মালদা, 26 মে : যশের ধাক্কা লাগেনি ৷ ভারী কিংবা অতি ভারী বৃষ্টিও হয়নি ৷ শুধুমাত্র গতকাল প্রাক নিম্নচাপের সামান্য বৃষ্টি আর আজ খানিকটা ৷ তাতেই বেহাল অবস্থা পুরাতন মালদার যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের থুকরাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের ৷ ওই গ্রামের রাস্তাটাই যে পাকা নয় ! গতকাল রাত থেকেই পিছল রাস্তায় আছাড় খাচ্ছেন মানুষজন ৷ আজ রাস্তা দিয়ে চলতে কোথাও গোড়ালি, কোথাও বা হাঁটু পর্যন্ত কাপড় তুলতে হচ্ছে ৷ ভরা জ্যৈষ্ঠে এমন পরিস্থিতি হলে আষাঢ়ে কী হবে ? তিতিবিরক্ত গ্রামবাসীরা আজ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ৷ কাদা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ৷ তবে পঞ্চায়েত প্রধানের আশ্বাস, এ’বছরই পাকা রাস্তা তৈরি হবে ৷
থুকরাবাড়ি গ্রামে আদিবাসী মানুষের সংখ্যাই বেশি ৷ হাতে গোনা দু’একটি পরিবার অন্য সম্প্রদায়ের ৷ জেলার একমাত্র অলচিকি স্কুল এই গ্রামেই ৷ রয়েছে একটি প্রাথমিক স্কুলও ৷ তবে করোনায় স্কুলঘরে তালা এক বছরের বেশি আগে থেকে ৷ এই গ্রামেরই এক কিলোমিটার রাস্তা নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগের অন্ত নেই ৷ অবশ্য শুধু রাস্তা নয়, সমস্যার তালিকায় রয়েছে পানীয় জলও ৷
কলেজ পড়ুয়া আদিত্য মাহাতো বলছেন, “22-23 বছর বয়স হল ৷ জন্মের পর থেকে রাস্তাটা এমনই দেখছি ৷ আশেপাশের কোনও গ্রামের রাস্তা কাঁচা নেই ৷ শুধু আমাদের গ্রামেই হয়নি ৷ রাস্তার জন্য আমরা কলেজ যেতে পারি না ৷ বিয়ে ভেঙে যায় ৷ হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে খাটিয়া ছাড়া উপায় নেই ৷ সময়মতো লোক না মিললে বাড়িতে মরা ছাড়া গতি নেই ৷ প্রসূতিদেরও চরম দশা ৷ অনেকবার পঞ্চায়েতে জানিয়েছি ৷ ভোটের আগে সব নেতারা এসে আশ্বাস দিয়েছিলেন ৷ এখন তাঁদের দেখা যায় না ৷ কবে পাকা রাস্তা পাব, জানি না ৷”
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত সুন্দরবনের সৌন্দর্য ফেরাতে যা জরুরি
আরেক গ্রামবাসী রমলা মাহাতো জানান, “রাস্তা নিয়ে বড় সমস্যা আমাদের ৷ প্রসূতিদের সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় না ৷ কোনও মেয়ের বিয়ের ঠিক করতে গেলেও রাস্তা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ৷ রাস্তার জন্য পাত্ররা মেয়েও দেখতে আসেন না ৷ এ ভাবেই বিশ বছর কেটে গেল ৷ এই গ্রামে নেতা-প্রধান বলে কেউ নেই ৷ ভোটে জিতে কেউ আমাদের দিকে তাকান না ৷”
পঞ্চায়েত প্রধান নুর হককে বিষয়টি জানাতেই তাঁর সহাস্য বক্তব্য, "আসলে রাস্তাটি অনেক লম্বা ৷ একসঙ্গে পুরো রাস্তার কাজ করা সম্ভব নয় ৷ চার দফায় ওই রাস্তার কাজ ধরা আছে ৷ তার মধ্যে 300 মিটার কংক্রিট রাস্তা করা হয়েছে ৷ কিছুটা বাকি রয়েছে ৷ 2021-22 সালের প্রকল্পে রাস্তাটি ধরা রয়েছে ৷ আশা করছি, এ’বছরের মধ্যেই ওই রাস্তার বাকি অংশের কাজ আমরা করে দেব ৷ দু’এক মাসের মধ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করব ৷"