ETV Bharat / state

মালদা মেডিকেলের বাইরে কোরোনা চিকিৎসার বর্জ্য ! - Malda News

অভিযোগ উঠেছে, মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ভুলে গিয়েছে সাধারণ মানুষের সুরক্ষার কথা । প্রতিদিন হাসপাতালের সঙ্গে সারি ও কোভিড হাসপাতালের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে জাতীয় সড়কের ধারে থাকা মেডিকেলের ওয়েস্ট ডিসপোজ়োল ঘরগুলির বাইরেই ৷বর্জ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে গোটা এলাকায় ।

Scattered Malda Medical waste
ছড়িয়ে ছিটিয়ে মালদা মেডিকেলের বর্জ্য
author img

By

Published : Jul 24, 2020, 10:02 PM IST

মালদা, 24 জুলাই : মালদা জেলায় হু হু করে বাড়ছে কোরোনা সংক্রমণ । ঠাঁই নেই রব, ইনস্টিটিউশনাল আইসোলেশন সেন্টারগুলিতে । এই পরিস্থিতিতে মালদা মেডিকেলের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে 125 বেডের নতুন কোভিড হাসপাতাল চালু করেছে রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর । এখনও পর্যন্ত সেখানে 9 জন রোগীকে ভরতি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে । গোটা জেলা জুড়ে এখন শুধুই কোরোনা আতঙ্ক । এই পরিস্থিতিতে মালদা মেডিকেলের একটি দৃশ্য দেখে চমকে উঠছে সবাই । মেডিকেলে ঢোকার মুখে, 34 নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে জমা করা রয়েছে হাসপাতালের যাবতীয় বর্জ্য । এদিক ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে PPE কিট, গ্লাভস, রক্ত পরীক্ষার ভায়াল । বৃষ্টিতে সেই বর্জ্য চলে আসছে মেডিকেলের মূল গেট ও জাতীয় সড়কের উপর । এর মধ্যে মেডিকেলের সারি ওয়ার্ড, এমনকী নতুন চালু হওয়া কোভিড হাসপাতালের বর্জ্যও রয়েছে বলে অভিযোগ । অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করছেন মেডিকেলের সাফাইকর্মীরা । বিষয়টি অজানা নয় মেডিকেল কর্তৃপক্ষেরও । কর্তৃপক্ষের তরফে এই ঘটনার দায় বর্জ্য নিষ্কাশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার কাঁধেই চাপানো হয়েছে । যদিও ঠিকাদার সংস্থার দাবি, এক্ষেত্রে তাদের কোনও দোষ নেই । মেডিকেল কর্তৃপক্ষ বিপজ্জনক বর্জ্য সংরক্ষণের বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে তাদের দাবি ।

বর্তমানে গোটা উত্তরবঙ্গে কোরোনা হটস্পট হয়ে উঠেছে মালদা জেলা । প্রতিদিনই সংক্রমণের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে । এখনও পর্যন্ত সংক্রমণের সংখ্যা 1800 পার করেছে । কোরোনা সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত 13 জনের । এর মধ্যে বেশ কয়েকজন লালারস মৃত্যুর পর সংগ্রহ করা হয়েছিল । জেলাজুড়ে প্রতিদিন যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে আক্রান্তদের সবাইকে ইনস্টিটিউশনাল আইসোলেশন সেন্টার কিংবা কোভিড হাসপাতালে ভরতি করা যাচ্ছে না । শুধুমাত্র গুরুতর অসুস্থদেরই চিকিৎসা করা হচ্ছে হাসপাতালে । পরিস্থিতি বুঝে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশে গত 22 জুলাই মালদা মেডিকেলের ট্রমা কেয়ার ইউনিটের তিনতলায় চালু করা হয়েছে 125 বেডের বিশেষ কোভিড হাসপাতাল । আজ পর্যন্ত সেখানে 9 জনকে ভরতি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে । তবে অনেক আগে থেকেই মেডিকেলে চালু হয়েছে সারি ওয়ার্ড । কোরোনা উপসর্গযুক্ত রোগীদের সেখানে ভরতি করে চিকিৎসা করা হয় । এখন ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে প্রায় 50 জন রোগী । এই দুই ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ । কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এত কিছুর মধ্যে কর্তৃপক্ষ ভুলে গিয়েছে সাধারণ মানুষের সুরক্ষার কথা । প্রতিদিন হাসপাতালের সঙ্গে সারি ও কোভিড হাসপাতালের বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে জাতীয় সড়কের ধারে থাকা মেডিকেলের ওয়েস্ট ডিসপোজাল ঘরগুলিতে । যদিও ঘরে নয়, সেই সমস্ত বর্জ্য ঘরের সামনে বোঝাই করা হচ্ছে । তার মধ্যে রয়েছে হলুদ ব্যাগে থাকা বিপজ্জনক বর্জ্যও । প্রতিদিন পথ কুকুরের দল সেই সমস্ত ব্যাগ ছিঁড়ে ফেলছে । বর্জ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে গোটা এলাকায় । আজও সেই ছবি দেখা গিয়েছে সেখানে ।

