ETV Bharat / state

সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটল স্কুল, কাল থেকে এক সঙ্গে ক্লাস করবে ছাত্র-ছাত্রীরা

পিছু হটতে বাধ্য হল হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচণ্ডী গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দির কর্তৃপক্ষ । বৃহস্পতিবার থেকে ছাত্রী-ছাত্রীরা একসঙ্গেই ক্লাস করবে, জানাল কর্তৃপক্ষ ।

বুলবুলচণ্ডী গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দির
author img

By

Published : Jul 3, 2019, 8:42 PM IST

Updated : Jul 3, 2019, 8:57 PM IST

মালদা, 3 জুলাই : চাপের মুখে অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হল হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচণ্ডী গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দির কর্তৃপক্ষ । ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা-আলাদা ক্লাস করানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল স্কুল কর্তৃপক্ষ । জানিয়ে দিল, বৃহস্পতিবার থেকে ছাত্রী-ছাত্রীরা একসঙ্গেই ক্লাস করবে ।

স্কুলের ইলেভেন ও টুয়েলভের পড়ুয়ারা নিজেদের মধ্যে 'মন দেওয়া নেওয়া'-য় মেতে রয়েছে বলে অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি এক আজব সিদ্ধান্ত নেন গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দিরের শিক্ষকরা । তাঁরা ঠিক করেন, সপ্তাহে তিন দিন ছেলে ও তিনদিন মেয়েদের ক্লাস নেওয়া হবে । সোম, বুধ ও শুক্রবার ক্লাস করবে মেয়েরা । বাকি তিনদিন ক্লাস হবে ছেলেদের । এমন সিদ্ধান্তের কথা ছড়িয়ে পড়তেই ঝড় ওঠে জেলায় । স্কুল কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক তাপসকুমার বিশ্বাস । যদিও গতকাল স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ পান্ডে দাবি করেছিলেন, 'অভিযুক্ত' ছেলেমেয়েদের চিহ্নিত করতে তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । এই সিদ্ধান্ত সাময়িক। সমস্যা মিটে গেলেই ফের পুরনো প্রথায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শুরু হবে ।

school
তখনও বলবৎ নিয়ম । ক্লাসে শুধু ছাত্রীরা

গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দিরটি পথ চলা শুরু করেছিল 1946 সালে । বর্তমানে স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা 1726 । শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন 38 জন। 1990 সালে স্কুলটি উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে উন্নীত হয় । প্রথম থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত ছেলেরা পড়ে । ইলেভেন ও টুয়েলভের ছেলেদের সঙ্গে মেয়েরাও পড়াশোনা করে । বর্তমানে স্কুলে ইলেভেনে মোট পড়ুয়া রয়েছেন 209 জন । তার মধ্যে 169 জন ছাত্র ও 60 জন ছাত্রী । টুয়েলভে মোট 226 জন পড়ুয়ার মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা 183, ছাত্রী 43 জন। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, কয়েক বছর ধরেই নাকি ইলেভেন ও টুয়েলভে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মন দেওয়া-নেওয়ার পালা চলছে । এ নিয়ে গত বছর স্কুলে বড়মাপের ঝামেলাও বাধে । শিক্ষকদের নিগ্রহ করা হয় বলেও অভিযোগ ।

school
সেই তিনদিন । স্কুলে শুধু ছেলেরা

এই সংক্রান্ত খবর : 'মন চুরি' রুখতে ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক দিনে ক্লাসের নিদান

আজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক জগদীশ সরকার বলেন, "সম্প্রতি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রেমের বিষয়টি সামনে আসে । তারপরই সপ্তাহে তিনদিন ছেলেদের ও বাকি তিনদিন মেয়েদের ক্লাস নেওয়া সিদ্ধান্ত । পুরো সিদ্ধান্তটাই ছিল আমাদের নিজেদের । স্কুলে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ।" এ দিকে, এমন সিদ্ধান্তের কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি প্রভাস চৌধুরি । তিনি আবার হবিবপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি। প্রভাসবাবু বলেন, "যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক । স্কুলের পরিবেশ বজায় রাখতে হয়তো শিক্ষকরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন । কিন্তু এটা আইনগত নয় । স্কুলেরও কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। সেটা কেউ এড়িয়ে যেতে পারেন না । আবার সামাজিকতা বলেও একটি জিনিস রয়েছে । শিক্ষকরা এই দুটিকে গুলিয়ে ফেলেছিলেন । তাঁরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা কখনই সমর্থনযোগ্য নয় । নির্দেশ দিয়েছি দ্রুত পুরনো প্রথায় ক্লাস শুরু করার জন্য । ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না ।"

