মালদা, 5 এপ্রিল: বকেয়া ডিএ নিয়ে রাজ্যজুড়ে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন চলছে ৷ এরই মধ্যে আট মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে শিক্ষকতা বন্ধ করে কর্মবিরতিতে সামিল হয়েছেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা । মাদ্রাসার পঠনপাঠন চালু রাখতে আপাতত উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে নিচু শ্রেণির ক্লাস করাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক ।
তবে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের কর্মবিরতি বন্ধ না হলে স্কুল চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে সাফ জানিয়েছেন তিনি । দ্রুত বকেয়া না মেটানো হলে কর্মবিরতির পাশাপাশি পরবর্তীতে আইনি পদক্ষেপ করার কথাও উঠে এসেছে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের মুখে । মালদা শহরের সরকারি মডেল মাদ্রাসার (ইংরেজি মাধ্যম)-র ঘটনা ।
2018 সালে ইংরেজবাজার পৌরসভার পশ্চিম প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত হয় মালদা সরকারি মডেল মাদ্রাসা (ইংরেজি মাধ্যম)। 2019 সালে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব নেন আফরোজ্জামান হক । জানা গিয়েছে, সেই সময় মাদ্রাসায় পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল 120 জন । প্রি-প্রাইমারি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত এই মাদ্রাসার পড়ুয়ার সংখ্যা বর্তমানে সাড়ে আটশোর বেশি । পড়ুয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সরকারিভাবে প্রধান শিক্ষক-সহ মোট চারজন শিক্ষক ছিলেন এই মাদ্রাসায় । চারজন শিক্ষকের পক্ষে মাদ্রাসা চালানো কষ্টকর হওয়ায় মাদ্রাসা বোর্ড ও জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ৷
অবশেষে 2021 সালে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক 12 জন শিক্ষক, 2 জন ক্লার্ক ও 2 জন সাফাইকর্মী নিয়োগ করা হয় । অভিযোগ, গত আট মাস ধরে এই শিক্ষক ও কর্মীদের বেতন বকেয়া হয়ে পড়ে রয়েছে । এ নিয়ে মাদ্রাসার তরফে বারবার জেলাশাসক ও ডিএমই- দফতরে আবেদন জানানো হয় । কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই শিক্ষক ও কর্মীদের বেতন মেলেনি । অবশেষে গতকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্মীরা ।
মাদ্রাসার শিক্ষক আয়ুব হোসেন বলেন, 2021 থেকে এই মাদ্রাসায় কাজ করছেন । মাত্র 10 হাজার টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয় । এই পারিশ্রমিকে এমনিতেই সংসার চালানো কষ্টকর । কিন্তু তারপরেও গত আট মাস ধরে সেই পারিশ্রমিকও বকেয়া রয়েছে । রাজ্যের 12টি মডেল মাদ্রাসার মধ্যে নদীয়া মডেল মাদ্রাসা ছাড়া বাকি মাদ্রাসাগুলিতে বেশিরভাগ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দ্বারা নিযুক্ত । মালদা মডেল মাদ্রাসার জন্য জেলাশাসক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে শিক্ষকতার জন্য দায়িত্ব দেন ।
তাঁর কথায়, "সেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আমাদের শিক্ষকতার জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করে । গত আট মাস ধরে পারিশ্রমিকের দাবিতে আমরা জেলাশাসক থেকে শুরু করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি । কিন্তু এখনও আমাদের বকেয়া টাকা দেওয়া হয়নি । বাধ্য হয়ে আমরা কর্মবিরতি শুরু করেছি । বকেয়া টাকা না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে ৷ দ্রুত আমাদের বকেয়া না মিটিয়ে দেওয়া হলে আমরা আইনি পথে লড়াই করব ।”
মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আফরোজ্জামান হক বলেন, “2018 সালের জানুয়ারি মাস থেকে এই মাদ্রাসা চালু হয় । 2019 সালে আমি এখানে যোগদান করি । ধীরে ধীরে মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়ে । কিন্তু মাদ্রাসায় পর্যাপ্ত শিক্ষক ছিল না । বিভিন্ন দফতরে আবেদন করার পর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে এখানে শিক্ষক নিয়োগ করা হয় । বর্তমানে সরকারিভাবে আমরা চারজন শিক্ষক রয়েছি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে যুক্ত 12জন শিক্ষক রয়েছেন । স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে চারজন শিক্ষাকর্মীও রয়েছেন ৷ গত আট মাস ধরে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে নিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না । সেই কারণে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে । বাধ্য হয়ে আমি উঁচু শ্রেণির পড়ুয়াদের দিয়ে নিচু শ্রেণির ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করে মাদ্রাসার পঠনপাঠন চালু রেখেছি । তবে এ ভাবে মাদ্রাসা চালানো সম্ভব নয় । সরকারের উচিত বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া ।”
আরও পড়ুন: পুরুলিয়ায় আদিবাসী কুড়মি সমাজের বিক্ষোভ, বাতিল 47 জোড়া ট্রেন