ওই বর্জ্যের ঢিবির পাশেই রয়েছে বেসরকারি ট্যাক্সিস্ট্যান্ড । মেডিকেলের রোগী ও তাদের পরিবারের লোকজনের যাতায়াতের অন্যতম ভরসা । কোরোনা আবহে আতঙ্কে রয়েছেন এই ট্যাক্সিচালকরাও। তাদেরই একজন সুব্রত পোদ্দার বলেন, "জেলায় কোরোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে । এনিয়ে আমরা ভয়ে রয়েছি । এরই মধ্যে জাতীয় সড়কের ধারে মেডিকেলের যাবতীয় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে । দীর্ঘদিন ধরেই এমনটাই হয়ে আসছে । নিয়মিত বর্জ্য সাফাই করা হচ্ছে না । আমরা সাফাইকর্মীদের বিষয়টি জানিয়েছি । কিন্তু কোরোনা আবহেও এই সমস্ত বর্জ্য নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না । এর মধ্যেই পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে কোরোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত সামগ্রী । এই বর্জ্য থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে । কিন্তু পেটের তাগিদে এর মধ্যেই আমাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে ।"

ছড়িয়ে ছিটিয়ে মালদা মেডিকেলের বর্জ্য, আতঙ্কে স্থানীয়রা

আর এক গাড়িচালক কৃষ্ণ সিংহ বলেন, "কোরোনা মোকাবিলায় যখন লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে, তখন মেডিকেলের যাবতীয় বর্জ্য এভাবেই ফেলে রাখা হচ্ছে । এসব নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত । এর মধ্যেই পড়ে রয়েছে PPE কিট, ব্লাড ভয়াল । এসব থেকে কোরোনা ছড়াতে পারে । আমাদের এর মধ্যেই প্রতিদিন কাজ করতে হচ্ছে । এখানে যা ছবি, তাতে কোরোনা মোকাবিলায় মেডিকেল কর্তৃপক্ষ কতটা তৎপর, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ।"

এই বর্জ্যের মধ্যে যে সারি ওয়ার্ড ও কোভিড হাসপাতালে সামগ্রীও রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন মেডিকেলের সাফাইকর্মী অজয় হরিজন । তিনি বলেন, "আমরা প্রতিদিনই এখানে হাসপাতালের বর্জ্য ফেলি । এই বর্জ্য নিষ্কাশনের দায়িত্বে রয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা । তারা নিয়মিত বর্জ্য নিয়ে যায় না । 10-20 দিন পরপর তারা বর্জ্য নিয়ে যায় । এর মধ্যে শুধু সারি নয়, সব ওয়ার্ডের বর্জ্যই রয়েছে । পুরো এলাকায় বর্জ্য ছিটিয়ে রয়েছে। আমাদেরও কাজ করতে ভীষণ অসুবিধে হচ্ছে । আমাদের সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই । এই বর্জ্য থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যেও কোরোনা ছড়াতে পারে । আমরাও চাই, মেডিকেল কর্তৃপক্ষ এসব বর্জ্য নিষ্কাশনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক ।"

মেডিকেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর যে কোম্পানির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে, তারা গোটা উত্তরবঙ্গের সমস্ত সরকারি হাসপাতালে এই কাজ করে । তারা যে ঠিক মতো বর্জ্য নিষ্কাশন করছে না, তা বিলক্ষণ জানে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ । কিন্তু এই পরিস্থিতিতে এই বর্জ্য থেকে যদি কোরোনা সংক্রমণ আরও ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়ে তবে তার দায় কে নেবে? বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মেডিকেলের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন,"ওই বেসরকারি সংস্থা নিয়মিতই বর্জ্য নিষ্কাশন করছিল । কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তারা বর্জ্য নিষ্কাশনে দেরি করছে । আমরা এনিয়ে সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি । এক্ষেত্রে মেডিকেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা বিষয়টি দেখছেন । রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এই সমস্যা নিয়ে একটি অ্যাপ বানিয়েছে । আমরা সেই অ্যাপের মাধ্যমে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি । আমরা শীঘ্রই এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি ।"

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বেসরকারি সংস্থার এক গাড়িচালক গোটা ঘটনার দায় মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কাঁধেই চাপিয়েছেন । তিনি জানান, "মেডিকেলের বিপজ্জনক বর্জ্য হলুদ প্যাকেটে রাখা হয় । সেই প্যাকেট নির্দিষ্ট ঘরে বন্ধ করে রাখার নিয়ম । কিন্তু মালদা মেডিকেলের সেই ঘরের শাটার অনেকদিন ধরে খারাপ । বারবার বলার পরেও মেডিকেল কর্তৃপক্ষ সেই শাটার ঠিক করেনি । এতেই বিপত্তি দেখা দিয়েছে । পথ কুকুরের দল বিপজনক বর্জ্যের প্যাকেট ছিঁড়ে ফেলেছে । ফলে প্যাকেটের ভিতরে থাকা সামগ্রী এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ছে । এতে কোরোনা সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনাও বাড়ছে । এক্ষেত্রে আমাদের কোনও দোষ নেই ।"

মালদা, 24 জুলাই : মালদা জেলায় হু হু করে বাড়ছে কোরোনা সংক্রমণ । ঠাঁই নেই রব, ইনস্টিটিউশনাল আইসোলেশন সেন্টারগুলিতে । এই পরিস্থিতিতে মালদা মেডিকেলের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে 125 বেডের নতুন কোভিড হাসপাতাল চালু করেছে রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর । এখনও পর্যন্ত সেখানে 9 জন রোগীকে ভরতি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে । গোটা জেলা জুড়ে এখন শুধুই কোরোনা আতঙ্ক । এই পরিস্থিতিতে মালদা মেডিকেলের একটি দৃশ্য দেখে চমকে উঠছে সবাই । মেডিকেলে ঢোকার মুখে, 34 নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে জমা করা রয়েছে হাসপাতালের যাবতীয় বর্জ্য । এদিক ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে PPE কিট, গ্লাভস, রক্ত পরীক্ষার ভায়াল । বৃষ্টিতে সেই বর্জ্য চলে আসছে মেডিকেলের মূল গেট ও জাতীয় সড়কের উপর । এর মধ্যে মেডিকেলের সারি ওয়ার্ড, এমনকী নতুন চালু হওয়া কোভিড হাসপাতালের বর্জ্যও রয়েছে বলে অভিযোগ । অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করছেন মেডিকেলের সাফাইকর্মীরা । বিষয়টি অজানা নয় মেডিকেল কর্তৃপক্ষেরও । কর্তৃপক্ষের তরফে এই ঘটনার দায় বর্জ্য নিষ্কাশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার কাঁধেই চাপানো হয়েছে । যদিও ঠিকাদার সংস্থার দাবি, এক্ষেত্রে তাদের কোনও দোষ নেই । মেডিকেল কর্তৃপক্ষ বিপজ্জনক বর্জ্য সংরক্ষণের বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে তাদের দাবি ।