প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য

স্কুল কর্তৃপক্ষের এহেন সিদ্ধান্ত নিয়ে ভিন্ন মত ছাত্রীদের মধ্যেই । ইলেভেনের ছাত্রী পর্ণা সরকারের মতে, "ঘটনাটি ছোটো একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে । একদিন একটি ছেলে একটি মেয়ের কাছ থেকে জল চায় । তার জন্য সেই মেয়েটির দাদা তাকে বকাবকি করে । খবর যায় শিক্ষকদের কানে । এরপরেই শিক্ষকরা ক্লাস নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেন । আমরা শিক্ষকদের কাছে কোনও অভিযোগ জানাইনি । শিক্ষকরা নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক সপ্তাহ ধরে এভাবেই ক্লাস চলছে। তবে ছেলেরা না থাকায় আমাদের ক্লাস করতে কিছুটা সুবিধা হচ্ছে । ছেলেরা থাকলে তাদের চেঁচামেচিতে আমরা শিক্ষকদের কথা শুনতে পেতাম না । এখন আমরা শিক্ষকদের প্রতিটি কথা শুনতে পাই।" অন্যদিকে, টুয়েলভের ছাত্রী মনীষা দাস বলেন, '' ছেলেরা সবসময় বিরক্ত করত। ক্লাসের ভিতরে তো বটেই, মেয়েদের কমনরুমের সামনেও তারা দাঁড়িয়ে থাকত । টিটকারি দিত । শিক্ষকরা ক্লাস নিয়ে নতুন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । এতে আমাদের উপকারই হয়েছে ।"

গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দিরের এই সিদ্ধান্তে সরব জেলার শিক্ষামহল । শিক্ষাবিদ সুস্মিতা সোম বলেন, "আমরা যে সময়ে বাস করছি, সেই সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে এমন বিভাজনের কথা কোথাও লেখা নেই । তা ছাড়া স্কুলটি তো কো-এড। ইলেভেন কিংবা টুয়েলভের ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চিতভাবেই নিজেদের ভালোমন্দ কিছুটা বুঝতে শিখেছে । তারা যদি নিজেদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, সেটা তাদের একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। "

মালদা, 3 জুলাই : চাপের মুখে অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হল হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচণ্ডী গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দির কর্তৃপক্ষ । ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা-আলাদা ক্লাস করানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল স্কুল কর্তৃপক্ষ । জানিয়ে দিল, বৃহস্পতিবার থেকে ছাত্রী-ছাত্রীরা একসঙ্গেই ক্লাস করবে ।

স্কুলের ইলেভেন ও টুয়েলভের পড়ুয়ারা নিজেদের মধ্যে 'মন দেওয়া নেওয়া'-য় মেতে রয়েছে বলে অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি এক আজব সিদ্ধান্ত নেন গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দিরের শিক্ষকরা । তাঁরা ঠিক করেন, সপ্তাহে তিন দিন ছেলে ও তিনদিন মেয়েদের ক্লাস নেওয়া হবে । সোম, বুধ ও শুক্রবার ক্লাস করবে মেয়েরা । বাকি তিনদিন ক্লাস হবে ছেলেদের । এমন সিদ্ধান্তের কথা ছড়িয়ে পড়তেই ঝড় ওঠে জেলায় । স্কুল কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক তাপসকুমার বিশ্বাস । যদিও গতকাল স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ পান্ডে দাবি করেছিলেন, 'অভিযুক্ত' ছেলেমেয়েদের চিহ্নিত করতে তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । এই সিদ্ধান্ত সাময়িক। সমস্যা মিটে গেলেই ফের পুরনো প্রথায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শুরু হবে ।

