মালদা, 30 জানুয়ারি: ভক্তের কাছে ভগবানের মতো হয় প্রিয় অভিনেতা ৷ তার দর্শন পাওয়ার জন্য কী না করেন একজন ভক্ত ৷ কখনও তার মতো চুলের ধরণ, তো কখনও তার ছবিতে ফুল-মালা দিয়ে পুজো করা ৷ কোনকিছুই করতে বাদ রাখেন না ভক্তকূল ৷ এমনই এক ভক্তের প্রিয় অভিনেতার প্রতি ভালোবাসার ছবি ধরা পড়ল মালদায় ৷ স্বপের নায়কের টানে এবং কেবলমাত্র সিনেমার পর্দায় তাঁর দেখা পেতে যুবক পাড়ি দিলেন বিহার থেকে মালদায় ৷ তবে আসার রাস্তাটা সহজ ছিল না তাঁর ৷ কারণ তিনি যে আর পাঁচটা মানুষের মতো নন ৷ নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতেও পারেন না তিনি ৷ বিশেষভাবে সক্ষম যুবকের নাম মহম্মদ রুস্তম ৷ বাড়ি বিহারের ভাগলপুর জেলার লক্ষ্মীসরাইয়ে ৷ ভাইয়ের পিঠে চেপে রুস্তম সিনেমা পাঠান (Pathaan) দেখতে বিহার থেকে এসে পৌঁছন মালদায় ৷
শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) অন্ধভক্ত রুস্তম ৷ মুখোমুখি নয়, তবে সিনেমার পর্দায় বলিউডের বাদশার এক ঝলকই যথেষ্ট ৷ আর তা পেতেই ভাইয়ের কাঁধে চেপে একেবারে ভাগলপুর থেকে ট্রেনে রাজমহল ৷ সেখান থেকে লঞ্চে গঙ্গা পার করে মানিকচক ৷ এরপর মানিকচক থেকে সামসী পাড়ি দেন তিনি ৷ প্রায় ছ'ঘণ্টার পরিশ্রমের পর শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছেন রুস্তম ৷ প্রায় দেড়শো কিলোমিটার উজিয়ে সামসীর হলে শাহরুখের সিনেমা পাঠান দেখে তবে একইভাবে ঘরে ফিরে গিয়েছেন ওই যুবক (SRK Fan) ৷
জানা গিয়েছে, রুস্তম যেখানে থাকেন, তার আশেপাশের কোনও হলে পাঠান সিনেমা মুক্তি পায়নি ৷ অনেক দূরের একটি হলে সেই ছবি দেখানো হচ্ছে বটে । কিন্তু সেখানে যে পরিমাণ ভিড় হচ্ছে, তাতে টিকিট পাওয়া মুশকিল ৷ কয়েকশো টাকা ব্ল্যাকে মুভির টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৷ কিন্তু তা কেটে সিনেমা দেখা বিশেষভাবে সক্ষম রুস্তমের পক্ষে অসম্ভব ৷ তবে যাই হোক, পাঠান তো দেখতে হবেই ৷ তাই অগত্যা ভাইয়ের কাঁধে চেপে ভাগলপুর থেকে সোজা রুস্তম হাজির মালদায় ৷ দিনভর ঝক্কি পোহানোর পর রবিবার দুপুরে ভাইয়ের পিঠে চেপে সামসীর হলে এসে পৌঁছেছিলেন মহম্মদ রুস্তম ৷ ভাই মহম্মদ সাজ্জাদ পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক ৷ দুই ভাই-ই শাহরুখের অন্ধ ভক্ত ৷ চার বছর ধরে বলিউডের বাদশার কোনও মুভি দেখতে না পেয়ে মুষড়ে পড়েছিলেন দু’জনেই ৷ শেষ পর্যন্ত পাঠান রিলিজ হওয়ার খবর তাঁদের মনে ভালোবাসার ঝড় তুলে দেয় ৷
ক’দিন আগেই ভিনরাজ্য থেকে বাড়ি ফিরেছেন সাজ্জাদ ৷ কিন্তু আশেপাশের কোনও হলে সেই ছবি মুক্তি না পাওয়ায় চিন্তায় পড়েন তাঁরা ৷ খোঁজ পান, বিহার সংলগ্ন মালদার কয়েকটি হলে এই সিনেমা চলছে ৷ যেমন শোনা, তেমন কাজ ৷ রবিবার সামসীর হলে দুই ভাই পৌঁছে যান ৷ কিন্তু তখন হলের সামনে লম্বা লাইন ৷ শোয়ের টিকিট পাবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন দু'জনই ৷ বিশেষভাবে সক্ষম রুস্তমকে দেখে হল কর্তৃপক্ষ দুই ভাইকে দুটি টিকিট দিয়ে দেন ৷ মন ভালো করে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন রুস্তম ও সাজ্জাদ ৷ রুস্তম বলেন, "আমি হাঁটতে পারি না ৷ সেকারণেই ভাইয়ের পিঠে চেপে পাঠান দেখতে এসেছি ৷ আমরা বিহারের ভাগলপুর জেলার লক্ষ্মীসরাইয়ের বাসিন্দা ৷ দু’জনই শাহরুখের ফ্যান ৷ আমাদের ওদিকে কোনও হলেই পাঠান চলছে না ৷ তাই গুরুর ফিল্ম দেখতে সামসীতে এসেছি ৷"
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে বক্স অফিসে রেকর্ড গড়ে পাঠান গোটা দেশেই বাজার কাপাচ্ছে ৷ চার বছর পর এসআরকে’কে পর্দায় দেখে ব্যাকুল তাঁর ভক্তকুল ৷ প্রতিটি হলের বাইরে লম্বা লাইন ৷ দীর্ঘদিন পর কোনও মুভির টিকিট ব্ল্যাক হতেও দেখা যাচ্ছে ৷ মালদা জেলার তিনটি হলেও একই ছবি ৷ শহরের দুটি এবং সামসীর হলে মুক্তি পেয়েছে পাঠান ৷ শহরের একটি হলে আগামী 15 দিনের কোনও শোয়ের টিকিট নেই ৷ অনলাইনে আগেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে ৷ দ্বিতীয় হলটিতে সকাল থেকেই শাহরুখ ফ্যানদের লম্বা লাইন ৷ একই ছবি সামসীর হলেও ৷
আরও পড়ুন: ভারতে সবচেয়ে দ্রুত 250 কোটির ক্লাবে ঢুকতে চলেছে 'পাঠান', দাবি বিশ্লেষকদের