বর্তমানে গোটা উত্তরবঙ্গে কোরোনা হটস্পট হয়ে উঠেছে মালদা জেলা । প্রতিদিনই সংক্রমণের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে । এখনও পর্যন্ত সংক্রমণের সংখ্যা 1800 পার করেছে । কোরোনা সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত 13 জনের । এর মধ্যে বেশ কয়েকজন লালারস মৃত্যুর পর সংগ্রহ করা হয়েছিল । জেলাজুড়ে প্রতিদিন যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে আক্রান্তদের সবাইকে ইনস্টিটিউশনাল আইসোলেশন সেন্টার কিংবা কোভিড হাসপাতালে ভরতি করা যাচ্ছে না । শুধুমাত্র গুরুতর অসুস্থদেরই চিকিৎসা করা হচ্ছে হাসপাতালে । পরিস্থিতি বুঝে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশে গত 22 জুলাই মালদা মেডিকেলের ট্রমা কেয়ার ইউনিটের তিনতলায় চালু করা হয়েছে 125 বেডের বিশেষ কোভিড হাসপাতাল । আজ পর্যন্ত সেখানে 9 জনকে ভরতি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে । তবে অনেক আগে থেকেই মেডিকেলে চালু হয়েছে সারি ওয়ার্ড । কোরোনা উপসর্গযুক্ত রোগীদের সেখানে ভরতি করে চিকিৎসা করা হয় । এখন ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে প্রায় 50 জন রোগী । এই দুই ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ । কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এত কিছুর মধ্যে কর্তৃপক্ষ ভুলে গিয়েছে সাধারণ মানুষের সুরক্ষার কথা । প্রতিদিন হাসপাতালের সঙ্গে সারি ও কোভিড হাসপাতালের বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে জাতীয় সড়কের ধারে থাকা মেডিকেলের ওয়েস্ট ডিসপোজাল ঘরগুলিতে । যদিও ঘরে নয়, সেই সমস্ত বর্জ্য ঘরের সামনে বোঝাই করা হচ্ছে । তার মধ্যে রয়েছে হলুদ ব্যাগে থাকা বিপজ্জনক বর্জ্যও । প্রতিদিন পথ কুকুরের দল সেই সমস্ত ব্যাগ ছিঁড়ে ফেলছে । বর্জ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে গোটা এলাকায় । আজও সেই ছবি দেখা গিয়েছে সেখানে ।

ওই বর্জ্যের ঢিবির পাশেই রয়েছে বেসরকারি ট্যাক্সিস্ট্যান্ড । মেডিকেলের রোগী ও তাদের পরিবারের লোকজনের যাতায়াতের অন্যতম ভরসা । কোরোনা আবহে আতঙ্কে রয়েছেন এই ট্যাক্সিচালকরাও। তাদেরই একজন সুব্রত পোদ্দার বলেন, "জেলায় কোরোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে । এনিয়ে আমরা ভয়ে রয়েছি । এরই মধ্যে জাতীয় সড়কের ধারে মেডিকেলের যাবতীয় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে । দীর্ঘদিন ধরেই এমনটাই হয়ে আসছে । নিয়মিত বর্জ্য সাফাই করা হচ্ছে না । আমরা সাফাইকর্মীদের বিষয়টি জানিয়েছি । কিন্তু কোরোনা আবহেও এই সমস্ত বর্জ্য নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না । এর মধ্যেই পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে কোরোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত সামগ্রী । এই বর্জ্য থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে । কিন্তু পেটের তাগিদে এর মধ্যেই আমাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে ।"

