মালদা, 2 জুলাই : স্কুলে নিজেদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্র-ছাত্রীরা । এতে না কি বদনাম হচ্ছে স্কুলের । তাই এক আজব সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ । ঠিক হয়েছে, সপ্তাহে তিনদিন ছাত্ররা ও বাকি তিনদিন ছাত্রীরা স্কুলে আসবে । ক্লাস ইলেভেন ও টুয়েলভের পড়ুয়াদের জন্য নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত । যদিও খবরটি শুনে স্কুল কর্তৃপক্ষকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক তাপস কুমার বিশ্বাস ।
মালদার হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচণ্ডী গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দির । স্কুলে ছাত্র ও ছাত্রীরা একসঙ্গে পড়াশোনা করে । সম্প্রতি না কি স্কুলের ক্লাস ইলেভেন ও টুয়েলভের একাধিক ছাত্র-ছাত্রী নিজেদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে । স্কুল চলাকালীন তারা না কি জোড়ায় জোড়ায় স্কুলের ভিতরে অথবা বাইরের মাঠে বসে থাকে । ক্লাসরুমের মধ্যেও অনেকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় থাকে । এই ঘটনায় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে । এরপরই স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, ক্লাস ইলেভেন ও টুয়েলভে একসঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়া হবে না । সোম, বুধ ও শুক্রবার ক্লাস করবে ছাত্রীরা । বাকি তিনদিন ছাত্ররা ক্লাস করার সুযোগ পাবে । এভাবেই ছেলে ও মেয়েদের স্কুলে পৃথক করার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ । এইভাবে কয়েকদিন ধরে স্কুলে ক্লাসও চলছে ।
কিন্তু, কেন এমন সিদ্ধান্ত ?
স্কুলের প্রধান শিক্ষক জগদীশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তা সম্ভব হয়নি । স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ পাণ্ডে বলেন, "ছাত্র-ছাত্রীরা শান্ত হচ্ছে কি না তা জানতেই কয়েকদিনের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এটা কোনও চিরস্থায়ী সিদ্ধান্ত নয় । যে ছাত্ররা এই শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে, তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি । ছাত্রীদের থেকে তাদের আলাদা করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । আগামী দু'একদিনের মধ্যেই আমরা ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনব । আমরা দোষীদের নাম জানতে আগেও চেষ্টা করেছিলাম । কিন্তু, ছাত্র-ছাত্রীরা একে অপরকে বাঁচানোর জন্য কারোর নাম জমা দিচ্ছিল না । এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর তারাই অভিযুক্তদের নাম জমা দিয়েছে । যে ছাত্রদের নামে অভিযোগ রয়েছে, আমরা তাদের ডেকে পাঠিয়েছি ।"
এবিষয়ে জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক তাপসকুমার বিশ্বাস বলেন, "আজই আমি এই খবর পেয়েছি । স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে এব্যাপারে জবাবদিহি চেয়েছি । তিনি জানান, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে । আমি শিক্ষকদের জানিয়ে দিয়েছি, ম্যানেজিং কমিটি শেষ কথা নয় । অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্যও স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি ।"
তিনি আরও বলেন, "ওই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রেমঘটিত কোনও সমস্যা হয়েছিল । তা নিয়ে অভিভাবকরাও নাকি স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন । তারপরই এই সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ । আমি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি, প্রয়োজনে সকালবেলা এক শিফটে পড়াশোনা চালু করতে হবে । প্রয়োজনে ওই চিহ্নিত ছাত্র-ছাত্রীদের কিছুদিনের জন্য স্কুলে আসতে বারণও করতে বলেছি । কিন্তু, এভাবে তিনদিন ছাত্রদের আর তিনদিন ছাত্রীদের ক্লাস করানো যাবে না ।"