ETV Bharat / state

মালদায় নদী-ভাঙন, মেলেনি কোনও স্থায়ী সমাধান - মালদার খবর

কালিয়াচক 2 ব্লকের পঞ্চনন্দপুর সংলগ্ন কেবি ঝাউবোনা গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরোটাই তলিয়ে গেছে গঙ্গায় । কিন্তু, কোনও স্থায়ী সমাধান আজও মেলেনি । বোল্ডার ফেলে কোনওরকমে ভাঙন আটকানোর কাজ চলে ।

Soil erosion in Ganga
মালদায় নদী ভাঙন
author img

By

Published : Dec 21, 2020, 10:08 PM IST

মালদা, 21 ডিসেম্বর : গঙ্গা-ফুলহর-মহানন্দা ঘেরা মালদা জেলা । কাগজে কলমে এই জেলার আয়তন 3733 বর্গ কিলোমিটার । মৌজার সংখ্যা 1814 । গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে 146টি । কিন্তু বাস্তবে এই হিসাব মেলে না । সত্তরের দশক থেকে গঙ্গা ভাঙন এই হিসাবের অনেকটাই ওলট-পালট করে দিয়েছে । একাধিক মৌজার সঙ্গে পুরো একটি গ্রাম পঞ্চায়েত চলে গিয়েছে গঙ্গা গর্ভে । গঙ্গাপাড়ের মানুষজন জানাচ্ছে, প্রায় 50 বছর ধরে এই জেলায় নদী ধ্বংসলীলা চালালেও টনক নড়েনি কোনও সরকারের । দুর্যোগের সময় শুধু অবৈজ্ঞানিকভাবে পাথর ফেলা হয়েছে নদীতে । নদীর টাকা নদীতেই ভেসে গিয়েছে । মানুষের দুর্দশা কমেনি । একই বক্তব্য জেলার নদী বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদদেরও ।

ঝাড়খণ্ডের রাজমহল দিয়ে গঙ্গা ঢুকেছে মালদা জেলায় । ফরাক্কার কাছে প্রধান ধারা চলে গিয়েছে বাংলাদেশ । আরেকটি ধারা গিয়েছে কলকাতার দিকে । রাজমহলের অন্যদিকে মালদার মানিকচক । ঝাড়খণ্ডের পাহাড় এলাকায় গঙ্গা পাড় কাটতে পারে না । তাই তার রোষ আছড়ে পরে এপারের নরম পলিমাটিতে । একই পরিস্থিতি হয় মালদার কালিয়াচক 2 ও 3 এবং ইংরেজবাজার ব্লকের একাংশে । গঙ্গার রোষ থেকে বাঁচতে পারেনি মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা, ধুলিয়ান কিংবা জঙ্গিপুরও । কিন্তু প্রতিবেশী জেলার তুলনায় গঙ্গার ভাঙনে অনেক বেশি ভূমিহীন হয়েছে মালদাবাসী । লাখ লাখ মানুষের জীবিকার পরিবর্তন যেমন হয়েছে, তেমনই জেলার আর্থ সামাজিক ব্যবস্থাতেও তার প্রভাব পড়েছে । কিন্তু নদী ভাঙন কি শুধুই মালদার বিপর্যয় ? নাকি দেশের যে কোনও অংশে সেই বিপর্যয় যে কোনও সময় নেমে আসতে পারে। এনিয়ে চিন্তাভাবনার সময় এসেছে।

