ETV Bharat / state

লকডাউনে বন্ধ এক মরশুমের রেশম চাষ, বিপন্ন জেলার অর্থনীতি

author img

By

Published : Apr 7, 2020, 3:34 PM IST

Updated : Apr 9, 2020, 3:57 PM IST

টানা লকডাউনে বিপর্যয় নেমেছে মালদা জেলার দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল রেশম চাষে । চলতি মরশুমের জন্য রেশম কীটের ডিম সরবরাহ করেনি কেন্দ্র বা রাজ্যের রেশম বিভাগ ৷ তুঁতপাতার চাষ করে প্রবল ক্ষতির মুখে চাষিরা ৷

Lock down amid coronavirus
লকডাউনে বন্ধ রেশম চাষ

মালদা, 7 এপ্রিল : টানা লকডাউনে বিপর্যস্ত মালদা জেলার আম চাষ ৷ বিপর্যয় নেমেছে জেলার দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল রেশম চাষেও ৷ কোরোনার জেরে চলতি মরশুমের জন্য রেশম কীটের ডিম সরবরাহ করেনি কেন্দ্র বা রাজ্যের রেশম বিভাগ ৷ ফলে তুঁতপাতার চাষ করে প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছে চাষিরা ৷ যা পরিস্থিতি, তাতে এবার মুখ থুবড়ে পড়তে হবে বলে নিশ্চিত তারা৷ এদিকে জেলা রেশম দপ্তরের বক্তব্য, কোরোনা মোকাবিলায় বর্তমানে লকডাউন চলছে৷ তাই রেশমকীটের ডিম উৎপাদন করা যায়নি৷ সেই কারণে এই সময় রেশমকীটের ডিম সরবরাহ বন্ধ রয়েছে ৷

মালদা জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আম৷ জেলার প্রায় 31 হাজার হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়৷ দ্বিতীয় অর্থকরী ফসলের তালিকায় রয়েছে রেশম৷ এই জেলার বেশ কিছু ব্লকে প্রায় 21 হাজার হেক্টর জমিতে তুঁতচাষ হয়ে থাকে৷ গোটা জেলার প্রায় 70 হাজার পরিবার রেশমচাষ এবং উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ৷ মালদা জেলায় রেশমচাষের চারটি মরশুম ৷ ক্যালেন্ডারের হিসাবে মরশুমগুলির নামকরণ করা হয়েছে বৈশাখি, ভাদুরি, অঘ্রাণী ও ফাল্গুনি ৷ এর মধ্যে ফাল্গুনি ও বৈশাখি মরশুমে শুকনো আবহাওয়ার জন্য রেশম উৎপাদন সবচেয়ে ভালো হয় ৷ প্রতি বছর গড়ে 600 মেট্রিক টন রেশম উৎপাদন হয় গোটা জেলায় ৷ এখন বৈশাখি মরশুমের চাষের জন্য তৈরি হচ্ছিল জেলার রেশমচাষিরা ৷ কিন্তু তার মধ্যেই কোরোনার হামলা তাদের কার্যত পথে বসিয়ে দিয়েছে ৷ এই মুহূর্তে যাদের ঘরে ফাল্গুনি মরশুমের উৎপাদিত কোকুন রয়েছে, তারা সুতো তৈরিতে ব্যস্ত ৷ কারণ, বেশি দেরি হলে কোকুন নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৷ অন্যদিকে, এখনও আশায় ভর করে তুঁতপাতার জমি পরিচর্যা করে চলেছে চাষিরা ৷

