোটা গ্রামের জল বন্ধ করে রেখেছে বলে তিনি দাবি করেন ৷
বিষয়টি নিয়ে চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, "আজ সকালেই বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছি ৷ পানীয় জল নিয়ে তাঁরাও অভিযোগ জানিয়েছেন ৷ সঙ্গে সঙ্গে আমি পিএইচই দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলি ৷ খরার মধ্যে মানুষ যাতে জল থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই বিষয়টি তাঁদের দেখতে বলেছি ৷ তাঁরা কথা দিয়েছে, দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে ওই গ্রামে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করবেন ৷"
আরও পড়ুন: প্রবল গরমে তীব্র পানীয় জল সংকট মালদা মেডিক্যাল কলেজে