Soil erosion in Ganga
গঙ্গাভাঙনের এখনও কোনও স্থায়ী সমাধান মেলেনি

2003-04 সালে গঙ্গার ভাঙনে তার গর্ভে চলে গিয়েছিল কালিয়াচক 2 ব্লকের পঞ্চনন্দপুর সংলগ্ন কেবি ঝাউবোনা গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরোটাই । বস্তুত এই এলাকায় গঙ্গার ভাঙনে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। বিভিন্ন সময় ছুটে আসতে হয়েছে দেশের তাবড় নদী বিশেষজ্ঞদের। প্রশ্ন উঠেছে, গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান কিংবা নমামি গঙ্গার কোনও ফল এই এলাকার মানুষ এখনও পাচ্ছে না কেন? তারই কিছুটা আভাস পাওয়া গেছে স্থানীয় বাসিন্দা হাসান শেখের গলায়। হাসান সাহেব নিজেও একসময় গঙ্গার পাড় বাঁধার ঠিকাদার ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। তিনি জানাচ্ছেন, "সত্তরের দশক থেকে গঙ্গার ভাঙন দেখছি। যখন ভাঙন শুরু হয়, সরকার কাজ করে। কিন্তু ভাঙন থামানো যায়নি। যেখানে জলের গভীরতা 200 ফুট, সেখানে এক মিটারের কাজ হচ্ছে। এভাবে গঙ্গাকে রোখা যায় না। জলের গভীরতা 200 ফুট হলে অন্তত 250 ফুট ধরে কাজ করতে হবে। তাহলেই গঙ্গাকে থামানো যাবে। জলের লেয়ার কমে গেলেই গঙ্গা পাড় ভাঙবে। কেবি ঝাউবোনা উড়ে গিয়েছে। মালদার অর্ধেক অংশ এখন বিহারে। সেদিক চর জাগছে। ফলে মালদার আয়তন এখন আর আগের মতো নেই। দুই সরকার যেভাবে কাজ করছে, তাতে কিছুই হবে না। শুধু টাকা লুট চলছে। পঞ্চনন্দপুরে ফের গঙ্গার ভাঙন শুরু হবে। 15-16 বছর এখানে সেভাবে ভাঙন হয়নি। গঙ্গা এবার কিন্তু এগিয়ে আসতে শুরু করেছে।"

গঙ্গাবঙ্গে তলিয়ে গেছে গোটা একটা গ্রাম পঞ্চায়েত

আরও পড়ুন : গঙ্গার ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে জমি, বাড়ি ; আতঙ্কে গয়েশপুরের বাসিন্দারা

জেলার নদী বিশেষজ্ঞ অরবিন্দ ঘোষ বলছেন, "উত্তরবঙ্গের মধ্যে মালদা নদী প্লাবিত অঞ্চল। এখানে বন্যা খুব বেশি হয়। ফরাক্কা ব্যারেজ এবং সত্তরের দশকে ভূতনি রিং বাঁধ তৈরি হওয়ার পর মালদা জেলায় ব্যাপক গঙ্গা ভাঙন শুরু হয়। সেই ভাঙন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। 1978 থেকে 1998 সাল পর্যন্ত এই জেলায় গঙ্গার ভাঙন সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে। 1998 সালের বন্যায় পঞ্চনন্দপুর ও ইংরেজবাজার শোভানগর এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাতে ওই এলাকার পরিবেশ, আর্থ সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের জীবিকারও পরিবর্তন হয়েছে। পঞ্চনন্দপুর এই জেলার সবচেয়ে বড় ভাঙনপ্রবণ এলাকা এদিকের জমি গঙ্গায় তলিয়ে গিয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে চর আকারে জেগে উঠছে। এই সময়ের মধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হলেও ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। শুধুমাত্র ভাঙনের সময়ে নদীতে বোল্ডার ফেলে কোনও কাজ হবে না। ভাঙন রুখতে হলে নদীতে ড্রেজিং, পাড় বাঁধাই, বোল্ডার পিচিং ঠিকমতো করতে হবে। গঙ্গা ভাঙনের জন্য মালদার মানচিত্রটাই বদলে গিয়েছে। কালিয়াচক 3 ব্লকের পারদেওনাপুর এলাকার বেশ কিছু অংশ এবারের ভাঙনেই গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে। এটা বন্ধ করতে হলে সঠিক সরকারি পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।"

