মালদা, 20 জুন: দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন আগে হাতছাড়া হয়েছে ৷ এবার পঞ্চায়েত সমিতির 18টির মধ্যে একটি আসনে প্রার্থী দিতে পারল না শাসকদল তৃণমূল ৷ এবারও ঘটনাস্থল পুরাতন মালদা ৷ এদিকে দলের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে দলীয় নেতৃত্বকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত এই পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ৷ গোটা ঘটনায় শাসকদলকে তীব্র কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস ৷
নির্দিষ্ট সময়ে মনোনয়ন জমা না করাতে পারায় পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দুটি আসনে এবার প্রার্থী দিতে পারেনি তৃণমূল ৷ এ নিয়ে দলের অন্দরে ঝড় উঠেছিল ৷ ওই ঝড় নিশ্চিতভাবে আরও প্রবল হতে চলেছে ৷ কারণ, এই পঞ্চায়েত সমিতির 18টির মধ্যে একটি আসনে শাসকদল দলীয় প্রার্থী দিতে পারেনি ৷ তার উপর মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য হওয়া নেতা-নেত্রীদের ক্ষোভ এই ঝড়কে কালবৈশাখী করে তোলে কি না, সেটা সময় বলবে ৷
মঙ্গলবার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী বোর্ডের সহ-সভাপতি হারেজ আলি জানান, ব্লক সভাপতির নির্দেশে তিনি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়ন জমা করেছিলেন ৷ দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তিনি যে আসনে জিতেছিলেন, সেখানে অন্য প্রার্থীকে প্রতীক দেবে ৷ তাই দলের নির্দেশে তিনি আজ নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন ৷ হয়তো দল তাঁকে প্রার্থী হিসাবে উপযুক্ত মনে করেনি ৷ তাই দলের মঙ্গলের কথা ভেবেই তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন বলে জানান ৷
আরও পড়ুন: তৃণমূলের বিরুদ্ধে মহিলা প্রার্থীদের জোরপূর্বক মনোনয়ন বাতিলের অভিযোগে বিক্ষোভ বিজেপির
হারেজ আলি বলেন, "দল যদি আমাকে প্রচারের উপযুক্ত মনে করে, অবশ্যই আমি প্রার্থীদের প্রচারে থাকব ৷ 1998 সাল থেকে দলটা করি ৷ তাই দল যেভাবে আমাকে কাজে লাগাবে, লাগাতে পারে ৷ এবার পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির 18টি আসনের মধ্যে একটি আসনে দল প্রার্থী দিতে পারবে না ৷ কারণ, মনোনয়নের কাগজপত্রে ত্রুটি ছিল ৷ সেখানে কোনও ডামি প্রার্থীও দেওয়া হয়নি ৷ বাকি 17টি আসনের দলীয় প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা খুবই ভালো ৷ দলের জেলা সভাপতি, জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী দিনরাত মানুষের কাজ করেছেন ৷ মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে ৷ এরপরেও যদি দলের প্রার্থীরা সব আসনে জিততে না পারে তাহলে দলের জেলা ও ব্লক নেতৃত্বকে জোড়হাত করে মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ৷"
পুরাতন মালদা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নব্যেন্দু সেনের বক্তব্য, নির্দিষ্ট সময়ে জাতিগত শংসাপত্র জমা দিতে না পারায় তাঁরা পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি ৷ বিশেষ কিছু কারণে সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দুটি আসনেও তাঁদের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি ৷ এছাড়া ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বাকি 130টি আসনে দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে ৷ প্রার্থী হতে না পেরে কয়েকজন মনক্ষুন্ন হয়েছেন ৷ তবে দলের সিদ্ধান্ত তাঁরা সবাই মাথা পেতে নিয়েছেন ৷ কিছু দলীয় কর্মী নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা করেছেন ৷ তাঁরা নিজেদের মনোনয়ন এখনও প্রত্যাহার করেননি ৷ তাঁদের বুঝিয়ে দলের হয়ে কাজ করার আবেদন জানানো হবে ৷
আরও পড়ুন: একই আসনে জোড়া প্রার্থী জোড়াফুলের, দেগঙ্গায় শাসকদলের কোন্দল চরমে
এ দিকে আজ দলীয় প্রতীক বিলি নিয়ে পুরাতন মালদা ব্লক অফিস সংলগ্ন তৃণমূলের অস্থায়ী পার্টি অফিসে বিক্ষোভ দেখান বেশ কিছু দলীয় কর্মী ৷ যদিও পুলিশি তৎপরতায় অশান্তি বেশি ছড়াতে পারেনি ৷ গোটা ঘটনায় তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছেন এলাকার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ হালদার ৷ তিনি বলেন, "পুরাতন মালদার ছটি গ্রাম পঞ্চায়েতের 90 শতাংশ আসনে আমরা প্রার্থী দিয়েছি ৷ বাকি 10 শতাংশ আসনে নির্দলদের সঙ্গে আমাদের আসন সমঝোতা হয়েছে ৷ আমাদের লক্ষ্য, সাগরদিঘি মডেলে তৃণমূল ও বিজেপিকে হারানো ৷ আর শাসকদলের প্রার্থী দিতে না পারার বিষয়টি লজ্জার ৷ ওদের মধ্যে যা কোন্দল, তাতে এই তিনটি আসনেই নয়, আমার মনে হয় আরও অনেক জায়গায় এমন ঝামেলা হবে ৷"