মালদা, 18 মে : ভিনরাজ্য থেকে শ্রমিকরা এসে দু'দিন গ্রামের আমবাগানে রাত কাটিয়েছিলেন ৷ তাঁদের মধ্যে একজনের শরীরে কোরোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে । এরপরই পুরাতন মালদা ব্লকের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ইংলিশটোলা গ্রামকে কনটেনমেন্ট জ়োন হিসেবে ঘোষণা করল পুলিশ-প্রশাসন । বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে পুরো গ্রাম ৷ আগামী 14 দিন বহিরাগতদের গ্রামে প্রবেশ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
ইংলিশটোলা গ্রামটি একেবারে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৷ গ্রামের পাশ দিয়ে গেছে আন্তর্জাতিক কাঁটাতারের বেড়া ৷ কয়েকদিন আগে মুম্বই থেকে গ্রামে ফেরে কয়েকজন । গ্রামবাসীদের চাপে একদিন তাঁরা গ্রামের আমবাগানে থাকতে বাধ্য হয় ৷ পরে স্থানীয় চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের কোয়ারানটিন সেন্টারে রাখা হয় তাঁদের ৷ জেলায় ফেরার পর মালদা শহরের গৌড়কন্যা বাস টার্মিনালে এই শ্রমিকদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ৷ পরে জানা যায়, এই পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে একজন কোরোনা পজ়িটিভ ৷ তড়িঘড়ি তাঁকে কোরোনা হাসপাতালে ভরতি করা হয় ৷ বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি ৷ তবে ওই শ্রমিকের সংস্পর্শে কারা কারা এসেছিল, তা এখনও জানা যায়নি । আতঙ্কে গ্রামের লোকজন বাজারে যাওয়া বন্ধ করে দেয় ৷ এমনকি এলাকার মুদির দোকানদার গ্রামবাসীদের সামগ্রী দিতেও অস্বীকার করে ৷ শেষমেশ আজ মালদা থানার পুলিশকে খবর দেয় গ্রামবাসীরা । এরপর গোটা গ্রামকে কনটেইনমেন্ট জ়োন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত সরকার বলেন, "এই গ্রামের আমবাগানে ভিনরাজ্য থেকে আসা শ্রমিকরা একরাত ছিলেন ৷ পরদিন তাঁদের স্থানীয় স্কুলে তৈরি কোয়ারানটিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানে একটি কোরোনা পজ়িটিভ কেস ধরা পড়েছে ৷ এরপর আজ পুলিশ প্রশাসন এসে এলাকাকে কনটেইনমেন্ট জ়োন হিসাবে ঘোষণা করল ৷ আমরা পুলিশকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি ৷"
মালদা থানার IC শান্তিনাথ পাঁজা বলেন, "ইন্দো-বাংলা সীমান্তের এই গ্রামে 14 মে এক কোরোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায় । আজ আমরা পুরো গ্রামকে কনটেইনমেন্ট জ়োন হিসাবে ঘোষণা করেছি ৷ গ্রামকে বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে ৷ পোস্টারও লাগানো হয়েছে । এই গ্রামে যাতে কেউ না ঢোকে, সেজন্য গ্রামবাসীদেরও আমরা সতর্ক করেছি ৷ কেউ যেন গুজব না ছড়ায়, সেবিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে ৷ ভিনরাজ্য থেকে আসা সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিককে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারানটিন সেন্টারে যেতে হবে ৷ কনটেইনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হলেও গ্রামবাসীরা জরুরি প্রয়োজনে বাজারে যেতে পারে ৷ কেউ যদি গ্রামবাসীদের প্রয়োজনীয় মালপত্র দিতে অস্বীকার করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে । "
তবে কোরোনা ধরা পড়ার চারদিনের মাথায় গ্রামকে কনটেইনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে গ্রামবাসীদের একাংশ ৷ তাঁদের প্রশ্ন, এই সিদ্ধান্ত নিতে এত দেরি হল কেন? এখনও জানা নেই, ওই পরিযায়ী শ্রমিকের সংস্পর্শে গ্রামের অন্য কেউ এসেছিল কি না । ওই আক্রান্তের মাধ্যমে আর কেউ কোরোনায় সংক্রমিত হয়েছে কি না তাও জানা নেই ৷ এসবের দায় কে নেবে?