মালদা, ৮ মার্চ : চলতি মরশুমে রাজ্য স্কুলস্তর ও ওপেন বেঙ্গলে প্রথমস্থান পেয়েছে সপ্তমী। পূর্বাঞ্চল জ়োনেও শীর্ষস্থান পেয়ে সবার নজর কেড়েছে সে। অর্থনৈতিক অনটন থামাতে পারেনি তাকে। ঝুলিতে এসেছে একের পর এক পদক। হাঁটাই তার নেশা। পেশাও বটে। বয়স মাত্র ১৬। এই বয়সেই সংসারের গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে সপ্তমী। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সপ্তমী জানে না নারী দিবসের মানে। তবে সে চায়, পৃথিবীর আর কোনও নারী যেন তার মতো কষ্ট না পায়। কষ্ট পেলেও যেন মন শক্ত করে মোকাবিলা করতে পারে।
সপ্তমী মণ্ডল। বাড়ি মালদার তেলিপুকুর। মাধাইপুর এ. আর. হাইস্কুলের ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী। সপ্তমীর বাবা পেশায় সবজি বিক্রেতা। তবে সবজি বিক্রি করে যা আয় করেন, তাতে দু'বেলা সবার খাবার জোটে না। সপ্তমীর মা নন্দরানি মণ্ডল মানসিক ভারসাম্যহীন। রয়েছে একভাই ও বোন। সূর্য ও ঝরনা। বছর ছয়েক আগে সরকারি সাহায্যে দুটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয় সপ্তমীদের। সংস্কারের অভাবে আজ সেই ঘরের অবস্থা ভালো নয়। গজিয়েছে আগাছা। সেখান থেকেই নিজের প্রতিভার জোরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সপ্তমী।
ছোটোবেলা থেকেই খেলাধুলোর প্রতি খুব আগ্রহ ছিল সপ্তমীর। একসময় মালদা স্পোর্টস অ্যাকাডেমির কোচ মানস রায়বর্মনের চোখে পড়ে সপ্তমী। ২০১৩ সাল থেকে তিনিই তিলে তিলে তৈরি করছেন সপ্তমীকে। ২০১৪ সাল থেকেই স্কুল ও রাজ্যস্তরে একাধিক সাফল্য পেয়েছে সে।
প্রতিদিনই প্রায় আধপেটা খেয়ে বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে সকাল- বিকেল প্র্যাকটিস করতে যায় সপ্তমী। তার কথায়, "২০১৩ সালের শেষের দিক থেকে আমি রেস ওয়াকিং শুরু করি। ইতিমধ্যেই রাজ্যস্তরে বেশ কিছু প্রতিযোগিতায় ভালো ফল করেছি। এবার জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে রাজ্যস্তর থেকে আমার নামটা ভুল পাঠানো হয়। তাই আমি সেখানে ক্রশ কান্ট্রিতে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। বাবা খুব একটা রোজগার করতে পারেন না। তাই এখন আমার উপার্জনেই সংসার চলে। তবে এত কিছুতেও আমার স্বপ্ন দেখা শেষ হয়নি। আমি ভালো খেলোয়াড় হতে চাই। তবে একটু সাহায্য পেলে আমার লড়াইটা একটু সহজ হয়।"
ছাত্রীর সাফল্যে ভীষণ খুশি মানসবাবু। তিনি বলেন, "ওর মধ্যে অনেক প্রতিভা রয়েছে। অনেক বড় জায়গায় পৌঁছোনোর ক্ষমতা রাখে। যদি ভালো প্রশিক্ষক আর প্রশিক্ষণ পায়, তাহলে সপ্তমী অনেক দূর পর্যন্ত এগোবে। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমি সপ্তমীর জন্য একটাই প্রার্থনা করি, আমি যেন ওর জন্য একদিন জাতীয় সংগীত শুনতে পাই।"