school
তখনও বলবৎ নিয়ম । ক্লাসে শুধু ছাত্রীরা

গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দিরটি পথ চলা শুরু করেছিল 1946 সালে । বর্তমানে স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা 1726 । শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন 38 জন। 1990 সালে স্কুলটি উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে উন্নীত হয় । প্রথম থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত ছেলেরা পড়ে । ইলেভেন ও টুয়েলভের ছেলেদের সঙ্গে মেয়েরাও পড়াশোনা করে । বর্তমানে স্কুলে ইলেভেনে মোট পড়ুয়া রয়েছেন 209 জন । তার মধ্যে 169 জন ছাত্র ও 60 জন ছাত্রী । টুয়েলভে মোট 226 জন পড়ুয়ার মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা 183, ছাত্রী 43 জন। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, কয়েক বছর ধরেই নাকি ইলেভেন ও টুয়েলভে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মন দেওয়া-নেওয়ার পালা চলছে । এ নিয়ে গত বছর স্কুলে বড়মাপের ঝামেলাও বাধে । শিক্ষকদের নিগ্রহ করা হয় বলেও অভিযোগ ।

school
সেই তিনদিন । স্কুলে শুধু ছেলেরা

এই সংক্রান্ত খবর : 'মন চুরি' রুখতে ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক দিনে ক্লাসের নিদান

আজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক জগদীশ সরকার বলেন, "সম্প্রতি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রেমের বিষয়টি সামনে আসে । তারপরই সপ্তাহে তিনদিন ছেলেদের ও বাকি তিনদিন মেয়েদের ক্লাস নেওয়া সিদ্ধান্ত । পুরো সিদ্ধান্তটাই ছিল আমাদের নিজেদের । স্কুলে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ।" এ দিকে, এমন সিদ্ধান্তের কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি প্রভাস চৌধুরি । তিনি আবার হবিবপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি। প্রভাসবাবু বলেন, "যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক । স্কুলের পরিবেশ বজায় রাখতে হয়তো শিক্ষকরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন । কিন্তু এটা আইনগত নয় । স্কুলেরও কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। সেটা কেউ এড়িয়ে যেতে পারেন না । আবার সামাজিকতা বলেও একটি জিনিস রয়েছে । শিক্ষকরা এই দুটিকে গুলিয়ে ফেলেছিলেন । তাঁরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা কখনই সমর্থনযোগ্য নয় । নির্দেশ দিয়েছি দ্রুত পুরনো প্রথায় ক্লাস শুরু করার জন্য । ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না ।"

প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য

স্কুল কর্তৃপক্ষের এহেন সিদ্ধান্ত নিয়ে ভিন্ন মত ছাত্রীদের মধ্যেই । ইলেভেনের ছাত্রী পর্ণা সরকারের মতে, "ঘটনাটি ছোটো একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে । একদিন একটি ছেলে একটি মেয়ের কাছ থেকে জল চায় । তার জন্য সেই মেয়েটির দাদা তাকে বকাবকি করে । খবর যায় শিক্ষকদের কানে । এরপরেই শিক্ষকরা ক্লাস নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেন । আমরা শিক্ষকদের কাছে কোনও অভিযোগ জানাইনি । শিক্ষকরা নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক সপ্তাহ ধরে এভাবেই ক্লাস চলছে। তবে ছেলেরা না থাকায় আমাদের ক্লাস করতে কিছুটা সুবিধা হচ্ছে । ছেলেরা থাকলে তাদের চেঁচামেচিতে আমরা শিক্ষকদের কথা শুনতে পেতাম না । এখন আমরা শিক্ষকদের প্রতিটি কথা শুনতে পাই।" অন্যদিকে, টুয়েলভের ছাত্রী মনীষা দাস বলেন, '' ছেলেরা সবসময় বিরক্ত করত। ক্লাসের ভিতরে তো বটেই, মেয়েদের কমনরুমের সামনেও তারা দাঁড়িয়ে থাকত । টিটকারি দিত । শিক্ষকরা ক্লাস নিয়ে নতুন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । এতে আমাদের উপকারই হয়েছে ।"

গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দিরের এই সিদ্ধান্তে সরব জেলার শিক্ষামহল । শিক্ষাবিদ সুস্মিতা সোম বলেন, "আমরা যে সময়ে বাস করছি, সেই সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে এমন বিভাজনের কথা কোথাও লেখা নেই । তা ছাড়া স্কুলটি তো কো-এড। ইলেভেন কিংবা টুয়েলভের ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চিতভাবেই নিজেদের ভালোমন্দ কিছুটা বুঝতে শিখেছে । তারা যদি নিজেদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, সেটা তাদের একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। "

