মালদা, 28 অগস্ট : কালিয়াচকে চারজনকে খুনের মামলায় দেহ উদ্ধারের 70 দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট জমা দিল পুলিশ । মামলার তদন্তকারী অফিসাররা জেলা আদালতে 273 পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছেন । এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত 19 বছরের আসিফ মহম্মদের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা ও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে । পুলিশের আশা, দ্রুত এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করা যাবে ।
গত 18 জুন রাতে কালিয়াচক থানার পুলিশ জানতে পারে, পুরোনো 16 মাইল গ্রামের বাসিন্দা, আসিফ মহম্মদ নিজের বাবা-মা, ছোট বোন ও ঠাকুমাকে খুন করে বাড়ি লাগোয়া গুদামঘরে মেঝের নিচে পুঁতে রেখেছে ৷ ঠান্ডা পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে, সেই পানীয় নিহত চারজনকে খাইয়েছিল আসিফ । একই পানীয় খাইয়েছিল তার দাদা আরিফ মহম্মদকেও । কিন্তু কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে যান আরিফ ৷ প্রাণে বেঁচে কলকাতায় চলে যান তিনি ৷ আর গ্রামমুখো হননি ৷ তাঁর দাবি, ভাই তাঁকেও খুন করার হুমকি দিয়ে রেখেছিল ৷ তাই তিনি এই ঘটনা কাউকে জানাননি ৷ শেষ পর্যন্ত আসিফ বাড়ি বিক্রির তোড়জোড় শুরু করতেই খোঁজ শুরু হয় তার বাবার ৷ খোঁজ পড়ে আরিফেরও ৷ তখনই নিজের মামাকে গোটা ঘটনা জানান আরিফ ৷ মামাই তাঁকে মালদা নিয়ে আসেন ৷ 18 জুন রাতে আরিফ কালিয়াচক থানায় গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলেন ৷ তাঁর বয়ানে পুলিশ জানতে পারে, গত 18 ফেব্রুয়ারি আসিফ, বাবা জাওয়াদ আলি (53), মা ইরা বিবি (41), ঠাকুমা আলেকজান বেওয়া (72) ও ছোট বোন আরিফা খাতুনকে (16) জলে ডুবিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে ৷ সেদিন রাতেই আসিফকে আটক করে পুলিশ । 19 জুন বাড়ি লাগোয়া নির্মীয়মাণ গুদামঘরের মেঝে খুঁড়ে উদ্ধার হয় চারজনেই পচাগলা দেহ ।
এই সংক্রান্ত খবর : কীভাবে খুন-কীভাবেই বা বাঁচল দাদা, ঘটনার পুনর্নির্মাণে দেখাল আসিফ
এই ঘটনায় জোরকদমে তদন্ত শুরু করে পুলিশ । ঘটনার পুনর্নির্মাণ সহ একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তদন্তকারীরা । ঘটনাস্থল ও আসিফদের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা হয় একাধিক নমুনা । তার মধ্যে কিছু ডিজিটাল প্রমাণও রয়েছে । আসিফের বন্ধুদের হেফাজত থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ । আসিফই নাকি সেসব বন্ধুদের কাছে রেখেছিল । তদন্তে আসিফের আরও অনেক বিষয় সামনে উঠে আসে । মামলায় 44 জন সাক্ষীর বক্তব্য নথিবদ্ধ করা হয় । তবে পুলিশের কাছে এই মামলার প্রধান সাক্ষী ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আরিফ মহম্মদ । মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় গতি আনার জন্য পুলিশের তরফে রাজ্যের কাছে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি নিয়োগের আর্জি জানানো হয় । সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে রাজ্য । ফলে দ্রুত এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হবে বলেই পুলিশের আশা ।
পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, “এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত আসিফ মহম্মদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির 302 ধারায় খুন, 307 ধারায় খুনের চেষ্টা ও 201 ধারায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে । তদন্তে 44 জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে । মামলায় স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করায় দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ হবে বলেই আশা করা হচ্ছে ।”