লকডাউনে বন্ধ রেশম চাষ, ক্ষতির মুখে চাষিরা

কালিয়াচকের খিখিরবোনা গ্রামে তুঁতপাতার জমিতে কাজ করছিলেন রেশমচাষি নুরুল শেখ ৷ তিনি বলেন, “বৈশাখি মরশুম শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় রেশম পর্ষদ কিংবা রাজ্য রেশম দপ্তর এখনও আমাদের রেশমকীটের ডিম সরবরাহ করছে না ৷ আর দু’একদিনের মধ্যে ডিম না পাওয়া গেলে চাষ পুরোপুরি বন্ধ ৷ এই অবস্থায় কীভাবে আমরা চলব বুঝতে পারছি না ৷ সরকার বলে দিয়েছে, কোরোনার জন্য এবার ডিম দেওয়া হবে না ৷” আরেক চাষি আবদুল রাজ্জাক বলেন, “এই মুহূর্তে লকডাউন চলছে ৷ সরকারের তরফে বলে দেওয়া হয়েছে, এই মরশুমে চাষিদের রেশমের ডিম দেওয়া হবে না ৷ ডিম না পেলে আমাদের কিছু করার নেই ৷ এই মরশুমে রেশমচাষ হবে না ৷ চাষ পুরোপুরি মার খাবে ৷ এই গ্রামেরই 50-60টি পরিবার এই চাষ করে ৷ কালিয়াচক এবং জেলার প্রচুর মানুষ এই চাষের সঙ্গে যুক্ত ৷ আমাদের সংসার এই চাষের উপরেই চলে ৷” জেলার অন্যতম নামি রেশমচাষি হেলু শেখ বলেন, “লকডাউনে রেশমের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে ৷ গত মরশুমের রেশমগুটি সব বাড়িতে থেকে গিয়েছে ৷ সেই কোকুন থেকে সুতো বের করছি ৷ তা না হলে কোকুন নষ্ট হয়ে যাবে ৷ তবে মূল সমস্যা, এখন রেশমের বাজার বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ শ্রমিক নেই ৷ ডিম সরবরাহ হয়নি ৷ তাই পলুর চাষও এবার হচ্ছে না ৷ আমরা পথে বসে গেলাম ৷”

এ'প্রসঙ্গে জেলা রেশম দপ্তরের উপ-অধিকর্তা সন্তোষ কুমার বলেন, “কোরোনার জেরে ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে আমরা এবার রেশমকীটের ডিমই উৎপাদন করতে পারিনি ৷ কেন্দ্রীয় রেশম পর্ষদ ও রাজ্য রেশম দপ্তরের পক্ষ থেকে ডিম তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু লকডাউনের জন্য ডিম উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা কাজেই আসতে পারেনি ৷ তাই ডিম তৈরি করা যায়নি ৷ ডিম উৎপাদন করা গেলেও তা বিতরণ করা যেত না ৷ এদিকে রেশমকীটের ডিম চাষিদের ঘরে পৌঁছে দিতে হয় ৷ এই পরিস্থিতিতে তা সম্ভব নয় ৷ শুকনো আবহাওয়া থাকায় বৈশাখি মরশুমে খুব ভালো রেশম চাষ হয় ৷ চাষ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই মরশুমের জন্য প্রায় পাঁচ লক্ষ ডিম বিলি করা হয় ৷ ওই ডিম থেকে রাজ্য রেশম দপ্তরের বিলি করা ডিমে এই মরশুমে প্রায় 50 মেট্রিক টন রেশম উৎপাদিত হয় ৷ এই চাষের জন্য চাষিরা প্রস্তুতি নিয়েছিল ৷ তাদের চাষ এবার পুরোপুরি মার খেল ।"

মালদা, 7 এপ্রিল : টানা লকডাউনে বিপর্যস্ত মালদা জেলার আম চাষ ৷ বিপর্যয় নেমেছে জেলার দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল রেশম চাষেও ৷ কোরোনার জেরে চলতি মরশুমের জন্য রেশম কীটের ডিম সরবরাহ করেনি কেন্দ্র বা রাজ্যের রেশম বিভাগ ৷ ফলে তুঁতপাতার চাষ করে প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছে চাষিরা ৷ যা পরিস্থিতি, তাতে এবার মুখ থুবড়ে পড়তে হবে বলে নিশ্চিত তারা৷ এদিকে জেলা রেশম দপ্তরের বক্তব্য, কোরোনা মোকাবিলায় বর্তমানে লকডাউন চলছে৷ তাই রেশমকীটের ডিম উৎপাদন করা যায়নি৷ সেই কারণে এই সময় রেশমকীটের ডিম সরবরাহ বন্ধ রয়েছে ৷

মালদা জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আম৷ জেলার প্রায় 31 হাজার হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়৷ দ্বিতীয় অর্থকরী ফসলের তালিকায় রয়েছে রেশম৷ এই জেলার বেশ কিছু ব্লকে প্রায় 21 হাজার হেক্টর জমিতে তুঁতচাষ হয়ে থাকে৷ গোটা জেলার প্রায় 70 হাজার পরিবার রেশমচাষ এবং উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ৷ মালদা জেলায় রেশমচাষের চারটি মরশুম ৷ ক্যালেন্ডারের হিসাবে মরশুমগুলির নামকরণ করা হয়েছে বৈশাখি, ভাদুরি, অঘ্রাণী ও ফাল্গুনি ৷ এর মধ্যে ফাল্গুনি ও বৈশাখি মরশুমে শুকনো আবহাওয়ার জন্য রেশম উৎপাদন সবচেয়ে ভালো হয় ৷ প্রতি বছর গড়ে 600 মেট্রিক টন রেশম উৎপাদন হয় গোটা জেলায় ৷ এখন বৈশাখি মরশুমের চাষের জন্য তৈরি হচ্ছিল জেলার রেশমচাষিরা ৷ কিন্তু তার মধ্যেই কোরোনার হামলা তাদের কার্যত পথে বসিয়ে দিয়েছে ৷ এই মুহূর্তে যাদের ঘরে ফাল্গুনি মরশুমের উৎপাদিত কোকুন রয়েছে, তারা সুতো তৈরিতে ব্যস্ত ৷ কারণ, বেশি দেরি হলে কোকুন নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৷ অন্যদিকে, এখনও আশায় ভর করে তুঁতপাতার জমি পরিচর্যা করে চলেছে চাষিরা ৷