ছড়িয়ে ছিটিয়ে মালদা মেডিকেলের বর্জ্য, আতঙ্কে স্থানীয়রা

আর এক গাড়িচালক কৃষ্ণ সিংহ বলেন, "কোরোনা মোকাবিলায় যখন লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে, তখন মেডিকেলের যাবতীয় বর্জ্য এভাবেই ফেলে রাখা হচ্ছে । এসব নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত । এর মধ্যেই পড়ে রয়েছে PPE কিট, ব্লাড ভয়াল । এসব থেকে কোরোনা ছড়াতে পারে । আমাদের এর মধ্যেই প্রতিদিন কাজ করতে হচ্ছে । এখানে যা ছবি, তাতে কোরোনা মোকাবিলায় মেডিকেল কর্তৃপক্ষ কতটা তৎপর, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ।"

এই বর্জ্যের মধ্যে যে সারি ওয়ার্ড ও কোভিড হাসপাতালে সামগ্রীও রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন মেডিকেলের সাফাইকর্মী অজয় হরিজন । তিনি বলেন, "আমরা প্রতিদিনই এখানে হাসপাতালের বর্জ্য ফেলি । এই বর্জ্য নিষ্কাশনের দায়িত্বে রয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা । তারা নিয়মিত বর্জ্য নিয়ে যায় না । 10-20 দিন পরপর তারা বর্জ্য নিয়ে যায় । এর মধ্যে শুধু সারি নয়, সব ওয়ার্ডের বর্জ্যই রয়েছে । পুরো এলাকায় বর্জ্য ছিটিয়ে রয়েছে। আমাদেরও কাজ করতে ভীষণ অসুবিধে হচ্ছে । আমাদের সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই । এই বর্জ্য থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যেও কোরোনা ছড়াতে পারে । আমরাও চাই, মেডিকেল কর্তৃপক্ষ এসব বর্জ্য নিষ্কাশনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক ।"

মেডিকেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর যে কোম্পানির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে, তারা গোটা উত্তরবঙ্গের সমস্ত সরকারি হাসপাতালে এই কাজ করে । তারা যে ঠিক মতো বর্জ্য নিষ্কাশন করছে না, তা বিলক্ষণ জানে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ । কিন্তু এই পরিস্থিতিতে এই বর্জ্য থেকে যদি কোরোনা সংক্রমণ আরও ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়ে তবে তার দায় কে নেবে? বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মেডিকেলের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন,"ওই বেসরকারি সংস্থা নিয়মিতই বর্জ্য নিষ্কাশন করছিল । কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তারা বর্জ্য নিষ্কাশনে দেরি করছে । আমরা এনিয়ে সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি । এক্ষেত্রে মেডিকেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা বিষয়টি দেখছেন । রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এই সমস্যা নিয়ে একটি অ্যাপ বানিয়েছে । আমরা সেই অ্যাপের মাধ্যমে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি । আমরা শীঘ্রই এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি ।"

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বেসরকারি সংস্থার এক গাড়িচালক গোটা ঘটনার দায় মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কাঁধেই চাপিয়েছেন । তিনি জানান, "মেডিকেলের বিপজ্জনক বর্জ্য হলুদ প্যাকেটে রাখা হয় । সেই প্যাকেট নির্দিষ্ট ঘরে বন্ধ করে রাখার নিয়ম । কিন্তু মালদা মেডিকেলের সেই ঘরের শাটার অনেকদিন ধরে খারাপ । বারবার বলার পরেও মেডিকেল কর্তৃপক্ষ সেই শাটার ঠিক করেনি । এতেই বিপত্তি দেখা দিয়েছে । পথ কুকুরের দল বিপজনক বর্জ্যের প্যাকেট ছিঁড়ে ফেলেছে । ফলে প্যাকেটের ভিতরে থাকা সামগ্রী এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ছে । এতে কোরোনা সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনাও বাড়ছে । এক্ষেত্রে আমাদের কোনও দোষ নেই ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.