মালদা , 4 এপ্রিল : কোরোনা মোকাবিলায় দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন ৷ বন্ধ সমস্ত গণ পরিবহন ব্যবস্থা ৷ জরুরি জিনিসপত্র ছাড়া বন্ধ সমস্ত দোকানপাট ৷ এই পরিস্থিতিতে দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে মানুষই ৷ তবে এখানেও যেন কিছুটা ব্রাত্যই থেকে যাচ্ছেন বৃহন্নলারা ৷ এই মুহূর্তে তাঁরাই বোধহয় সবচেয়ে সংকটে পড়েছেন ৷ কারণ , এখনও সমাজ তাঁদের ঠিকমতো মেনে নিতে চায় না ৷ দেশের শীর্ষ আদালতের রায় এখনও পর্যন্ত সব জায়গায় মানা হয় না ৷ এনিয়ে খেদ রয়েছে তাঁদের ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার জন্য তাঁরা সরকারি সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন ৷
জেলার দুই পৌরশহরে কিছু এলাকায় কয়েকজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বসবাস করেন ৷ মালদা শহরের ব্রিজপাড়া , তেলিপুকুর , পুরাতন মালদা শহরের মঙ্গলবাড়ি এলাকাতেই মূলত তাঁদের বসবাস ৷ ট্রেনে-বাসে কিংবা দোকানে ভিক্ষাবৃত্তি তাঁদের মূল পেশা ৷ কারুর বাড়িতে নবজাত এলে তার সৌভাগ্যকামনায় গান গাওয়া তাঁদের অতিরিক্ত উপার্জন ৷ কিন্তু লকডাউনের বাজারে সেসব আপাতত বন্ধ ৷ এখন খাবার জোগাড় করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ এই অবস্থায় দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে ৷
ব্রিজপাড়া এলাকার বৃহন্নলা বিজলি দাস বলেন , “চাকরি কিংবা ভোটাধিকারের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকার পুরোপুরি সেই রায় কার্যকর করেনি ৷ চাকরি দেওয়া দূরের কথা , আমাদের স্বনির্ভর করার জন্যও সরকারের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি ৷ দেশজুড়ে এখন লকডাউন চলছে ৷ যাদের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে , তাদের হয়তো তেমন কোনও অসুবিধে হচ্ছে না ৷ কিন্তু আমরা অসম্ভব সমস্যায় পড়েছি ৷ এই পরিস্থিতিতে ভিক্ষাবৃত্তি সম্ভব নয় ৷ লকডাউনের পরেও আমাদের অবস্থার কোনও উন্নতি হবে না ৷ কারণ, মানুষের হাতে অর্থ থাকবে না ৷ তাছাড়া, আমরা সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে যেতে পারি না ৷ এখনও এই সমাজ আমাদের ঠিক চোখে দেখে না ৷ আমরা চাই, এই পরিস্থিতিতে সরকার আমাদের কিছু সাহায্যের ব্যবস্থা করুক৷”
এই পরিস্থিতিতে আজ এই বৃহন্নলাদের কাছে সাহায্য নিয়ে পৌঁছেছিল এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ৷ ওই সংস্থার পক্ষে আলমগীর খান বলেন , “তৃতীয় লিঙ্গের এই সব মানুষকে দেখে সত্যিই কষ্ট হয় ৷ তাঁদের মধ্যে একজন আবার একটি শিশুকে দত্তক নিয়েছেন ৷ সেই শিশুর জন্য তিনি খাবারও জোগাড় করতে পারছেন না ৷ এই মুহূর্তে বাস-ট্রেন সব বন্ধ ৷ বন্ধ দোকান-বাজারও ৷ তাই আজ আমরা এই মানুষগুলিকে যতটা পারি সাহায্য করেছি ৷ তাঁদের প্রত্যেককে আগামী সাতদিনের মতো খাবার দিয়েছি ৷ বাচ্চাদের জন্য গুঁড়ো দুধ এবং খাবারেরও ব্যবস্থাও করা হয়েছে ৷ তবে এই মানুষগুলির জন্য সরকারের ভাবা উচিত ৷”