ভূতত্ত্ব নিয়ে কাজ করছেন জেলার দুই শিক্ষক তুহিনকুমার সরকার ও কমল রাম। গঙ্গা ভাঙন নিয়ে তুহিনবাবুর বক্তব্য, "নদী ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো গতিপথে চলে। নদীর প্রবাহ ডানদিক-বামদিকে আবর্তিত হয়। রাজমহল পর্যন্ত গঙ্গার মধ্যগতি। এর বাম পাড়ে মালদা। রাজমহল পাহাড় প্রাচীন গ্রানাইট শিলা তৈরি। অত্যন্ত শক্ত। সেই শিলা গঙ্গা কাটতে পারে না। সেখানে ধাক্কা খেয়ে গঙ্গার স্রোত বামদিকে এসে ধাক্কা মারে। এপারে মালদা। নরম পলিগঠিত শিলা দিয়ে তৈরি। ফলে নরম শিলা কাটতে গঙ্গার সময় লাগে না। এই ভাঙন অত্যন্ত ভয়ানক। পাড়ে দাঁড়িয়ে যতটা ভাঙন দেখা যায়, নদীর তলদেশ আরও বেশি কাটে। ভাঙনরোধে আমরা নদীতে বোল্ডার ফেলছি। কিন্তু নদীর তল পর্যন্ত সেটা ফেলা হয় না। ফলে সেই বোল্ডার গঙ্গায় ভেসে যায়। এতে নদীর বোঝা আরও বাড়ে। মূলত ড্রেজিং ছাড়া ভাঙন আটকানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। তার সঙ্গে কংক্রিট দিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পাড় বাঁধাই করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এক্ষেত্রে রাজনীতি ছাড়া আর কিছু হয় না।"

কমলবাবু একটি ছোট উপস্থাপনা দিয়ে বলেন, "হিমালয় থেকে বয়ে আসা গঙ্গার বেঙ্গল গ্যাপে মালদা অবস্থিত। জেলার নাম মালদহ। অর্থাৎ জলাভূমি। আসলে গঙ্গার ধারে দেশের 70 শতাংশ জনবসতি গড়ে উঠেছে। মালদাও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এই নদী মালদার অনেক কিছু বদলে ফেলেছে। এখানে গঙ্গা ভাঙনের মূল কারণ, মালদা রাজমহল পাহাড়ের উলটোদিকে অবস্থিত। ওই পাহাড় থেকে শিলং-এর মধ্যবর্তী অংশে মালদার অবস্থান। নীচু এলাকায় পলি, বলি সঞ্চিত হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই নদী এই নরম অংশকে কাটবে। নদীর চোরা স্রোত তার তলদেশ কেটে ফেলে। তলদেশ কেটে যাওয়ায় নীচু অংশের নদীতে নেমে আসার প্রবণতা থাকে। এভাবেই গঙ্গা কাটছে। দিন দিন জেলার আয়তন কমে যাচ্ছে। এ থেকে বাঁচতে রিভার বেডের নীচ থেকে কংক্রিটের দেওয়াল গড়ে তুলতে হবে। শুধু বোল্ডার দিয়ে রিং বাঁধ তৈরি করে কোনও কাজ হবে না।"

মালদা, 21 ডিসেম্বর : গঙ্গা-ফুলহর-মহানন্দা ঘেরা মালদা জেলা । কাগজে কলমে এই জেলার আয়তন 3733 বর্গ কিলোমিটার । মৌজার সংখ্যা 1814 । গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে 146টি । কিন্তু বাস্তবে এই হিসাব মেলে না । সত্তরের দশক থেকে গঙ্গা ভাঙন এই হিসাবের অনেকটাই ওলট-পালট করে দিয়েছে । একাধিক মৌজার সঙ্গে পুরো একটি গ্রাম পঞ্চায়েত চলে গিয়েছে গঙ্গা গর্ভে । গঙ্গাপাড়ের মানুষজন জানাচ্ছে, প্রায় 50 বছর ধরে এই জেলায় নদী ধ্বংসলীলা চালালেও টনক নড়েনি কোনও সরকারের । দুর্যোগের সময় শুধু অবৈজ্ঞানিকভাবে পাথর ফেলা হয়েছে নদীতে । নদীর টাকা নদীতেই ভেসে গিয়েছে । মানুষের দুর্দশা কমেনি । একই বক্তব্য জেলার নদী বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদদেরও ।

