মালদা, 17 এপ্রিল : উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী মৌসম নুরের সমর্থনে হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডীতে আজ প্রচারে এসেছিলেন তৃণমূল নেতা দেব।
তিনি বলেন, "আজকের দিনে ভোটাররা অনেক বেশি বুদ্ধি রাখেন। তাঁদের আর বোকা বানানো যাবে না। আজকের নির্বাচন উন্নয়ন নিয়ে হোক, কোন দল কোন প্রার্থী আপনাদের জন্য কাজ করেছে তা নিয়ে হোক। নির্বাচন আর কাদা ছোড়াছুড়ি দিয়ে হবে না। 2014 সালে মা-মাটি-মানুষের সরকার আমাকে সুযোগ দিয়েছিল, ঘাটাল থেকে মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছি। আজ 2019। যে দল আপনাদের সঙ্গে ছিল, যে দল আপনাদের সঙ্গে আছে এবং যে দল আপনাদের সঙ্গেই থাকবে সেই দলের হাত শক্ত করতে অনুরোধ করছি। 2011 সালে আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসে। গত 7-8 বছরে মা-মাটি-মানুষের সরকারের কিছু উন্নয়নের কথা বলি। আগে গ্রাম বাংলায় কোনও মেয়ে জন্ম নিলে, লোকে ভাবত এই মেয়ের পড়াশোনার খরচ আসবে কোথা থেকে। আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করল। 7 বছর পরে 60 লাখেরও বেশি মেয়ে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এটা আমি বলছি না, সমস্ত তথ্য রয়েছে। টিভি খুললেই এখন চোখে পড়ে এক নেতা অপর নেতাকে ছোটো করতে ব্যস্ত। আমি এই রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। মানুষের কাছে শুধু উন্নয়নের কথা বললেই যথেষ্ট। কাউকে ছোটো না করলেও চলে। মানুষ আজ সব বোঝে। কেন্দ্রীয় সরকার বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও প্রকল্প নিয়ে এসেছে। ভালো প্রকল্প। কিন্তু গত পাঁচ বছরে সারা দেশ জুড়ে কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার 650 কোটি টাকা খরচ করেছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত 7 বছরে 7 হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে কন্যাশ্রী প্রকল্পে। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি মেয়েকে অধিকার দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা করেছেন। অনেক পরিবার আছে যাঁরা নিজেদের মেয়েদের বিয়ে দিতে পারেন না। দিদি তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রূপশ্রী প্রকল্প নিয়ে এসেছে। গরমে স্কুলে যাতায়াতের জন্য দিদি সবুজ সাথির মতো প্রকল্প নিয়ে এসেছে। এক কোটি সাইকেল দেওয়া হয়েছে সবুজ সাথী প্রকল্পের আওতায়। গত সাত বছরে রাজ্যে 42টি সুপার স্পেশালিটি হাসাপাতাল তৈরি হয়েছে। সারা ভারতবর্ষ জুড়ে এতগুলো হাসপাতাল হয়নি, কিন্তু আমাদের রাজ্যে হয়েছে। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে 40 লাখ মানুষ ঘর বানানোর টাকা পেয়েছেন।"
বুলবুলচণ্ডীর সভা মঞ্চ থেকে BJP-কে আক্রমণ করেন দেব। তিনি বলেন, "আজকের রাজনীতি একদমই অন্যরকম। এক দল বলছে আপনারা যদি আমাদের ভোট দেন তবে রাম মন্দির হবে। আজকের রাজনীতি হয়েছে, আপনারা হিন্দু, তবে আপনারা এই দলকে ভোট দিন। আপনারা মুসলিম, তবে আপনারা এই দলকে ভোট দিন। আজকের রাজনীতি মহাকাশ থেকে সেনা পর্যন্ত পৌঁছেছে। গরীব মানুষদের কথা ভাবছে না। সাধারণ মানুষের মাথার উপর ছাদ আছে কি না কেউ ভাবছে না। কেউ ভাবছে না, কৃষকেরা ঠিক আছে কিনা। সবাই প্রচারে ব্যস্ত, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিতেই ব্যস্ত। এই ধরণের রাজনীতি দেখিয়ে ব্রিটিশরা আমাদের উপর 200 বছরের বেশি রাজত্ব করে গেছে। আমরা সেই যুগে আবার ফিরে আসছি। ভোট দেওয়ার আগে আমায় যদি কেউ ভাবায় আমি হিন্দু না মুসলিম, তাহলে সেই রাজনীতিতে বিশ্বাস করা উচিত না। আজকের ছেলে আমি। আমার কাছে ধর্ম হচ্ছে আমি ভারতবাসী, এর থেকে বড় ধর্ম হতে পারে না। দেশ এগোলে সবাই এগোবে। এই ধর্মের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে উন্নয়নের রাজনীতিকে শক্ত করতে হবে। গত 7 বছরে দিদি অনেক কাজ করেছেন। অনেক কাজ এখনও বাকি আছে। 7 বছর আগে যখন আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, সেই সময় দিদির মাথায় দেনা ছিল 3 লাখ 50 হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর আমাদের সরকারকে 47 হাজার কোটি টাকা ঋণ শোধ করতে হয়। তারপরেও দিদি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কীভাবে মানুষের জন্য উন্নয়ন করা যায়। গত পাঁচ বছরে সেনা জওয়ানরা সবচেয়ে বেশি শহিদ হয়েছেন। গত ৫ বছরে কাশ্মীরে সবচেয়ে বেশি যুবক হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে জঙ্গি হয়েছে। সারা দেশ জুড়ে গত 5 বছরে সব বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযান চলছে। কিন্তু পৃথিবীর 15টি দূষিত শহরের মধ্যে 14টি শহর ভারতবর্ষের। এখনও দেশজুড়ে 100 কোটি মানুষের জলের সমস্যা রয়েছে। দেশের 3 কোটি বাড়িতে এখনও ইলেকট্রিক পৌঁছয়নি। অথচ পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত বাড়িতে ইলেকট্রিক পৌঁছে গেছে। আমরা নিজেদের ঢাক নিজেরা পেটাই না, এটাই আমাদের সমস্যা।"