মালদা, 12 জুন: শুরু হয়ে গিয়েছে আমের মরশুম ৷ মালদায় এবার ফলের রাজার ব্যাপক ফলন ৷ আর তাতেই বেড়েছে দুশ্চিন্তা ৷ ঘুম উড়েছে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের ৷ যে আম বিক্রি করে অন্য সময়ে একটা মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ ঘরে তোলা যেত এই মরশুমে সেই আম বিকোচ্ছে এক টাকা থেকে পাঁচ টাকা কিলো দরে ৷ তাতে লাভ তো দূরঅস্ত, ঋণের টাকা মিটবে কীভাবে তা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ চাষী থেকে ব্যবসায়ীদের ৷
লক্ষ্মণভোগ, রাখালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া আমের কথা বললেন জিভে জল আসতে বাধ্য ৷ সেই আম বাজারে বেশ দাম দিয়েই কিনতে হত ৷ তবে এবারে ছবিটা উলটো ৷ লক্ষ্মণভোগের মতো আম বাজারে বিকোচ্ছে পাঁচ টাকা কিলো দরে ৷ সেই আম বাগানে বিক্রি হচ্ছে কিলো প্রতি এক থেকে দু’টাকাতেও ৷ অন্যান্য জাতের আমেরও বাজারদরের এক দশা ৷ চাষিরা বলছেন, এবার প্রায় সব জায়গায় একইসঙ্গে আম পেকেছে ৷ ফলে বাজারে তেমন চাহিদা নেই ৷ তার উপর শুধুমাত্র বিহার আর অসম ছাড়া এবার অন্য কোথাও আম রফতানি হচ্ছে না ৷ এই ছবিটা বহাল থাকলে এবার গরু-ছাগলেরও আমে অরুচি ধরবে !
মালদা শহরের বিশ্বনাথ মোড়ের বাজারে আম বিক্রেতা দুল্লি চৌধুরী ৷ তিনি বলেন, "লক্ষ্মণভোগ এখন পাঁচ টাকা কিলো দরে বিক্রি করছি ৷ হিমসাগর আর ল্যাংড়ার দাম প্রতি কিলো 10-15 টাকা ৷ এবার গাছে প্রচুর আম হয়েছে ৷ তাই দর নেই৷ আমরা বাগান থেকে এক থেকে তিন টাকা কিলো দরে পাকা আম কিনছি৷ যেমন পাচ্ছি, বাগান থেকে তেমনই আম নিয়ে আসছি৷"
আরেক খুচরো আম বিক্রেতা, জহুরাতলা হলদি পুকুরের শেফালি মণ্ডল বলেন, "এবার লক্ষ্মণভোগ, রাখালভোগ-সহ বিভিন্ন জাতের পাকা আম পাঁচ থেকে আট টাকা দরে খুচরো বিক্রি হচ্ছে ৷ প্রতি কিলো ক্ষীরসাপাতি (হিমসাগর) বিক্রি হচ্ছে 10 থেকে 20 টাকায় ৷ ল্যাংড়ার দামও একই ৷ এবার আমের প্রচুর ফলন ৷ বাইরে আম যাচ্ছে না ৷ তাই আমের দাম অনেকটা কমে গিয়েছে ৷"
আমের চাষ করেন স্বপন পোদ্দার ৷ একইসঙ্গে আমের পাইকারি ব্যবসা করেন তিনি ৷ তাঁর বক্তব্য, "এবার ধারণার বাইরে আমের ফলন হয়েছে ৷ দামও পড়ে গিয়েছে ধারণার বাইরে ৷ আমরা ভাবতেই পারিনি, দর এতটা তলানিতে চলে আসবে ৷ আমি লক্ষ্মণভোগ বিক্রি করছি তিন থেকে আট টাকা কিলো দরে ৷ তবে গাছপাকা লক্ষ্মণভোগ এক টাকা কিলোতেও বিক্রি করতে হচ্ছে ৷ নইলে সেই আম ফেলে দিতে হবে ৷ যা পরিস্থিতি তাতে বাজারে আম নিয়ে যাওয়ার খরচটুকুও উঠছে না ৷ যেসব আম এলিট প্রজাতির, সেগুলিও কিলো প্রতি 10-12 টাকার বেশি দাম নেই ৷ আসলে এবার সব জায়গায় একইসঙ্গে আম পেকেছে ৷ ফলে জেলার আম বাইরেও যাচ্ছে না ৷ শুধুমাত্র বিহার আর অসমে কিছু আম যাচ্ছে ৷ প্রচুর ঋণ নিয়ে বাগান লিজ নিয়ে আমচাষ করেছিলাম ৷ এখন চিন্তা হচ্ছে, লিজের টাকা শোধ হবে কি না ৷ দর আর বাড়বে বলে মনে হয় না ৷"
কোতওয়ালি মরাপুকুর এলাকার আমচাষি সন্দীপ চৌধুরীর জানিয়েছেন, বাজারে এত আম যে খদ্দের পাওযা মুশকিল হয়েছে ৷ আম যে কোথায় বিক্রি করবেন, ভেবে উঠতে পারছেন না ৷ প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ৷ এখন ফজলি আর আশ্বিনার বাজারের আশায় রয়েছেন ৷
আরও পড়ুন: দিল্লির আম মেলায় মানুষের মন কাড়ল মালদার গোপালভোগ-ক্ষিরসাপাতি
এবার মালদা-মুর্শিদাবাদের সঙ্গে একই সময় মুকুল এসেছিল দক্ষিণবঙ্গের বাগানেও ৷ ফলে একইসঙ্গে সব জায়গার আম বাজারে নেমেছে ৷ তার উপর এবার অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও আমের ফলন বেশ ভালো ৷ বাংলাদেশে আম রফতানি বন্ধ রয়েছে ৷ তাই এবার জেলার আমের দর আর ওঠার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ ৷