ঝাড়খণ্ডের রাজমহল দিয়ে গঙ্গা ঢুকেছে মালদা জেলায় । ফরাক্কার কাছে প্রধান ধারা চলে গিয়েছে বাংলাদেশ । আরেকটি ধারা গিয়েছে কলকাতার দিকে । রাজমহলের অন্যদিকে মালদার মানিকচক । ঝাড়খণ্ডের পাহাড় এলাকায় গঙ্গা পাড় কাটতে পারে না । তাই তার রোষ আছড়ে পরে এপারের নরম পলিমাটিতে । একই পরিস্থিতি হয় মালদার কালিয়াচক 2 ও 3 এবং ইংরেজবাজার ব্লকের একাংশে । গঙ্গার রোষ থেকে বাঁচতে পারেনি মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা, ধুলিয়ান কিংবা জঙ্গিপুরও । কিন্তু প্রতিবেশী জেলার তুলনায় গঙ্গার ভাঙনে অনেক বেশি ভূমিহীন হয়েছে মালদাবাসী । লাখ লাখ মানুষের জীবিকার পরিবর্তন যেমন হয়েছে, তেমনই জেলার আর্থ সামাজিক ব্যবস্থাতেও তার প্রভাব পড়েছে । কিন্তু নদী ভাঙন কি শুধুই মালদার বিপর্যয় ? নাকি দেশের যে কোনও অংশে সেই বিপর্যয় যে কোনও সময় নেমে আসতে পারে। এনিয়ে চিন্তাভাবনার সময় এসেছে।

Soil erosion in Ganga
গঙ্গাভাঙনের এখনও কোনও স্থায়ী সমাধান মেলেনি

2003-04 সালে গঙ্গার ভাঙনে তার গর্ভে চলে গিয়েছিল কালিয়াচক 2 ব্লকের পঞ্চনন্দপুর সংলগ্ন কেবি ঝাউবোনা গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরোটাই । বস্তুত এই এলাকায় গঙ্গার ভাঙনে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। বিভিন্ন সময় ছুটে আসতে হয়েছে দেশের তাবড় নদী বিশেষজ্ঞদের। প্রশ্ন উঠেছে, গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান কিংবা নমামি গঙ্গার কোনও ফল এই এলাকার মানুষ এখনও পাচ্ছে না কেন? তারই কিছুটা আভাস পাওয়া গেছে স্থানীয় বাসিন্দা হাসান শেখের গলায়। হাসান সাহেব নিজেও একসময় গঙ্গার পাড় বাঁধার ঠিকাদার ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। তিনি জানাচ্ছেন, "সত্তরের দশক থেকে গঙ্গার ভাঙন দেখছি। যখন ভাঙন শুরু হয়, সরকার কাজ করে। কিন্তু ভাঙন থামানো যায়নি। যেখানে জলের গভীরতা 200 ফুট, সেখানে এক মিটারের কাজ হচ্ছে। এভাবে গঙ্গাকে রোখা যায় না। জলের গভীরতা 200 ফুট হলে অন্তত 250 ফুট ধরে কাজ করতে হবে। তাহলেই গঙ্গাকে থামানো যাবে। জলের লেয়ার কমে গেলেই গঙ্গা পাড় ভাঙবে। কেবি ঝাউবোনা উড়ে গিয়েছে। মালদার অর্ধেক অংশ এখন বিহারে। সেদিক চর জাগছে। ফলে মালদার আয়তন এখন আর আগের মতো নেই। দুই সরকার যেভাবে কাজ করছে, তাতে কিছুই হবে না। শুধু টাকা লুট চলছে। পঞ্চনন্দপুরে ফের গঙ্গার ভাঙন শুরু হবে। 15-16 বছর এখানে সেভাবে ভাঙন হয়নি। গঙ্গা এবার কিন্তু এগিয়ে আসতে শুরু করেছে।"

গঙ্গাবঙ্গে তলিয়ে গেছে গোটা একটা গ্রাম পঞ্চায়েত

আরও পড়ুন : গঙ্গার ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে জমি, বাড়ি ; আতঙ্কে গয়েশপুরের বাসিন্দারা

