মালদা, 9 নভেম্বর: শুধু জমিতেই নয়, মাফিয়াদের চোখ নদীতেও ! প্লট করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে আস্ত নদী (River sold in plots)৷ সেই কাজ চলছে প্রশাসনের নাকের ডগাতেই ৷ ঘটনাটি হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের সুলতান নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের খন্তা গ্রামের ৷ এই ঘটনা যে ঘটেছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের উপপ্রধান (TMC Under Scanner)৷ বিষয়টি নিয়ে ভোটের আগে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা ৷
বর্ষা শেষে এখন জল প্রায় নেই হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর (Malda News) ব্লক দিয়ে বয়ে যাওয়া কালকোষ নদীতে ৷ বিহার থেকে এ রাজ্যে ঢুকে এই নদী ফুলহরের সঙ্গে মিশেছে ৷ এই নদীই ভরাট করার পর প্লট করে বিক্রি করে দিচ্ছে মাফিয়ারা ৷ স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, নদীর প্লট দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা কাঠা দরে বিক্রি হচ্ছে ৷ বাইরে থেকে ট্র্যাক্টরে মাটি এনে তা দিয়ে চলছে নদী ভরাট ৷ এই মাফিয়ারা সবাই তৃণমূলের বলে অভিযোগ ৷ তাই তাঁদের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস দেখাতে পারছেন না ৷ কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে মাত্র আড়াইশো মিটারের মধ্যে ব্লক অফিস থাকলেও বিডিও কিংবা দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা নদী বাঁচাতে এখনও কোনও উদ্যোগ নেননি ৷ স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এভাবে নদী-নালা ভরাট হওয়ার খেসারত দিতে হয়েছিল 2018 সালে ৷ সে বারের বন্যায় স্থানীয়দের চরম সংকটের মুখে পড়তে হয়েছিল ৷ ভেসে গিয়েছিল গোটা ব্লকই ৷
এমন ঘটনা যে ঘটছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত সুলতাননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ওবাইদুর রহমান ৷ তাঁর বক্তব্য, “আজ সকালেই বিষয়টা জানতে পেরেছি ৷ সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করি ৷ নিজেই ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখি ৷ নদী যে ভরাট করা হয়েছে, তা আমি দেখেছি ৷ কিন্তু নদীর জমি যদি কারও বিক্রি করার পরিকল্পনা থাকে, তবে সে যে দলেরই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে আমরা কঠোর পদক্ষেপ করব ৷ আমাদের দলের কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকলে সেও ছাড় পাবে না ৷ এটা সরকারি জমি ৷ এই জমির মাটি কেউ নিতে পারবে না ৷ খুঁড়তেও পারবে না ৷ আমরা নদীর চর অল্প পয়সায় গরিব মানুষকে লিজ দিই ৷ সেখানে তাঁরা ফসল ফলাতে পারেন ৷ কিন্তু যারা এই কাজ করছে, তারা কেউ বাঁচবে না ৷”
আরও পড়ুন: মুহূর্তেই ধসে পড়তে পারে স্কুল ! গ্রামবাসীর দিন কাটছে চরম অনিশ্চয়তায়
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিষয়টি বিরোধীদের হাতে বড় অস্ত্র তুলে দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷ এ নিয়ে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য শেষ খলিল বলেন, “এখন রাজ্যে যেন নিয়ম হয়ে গিয়েছে, যত অপরাধই করো না কেন, তৃণমূল করলে সব মাফ ৷ এই ঘটনার সঙ্গেও তৃণমূল জড়িয়ে রয়েছে ৷ এই নদী দিয়েই হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার জল নিষ্কাশন হয় ৷ এক সময় সেটা বন্ধ হয়ে যাবে ৷ আর তা হলে পাশে থাকা রেল লাইনের অস্তিত্বও বিপন্ন হয়ে যাবে ৷ তৃণমূলের লোকজন এই কাজ করায় পুলিশ কিংবা প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারছে না ৷ প্রশাসনিক আধিকারিকরা ভয় পাচ্ছেন ৷ আমরা এ নিয়ে ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হব ৷ কাজ না হলে আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে যাব ৷”
এ দিকে বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য কিষান কেডিয়া বলছেন, “এই নদীর জায়গা ইউনিয়ন বোর্ডের ৷ সরকারি সম্পত্তি ৷ তৃণমূলের সবাই একজোট হয়ে নদীকেই ভরাট করার পর প্লট করে বিক্রি করছে ৷ গোটা রাজ্য জুড়েই তৃণমূল সব বিক্রি করে দিচ্ছে ৷ পারলে ওরা আকাশটাও বিক্রি করে দেবে ৷ যেখানে এই ঘটনা ঘটছে, তার 300 মিটারের মধ্যেই বিডিও-র অফিস ৷ 20 কিলোমিটার দূরে মহকুমাশাসকের দফতর ৷ তাঁরা কী করছেন ? আসলে শাসকদলের লোকজন তাঁদের যা বলছে, তাঁরা সেটাই করছেন ৷ এতেই বোঝা যাচ্ছে, রাজ্য সরকার আজ কোথায় পৌঁছে গিয়েছে ৷ যেভাবে অনেক পশু-পাখি লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, তেমনই নদী-নালাও লুপ্ত হচ্ছে ৷ প্রশাসন এখন ঘুমিয়ে রয়েছে ৷ বন্যা হলে আবার জেগে উঠবে ৷ রোজগার করার জন্য ৷”
এ নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুরজিৎ দাসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বিষয়টি জানা নেই ৷ তিনি খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন ৷