মালদা, 30 জুন : যে বয়সে মাঠের শিশির ভেজা ঘাস চিরে জীবনের আনন্দ খুঁজতে ছোটার কথা, সেই বয়সে বিছানায় শুয়ে টালির চালের দিকে তাকিয়ে দিন কাটছে সাত বছরের পারভেজের । তার একাকীত্ব দূর করতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় সঙ্গ দিতে আসে পাড়ার বন্ধুরা । কখনও মাথায় হাত বুলিয়ে, কখনও আবার অঙ্গভঙ্গি করে বন্ধুকে হাসানোর চেষ্টাও চলে । বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে না পারলেও হাত-পা নাড়িয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে ছোট্ট পারভেজ । বন্ধুদের সঙ্গে ছেলেকে দেখে খানিকটা আনন্দ পান বাবা-মাও । তবে ছেলেকে সুস্থ না করতে পারার কষ্ট কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাঁদের । ছেলের চিকিৎসার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা ৷
হরিশ্চন্দ্রপুর-1 ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা সাজ্জাদ আলি । ভিনরাজ্যে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন । বর্তমানে কার্যত লকডাউন পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েছেন ৷ গ্রামের বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে ৷ স্ত্রী পারভিন বিবি গৃহবধূ । তাঁদের এক ছেলে এবং এক মেয়ে । মেয়ে আয়েশা বছর পাঁচেকের আর ছেলে পারভেজের বয়স সাত ৷ চার সদস্যের পরিবার নিয়ে সাজ্জাদ সংসার শুরু করেছিলেন ভিনরাজ্যেই ৷ পাঁচ বছর আগে দিল্লিতে থাকাকালীন জটিল রোগে আক্রান্ত হয় ছেলে পারভেজ । ছেলের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতাল, সেখানকার বেশ কিছু চিকিৎসকের কাছে যান সাজ্জাদ । কিন্তু কোনও ভাবেই ছেলেকে সুস্থ করতে পারেননি । জমানো টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাঁদের । মালদায় ফিরে ঠিকা শ্রমিকের কাজ শুরু করেন সাজ্জাদ । লকডাউনের পর সেই কাজও হারান তিনি ৷ টাকার অভাবে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় পারভেজের চিকিৎসা ।
সাজ্জাদ বলেন, "ছেলের হাত-পা কাজ করছে না । গত পাঁচ বছর ধরে এভাবেই রয়েছে ছেলে । উঠে বসতে, হাঁটতে পারে না ৷ সব সময় বিছানায় শুয়েই থাকে ৷ দিল্লিতে থাকাকালীন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি । টাকা-পয়সা শেষ হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফিরে আসি । এরপর দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা হয় । সেই সময় থেকে বাড়িতেই আটকে রয়েছি । শেষ পুঁজি থাকা পর্যন্ত ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে গিয়েছি । স্বাস্থ্যস্বাথী কার্ড থাকলেও কোনও ডাক্তার কথা শুনছেন না । এখন কাজ নেই ৷ টাকা নেই ৷ তাই ছেলের চিকিৎসাও করাতে পারছি না । মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি, ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক ।"
পারভিন বিবি বলেন, "পাঁচ বছর ধরে ছেলে বিছানায় পড়ে রয়েছে । যত দিন যাচ্ছে হাত-পা সরু হয়ে যাচ্ছে । দিল্লিতে থাকার সময় থেকে চিকিৎসা শুরু করেছি । কিন্তু ছেলেকে সুস্থ করতে পারিনি । চিকিৎসার জন্য সব টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে । লকডাউনের সময় থেকে স্বামীর উপার্জনও বন্ধ হয়ে গিয়েছে । এই পরিস্থিতিতে ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করছি ।"
ছোট্ট পারভেজের চিকিৎসার জন্য সরকারি সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন এই দুঃস্থ দম্পতি ৷ আশায় রয়েছেন, যদি ছেলেকে সুস্থ করা যায় ৷ যদি ছেলে হাঁটতে পারে ৷
আরও পড়ুন : মালদায় শুরু হল বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের টিকাকরণ কর্মসূচি