Intro:মালদা, 3 জুলাই : প্রবল চাপের মুখে অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হল হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচন্ডী গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দির কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল থেকেই পুরোনো প্রথায় ছেলে ও মেয়েদের একসঙ্গে ক্লাস করানো হবে বলে আজ জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এদিকে শিক্ষকদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেননি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। তিনি জানিয়েছেন, তাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে শিক্ষকরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের এই তালিবানি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব জেলার শিক্ষামহলও।


Body:উল্লেখ্য, স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা নিজেদের মধ্যে মন দেওয়া নেওয়ায় মেতে রয়েছে বলে অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি এক আজব সিদ্ধান্ত নেন গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দির শিক্ষকরা। তাঁরা ঠিক করেন, সপ্তাহে তিনদিন করে ছেলে ও মেয়েদের ক্লাস নেওয়া হবে। সোম, বুধ ও শুক্রবার ক্লাস করবে মেয়েরা। বাকি তিদিন ক্লাস হবে ছেলেদের। এমন তালিবানি সিদ্ধান্তের কথা ছড়িয়ে পড়তেই ঝড় ওঠে জেলা জুড়ে। স্কুল কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক তাপসকুমার বিশ্বাস। যদিও গতকাল স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ পান্ডে দাবি করেন, অভিযুক্ত ছেলেমেয়েদের চিহ্নিত করতে তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তাঁদের এই সিদ্ধান্ত সাময়িক। সমস্যা মিটে গেলেই ফের পুরনো প্রথায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শুরু হবে।
গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দির স্থাপিত হয় 1946 সালে। বর্তমানে স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা 17 26। শিক্ষক-শিক্ষিকারয়েছেন 38 জন। 1990 সালে স্কুলটি উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়। প্রথম থেকে দশম পর্যন্ত শ্রেণি পর্যন্ত শুধুমাত্র ছেলেদের পড়াশোনা হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ছেলেদের সঙ্গে মেয়েরাও পড়াশোনা করে। বর্তমানে স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে মোট পড়ুয়া রয়েছে 209 জন। তার মধ্যে 169 জন ছাত্র ও 60 জন ছাত্রী। দ্বাদশ শ্রেণিতে মোট 226 জন পড়ুয়ার মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা 183, ছাত্রী রয়েছে 43 জন। জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই নাকি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছেলেমেয়েদের মধ্যে মন দেওয়া-নেওয়ার পালা চলছে। এনিয়ে গত বছর স্কুলে বড়োসড়ো ঝামেলা বাধে। সেই ঝামেলায় নিগৃহীত হতে হয় শিক্ষকদেরও।
আজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক জগদীশ সরকার বলেন, "গত শনিবারের আগের শনিবার স্কুলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রেমঘটিত একটি ঘটনা ঘটে। সেই খবর কানে আসতেই তারা আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই, এবার থেকে সপ্তাহে তিনদিন ছেলেদের ও বাকি তিনদিন মেয়েদের ক্লাস নেওয়া হবে। আসলে আমরা দোষী ছাত্রছাত্রীদের চিহ্নিত করতে পারছিলাম না। তাদের চিহ্নিত করতেই আমরা এই দাওয়াই প্রয়োগ করি। তাতে কাজও হয়। ইতিমধ্যেই আমরা দোষী ছাত্রছাত্রীদের চিহ্নিত করতে পেরেছি। আমরা তাদের অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে পাঠাচ্ছি। এই ছাত্রছাত্রীদের আমরা তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করব। আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এভাবে ক্লাস করাটা সাময়িক। আমাদের প্রয়োজন মিটে গেছে। আগামীকাল থেকেই আমরা পুরোনো প্রথায় অর্থাৎ ছেলে ও মেয়েদের একই সঙ্গে ক্লাস নেব। তবে আমরা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি কিংবা জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের সঙ্গে এনিয়ে কোনও আলোচনা করিনি। পুরো সিদ্ধান্তটাই ছিল আমাদের নিজেদের। স্কুলে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।"
এদিকে ইটিভি ভারতের কাছে গোটা ঘটনা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রভাস চৌধুরি। তিনি আবার হবিবপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি। বিষয়টি জেনে তিনি ফোন মারফত খোঁজখবর নেন। প্রভাসবাবু বলেন," স্কুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক। স্কুলের পরিবেশ বজায় রাখতে হয়তো শিক্ষকরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু এটা আইনগত নয়। স্কুলেরও কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। সেটা কেউ এড়িয়ে যেতে পারেন না। আবার সামাজিকতা বলেও একটি জিনিস রয়েছে। শিক্ষকরা এই দুটিকে গুলিয়ে ফেলেছিলেন। তাঁরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। আমি তাদের নির্দেশ দিয়েছি দ্রুত পুরনো প্রথায় ক্লাস শুরু করতে হবে। প্রয়োজনে আজ থেকেই তা শুরু করতে হবে। তবে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না।"
স্কুল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি একাদশ শ্রেণির ছাত্রী পর্ণা সরকার। সে বলে, "ঘটনাটি ছোট্ট একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। একদিন ক্লাসের একটি ছেলে একটি মেয়ের কাছ থেকে জল চেয়ে খায়। তার জন্য সেই মেয়েটির দাদা তাকে বকাবকি করে। খবর যায় শিক্ষকদের কানে। এরপরেই শিক্ষকরা ক্লাস নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেন। আমার প্রশ্ন, যখন ছেলে ও মেয়েরা একই ক্লাসে পড়াশোনা করি, তখন আমরা তো বন্ধুও হতে পারি! তাছাড়া কোনো মেয়ের কাছ থেকে জল চেয়ে খাওয়া কোনো ছেলের অন্যায় বলে আমি মনে করি না। আমরা এনিয়ে শিক্ষকদের কাছে কোনও অভিযোগ জানাইনি। শিক্ষকরা নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক সপ্তাহ ধরে এভাবেই ক্লাস চলছে। তবে ছেলেরা না থাকায় আমাদের ক্লাস করতে কিছুটা সুবিধা হচ্ছে। ছেলেরা থাকলে তাদের চেঁচামেচিতে আমরা শিক্ষকদের কথা শুনতে পেতাম না। এখন আমরা শিক্ষকদের প্রতিটি কথা শুনতে পাই।" অন্যদিকে, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী মনীষা দাস বলে, ছেলেরা সবসময় বিরক্ত করত। ক্লাসের ভিতরে তো বটেই, মেয়েদের কমনরুমের সামনেও তারা দাঁড়িয়ে থাকত। মেয়েদের উদ্দেশ্যে টিটকারি দিত। এসব কারণেই শিক্ষকরা ক্লাস নিয়ে নতুন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে আমাদের উপকারই হয়েছে। তবে শিক্ষকরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হবে। তাই এই সিদ্ধান্তে পঠনপাঠনে কোনো প্রভাব পড়বে না।"


