মালদা, 9 মে : ইতিমধ্যেই হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের চারজনের লালারসের নমুনায় কোরোনা ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে । এরপরই এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন । প্রশাসনের কোনও অনুমতি ছাড়াই গ্রাম-পাড়ায় বেড়া দিয়ে ঘিরতে শুরু করেছে গ্রামবাসীরা ৷ বিশেষ করে ওই ব্লকের তুলসীহাটা, রামপুর, মহেন্দ্রপুর, রানিপুরা, মানকিবাড়ি সহ একাধিক গ্রামে এই ছবি ধরা পড়েছে ৷ এরই মধ্যে আজ দুপুরে চাউর হয়ে যায়, শুধু গতকালের চারজনই নয়, আজ ভিনরাজ্য থেকে ঘরে ফেরা আরও তিনজন কোরোনা আক্রান্ত । যদিও এবিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি ৷
গতকাল রাতে মালদা মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগে রাজস্থানের আজমেড় থেকে ফিরে আসা 225 জনের মধ্যে চার পরিযায়ী কোরোনা পজ়িটিভ ৷ রাতেই ওই চারজনকে পুরাতন মালদার কোরোনা হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে ৷ এরা মহেন্দ্রপুর, রানিপুরা ও মানকিবাড়ির চান্দিপুরের বাসিন্দা ৷ গতকাল রাতেই গোটা এলাকায় খবরটা ছড়িয়ে পড়ে ৷ আজ সকাল থেকে বিভিন্ন গ্রাম ঘেরার কাজ শুরু করে স্থানীয়রা ৷ তুলসিহাটা গ্রামের রবীন্দ্র রাম বলেন, "রাতেই আমরা শুনি, এই ব্লকের চারজন কোরোনা পজ়িটিভ ৷ এরপরই নিজেদের সুরক্ষায় আমরা নিজেদের পাড়া ঘেরাবন্দি করেছি ৷ এর জন্য প্রশাসনের কাছে কোনও অনুমতি নিইনি ৷ প্রশাসন বললে আমরা ঘেরাবন্দি তুলে দেব ৷ কিন্তু আমাদের সুরক্ষা আমাদেরই নিতে হবে ৷"
ইসলামপুর এলাকার আসানুল হক বলেন, "আমাদের গ্রামের একজন পরিযায়ী শ্রমিকের দেহে কোরোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে৷ এই গ্রামে প্রায় 50 জন বাইরে থেকে এসেছে ৷ কিন্তু প্রশাসনের তরফে তাঁদের কোয়ারানটিনে রাখা হচ্ছে না ৷ তাই আমাদের আবেদন, ভিনরাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের যেন কোয়ারানটিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয় ।"
ভবানীপুর গ্রামের গোলাম মুর্তুজা বলেন, "ভিনরাজ্য থেকে যারা গ্রামে ফিরে আসছে, তাদের আমরা এলাকার একটি স্কুলে 14 দিন কোয়ারানটিনে রাখার ব্যবস্থা করেছি ৷ আপাতত চারজন ফিরে এসেছে ৷ আজ কিংবা কাল আরও কিছু শ্রমিকের গ্রামে ফেরার কথা রয়েছে ৷ তাদেরও আমরা ওই স্কুলে রাখব ৷ তাদের খাবার সহ অন্যান্য ব্যবস্থাও আমরা করেছি ৷ কোরোনা সংক্রমণ রুখতে এছাড়া আমাদের কোনও উপায় নেই ৷ BDO-র অনুমতি নিয়েই এই ব্যবস্থা করেছি ৷"
এনিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অমলকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, "মানুষ হয়তো বুঝতে পারছে না কোরোনা একবার তৃতীয় স্টেজে চলে গেলে তাকে আর রোখা যাবে না ৷ তাই নিজেদের জন্যই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ৷ গতকাল যে চারজনের দেহে কোরোনা ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছিল, তাঁদের সবাইকে জেলার কোরোনা হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে ৷ চারজনের পরিবারের লোকজনকে হোম কোয়ারানটিনে থাকতে হবে ৷ বাড়ি সিল করে দেওয়া হচ্ছে ৷ যেসব শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে আসছে, তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে হোম কোয়ারানটিনে থাকতে হবে ৷ কিন্তু দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে, তাঁরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বলে শুনতে পাচ্ছি ৷ এতে হিতে বিপরীত হবে ৷"
আজ দুপুরে চাউর হয়ে যায়, মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আরও তিন শ্রমিকের লালারসে কোরোনা ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে ৷ এনিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি । আজ দুপুরে পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি থেকে তিনজনকে তুলে নিয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীদের সেই সন্দেহ আরও প্রবল হয়েছে ৷ তবে এনিয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকও মুখে কুলুপ এঁটেছেন ৷