লকডাউনে বন্ধ রেশম চাষ, ক্ষতির মুখে চাষিরা

কালিয়াচকের খিখিরবোনা গ্রামে তুঁতপাতার জমিতে কাজ করছিলেন রেশমচাষি নুরুল শেখ ৷ তিনি বলেন, “বৈশাখি মরশুম শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় রেশম পর্ষদ কিংবা রাজ্য রেশম দপ্তর এখনও আমাদের রেশমকীটের ডিম সরবরাহ করছে না ৷ আর দু’একদিনের মধ্যে ডিম না পাওয়া গেলে চাষ পুরোপুরি বন্ধ ৷ এই অবস্থায় কীভাবে আমরা চলব বুঝতে পারছি না ৷ সরকার বলে দিয়েছে, কোরোনার জন্য এবার ডিম দেওয়া হবে না ৷” আরেক চাষি আবদুল রাজ্জাক বলেন, “এই মুহূর্তে লকডাউন চলছে ৷ সরকারের তরফে বলে দেওয়া হয়েছে, এই মরশুমে চাষিদের রেশমের ডিম দেওয়া হবে না ৷ ডিম না পেলে আমাদের কিছু করার নেই ৷ এই মরশুমে রেশমচাষ হবে না ৷ চাষ পুরোপুরি মার খাবে ৷ এই গ্রামেরই 50-60টি পরিবার এই চাষ করে ৷ কালিয়াচক এবং জেলার প্রচুর মানুষ এই চাষের সঙ্গে যুক্ত ৷ আমাদের সংসার এই চাষের উপরেই চলে ৷” জেলার অন্যতম নামি রেশমচাষি হেলু শেখ বলেন, “লকডাউনে রেশমের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে ৷ গত মরশুমের রেশমগুটি সব বাড়িতে থেকে গিয়েছে ৷ সেই কোকুন থেকে সুতো বের করছি ৷ তা না হলে কোকুন নষ্ট হয়ে যাবে ৷ তবে মূল সমস্যা, এখন রেশমের বাজার বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ শ্রমিক নেই ৷ ডিম সরবরাহ হয়নি ৷ তাই পলুর চাষও এবার হচ্ছে না ৷ আমরা পথে বসে গেলাম ৷”

এ'প্রসঙ্গে জেলা রেশম দপ্তরের উপ-অধিকর্তা সন্তোষ কুমার বলেন, “কোরোনার জেরে ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে আমরা এবার রেশমকীটের ডিমই উৎপাদন করতে পারিনি ৷ কেন্দ্রীয় রেশম পর্ষদ ও রাজ্য রেশম দপ্তরের পক্ষ থেকে ডিম তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু লকডাউনের জন্য ডিম উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা কাজেই আসতে পারেনি ৷ তাই ডিম তৈরি করা যায়নি ৷ ডিম উৎপাদন করা গেলেও তা বিতরণ করা যেত না ৷ এদিকে রেশমকীটের ডিম চাষিদের ঘরে পৌঁছে দিতে হয় ৷ এই পরিস্থিতিতে তা সম্ভব নয় ৷ শুকনো আবহাওয়া থাকায় বৈশাখি মরশুমে খুব ভালো রেশম চাষ হয় ৷ চাষ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই মরশুমের জন্য প্রায় পাঁচ লক্ষ ডিম বিলি করা হয় ৷ ওই ডিম থেকে রাজ্য রেশম দপ্তরের বিলি করা ডিমে এই মরশুমে প্রায় 50 মেট্রিক টন রেশম উৎপাদিত হয় ৷ এই চাষের জন্য চাষিরা প্রস্তুতি নিয়েছিল ৷ তাদের চাষ এবার পুরোপুরি মার খেল ।"

Last Updated : Apr 9, 2020, 3:57 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.