Conclusion:এদিকে গিরিজাসুন্দরী বিদ্যামন্দিরের এই সিদ্ধান্তে সরব জেলার শিক্ষামহল। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সুস্মিতা সোম বলেন, " আমরা যে সময়ে বাস করছি, সেই সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে এমন বিভাজনের কথা কোথাও লেখা নেই। তাছাড়া স্কুলটি তো কো-এড। একাদশ কিংবা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চিতভাবেই নিজেদের ভালোমন্দ কিছুটা বুঝতে শিখেছে। তারা যদি নিজেদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, সেটা তাদের একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। প্রয়োজনে এনিয়ে তাদের শাসন করা যেতে পারে। তাদের সতর্ক করা যেতে পারে। কিন্তু এমন একটা সিদ্ধান্ত কখনোই নেওয়া যায় না। বর্তমান সময়ে ছেলে ও মেয়েরা কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে চলে। ছোটো থেকেই ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে পড়াশোনা করে। উচ্চশিক্ষাতেও তারা একই সঙ্গে থাকে। শুধু তাই নয়, চাকরির ক্ষেত্রেও প্রতিটি মুহূর্তে একটি মেয়েকে ছেলেদের সঙ্গে চলতে হয়। স্কুল জীবন থেকেই তারা ঘাত প্রতিঘাতের মাধ্যমে বড়ো হয়ে ওঠে কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ এখানে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তাদের জীবনের পাঠটাকেই রুদ্ধ করে দিচ্ছে। এটা স্রোতের বিপরীতে ভেসে চলা ছাড়া আর কিছু নয়।"
Last Updated : Jul 3, 2019, 8:57 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.