জেলার নদী বিশেষজ্ঞ অরবিন্দ ঘোষ বলছেন, "উত্তরবঙ্গের মধ্যে মালদা নদী প্লাবিত অঞ্চল। এখানে বন্যা খুব বেশি হয়। ফরাক্কা ব্যারেজ এবং সত্তরের দশকে ভূতনি রিং বাঁধ তৈরি হওয়ার পর মালদা জেলায় ব্যাপক গঙ্গা ভাঙন শুরু হয়। সেই ভাঙন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। 1978 থেকে 1998 সাল পর্যন্ত এই জেলায় গঙ্গার ভাঙন সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে। 1998 সালের বন্যায় পঞ্চনন্দপুর ও ইংরেজবাজার শোভানগর এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাতে ওই এলাকার পরিবেশ, আর্থ সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের জীবিকারও পরিবর্তন হয়েছে। পঞ্চনন্দপুর এই জেলার সবচেয়ে বড় ভাঙনপ্রবণ এলাকা এদিকের জমি গঙ্গায় তলিয়ে গিয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে চর আকারে জেগে উঠছে। এই সময়ের মধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হলেও ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। শুধুমাত্র ভাঙনের সময়ে নদীতে বোল্ডার ফেলে কোনও কাজ হবে না। ভাঙন রুখতে হলে নদীতে ড্রেজিং, পাড় বাঁধাই, বোল্ডার পিচিং ঠিকমতো করতে হবে। গঙ্গা ভাঙনের জন্য মালদার মানচিত্রটাই বদলে গিয়েছে। কালিয়াচক 3 ব্লকের পারদেওনাপুর এলাকার বেশ কিছু অংশ এবারের ভাঙনেই গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে। এটা বন্ধ করতে হলে সঠিক সরকারি পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।"

ভূতত্ত্ব নিয়ে কাজ করছেন জেলার দুই শিক্ষক তুহিনকুমার সরকার ও কমল রাম। গঙ্গা ভাঙন নিয়ে তুহিনবাবুর বক্তব্য, "নদী ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো গতিপথে চলে। নদীর প্রবাহ ডানদিক-বামদিকে আবর্তিত হয়। রাজমহল পর্যন্ত গঙ্গার মধ্যগতি। এর বাম পাড়ে মালদা। রাজমহল পাহাড় প্রাচীন গ্রানাইট শিলা তৈরি। অত্যন্ত শক্ত। সেই শিলা গঙ্গা কাটতে পারে না। সেখানে ধাক্কা খেয়ে গঙ্গার স্রোত বামদিকে এসে ধাক্কা মারে। এপারে মালদা। নরম পলিগঠিত শিলা দিয়ে তৈরি। ফলে নরম শিলা কাটতে গঙ্গার সময় লাগে না। এই ভাঙন অত্যন্ত ভয়ানক। পাড়ে দাঁড়িয়ে যতটা ভাঙন দেখা যায়, নদীর তলদেশ আরও বেশি কাটে। ভাঙনরোধে আমরা নদীতে বোল্ডার ফেলছি। কিন্তু নদীর তল পর্যন্ত সেটা ফেলা হয় না। ফলে সেই বোল্ডার গঙ্গায় ভেসে যায়। এতে নদীর বোঝা আরও বাড়ে। মূলত ড্রেজিং ছাড়া ভাঙন আটকানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। তার সঙ্গে কংক্রিট দিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পাড় বাঁধাই করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এক্ষেত্রে রাজনীতি ছাড়া আর কিছু হয় না।"

কমলবাবু একটি ছোট উপস্থাপনা দিয়ে বলেন, "হিমালয় থেকে বয়ে আসা গঙ্গার বেঙ্গল গ্যাপে মালদা অবস্থিত। জেলার নাম মালদহ। অর্থাৎ জলাভূমি। আসলে গঙ্গার ধারে দেশের 70 শতাংশ জনবসতি গড়ে উঠেছে। মালদাও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এই নদী মালদার অনেক কিছু বদলে ফেলেছে। এখানে গঙ্গা ভাঙনের মূল কারণ, মালদা রাজমহল পাহাড়ের উলটোদিকে অবস্থিত। ওই পাহাড় থেকে শিলং-এর মধ্যবর্তী অংশে মালদার অবস্থান। নীচু এলাকায় পলি, বলি সঞ্চিত হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই নদী এই নরম অংশকে কাটবে। নদীর চোরা স্রোত তার তলদেশ কেটে ফেলে। তলদেশ কেটে যাওয়ায় নীচু অংশের নদীতে নেমে আসার প্রবণতা থাকে। এভাবেই গঙ্গা কাটছে। দিন দিন জেলার আয়তন কমে যাচ্ছে। এ থেকে বাঁচতে রিভার বেডের নীচ থেকে কংক্রিটের দেওয়াল গড়ে তুলতে হবে। শুধু বোল্ডার দিয়ে রিং বাঁধ তৈরি করে কোনও কাজ হবে না।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.