ETV Bharat / state

কোরোনার জেরে সংকটে মালদার আম চাষ, ধাক্কা খাচ্ছে জেলার অর্থনীতি

একদিকে বন্ধ কীটনাশকের দোকান, অন্যদিকে কাজে যোগ দিতে পারছে না শ্রমিকরাও ৷ কোরোনা নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন কোথাও শ্রমিকদের জমায়েত হতে দিচ্ছে না ৷ তারই মূল্য চোকাতে হচ্ছে আমচাষিদের ৷

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Mar 29, 2020, 11:09 PM IST

Updated : Apr 24, 2020, 8:57 PM IST

মালদা, 29 মার্চ : কোরোনার দাপটে ভিত কেঁপে গিয়েছে দেশীয় অর্থনীতির ৷ কোরোনার থাবা বসেছে রাজ্যেও ৷ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মালদার আমচাষ৷ লকডাউনে জেরে জেলার আমবাগানগুলিতে কোনও পরিচর্যা করা যাচ্ছে না ৷ আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সবাইকে পথে বসতে হবে৷ ধাক্কা খাবে জেলার অর্থনীতির ভিত ৷ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে বাগান পরিচর্যাকারী শ্রমিকরা ৷ তাদের কাজ বন্ধ ৷ ঘরে খাবার নেই ৷ কীভাবে দিন কাটবে, তার উত্তর নেই কারও কাছেই ৷ কোরোনার ধাক্কায় মালদায় আম চাষে সংকট তৈরি হচ্ছে ৷ আর আমের উপরই নির্ভর করছে জেলার মূল অর্থনীতি ৷ স্বাভাবিকভাবেই ধাক্কা খেয়েছে জেলার অর্থনীতিও ৷

মালদা জেলার প্রধান অর্থনৈতিক ফসল আম ৷ জেলার 31 হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আমচাষ হয় ৷ আমের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভর করে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ ৷ এবার শীতের দাপট বেশি দিন থাকায় আমের মুকুল এসেছিল দেরিতে ৷ তবে দেরিতে হলেও প্রতিটি গাছ মুকুলে ভরে গিয়েছিল ৷ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল আমচাষের সঙ্গে জড়িত সকলেই ৷ কিন্তু মুকুল গাছে থাকতেই জেলা জুড়ে শুরু হয়েছিল অকাল বৃষ্টি ৷ কয়েক দফার বৃষ্টিতে জেলার প্রায় 50 শতাংশ গাছের মুকুলেই ছত্রাকের আক্রমণ ঘটেছিল বলে জানাচ্ছেন চাষিরা ৷ পরবর্তীতে শুকিয়ে যায় ফুল ৷ মুকুলে শুধুই কাঠি থেকে যায় ৷ বাকি মুকুল থেকে যেটুকু গুটি বেরিয়েছিল, তা বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন ছিল উপযুক্ত পরিচর্যা ৷ বিশেষত এই সময় গাছে জল ও বোরন জাতীয় তরল স্প্রে করার প্রয়োজন ছিল ৷ প্রয়োজন ছিল ছত্রাকনাশক প্রয়োগেরও ৷ কিন্তু কোরোনার লকডাউনে বাধা পড়েছে চাষিদের সেই কাজে ৷

একদিকে বন্ধ কীটনাশকের দোকান, অন্যদিকে কাজে যোগ দিতে পারছে না শ্রমিকরাও ৷ কোরোনা নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন কোথাও শ্রমিকদের জমায়েত হতে দিচ্ছে না ৷ তারই মূল্য চোকাতে হচ্ছে আমচাষিদের ৷

ইংরেজবাজার ব্লকের অমৃতি গ্রামের আমচাষি নাবিরুল শেখ ৷ তাঁর বাগানে রয়েছে প্রায় তিন'শো গাছ রয়েছে ৷ তিনি বলেন, “আম একেবারে শেষ হতে বসেছে ৷ এবার মুকুল থাকাকালীন বৃষ্টি হয়েছিল ৷ তাতে বেশিরভাগ মুকুল ভিজে, পরে ছত্রাকের আক্রমণে শুকিয়ে গেছিল ৷ যেটুকু মুকুল বেঁচেছিল, তা রক্ষা করতে প্রয়োজন ছিল পরিচর্যার৷ কিন্তু লকডাউনে সেই কাজ করা যাচ্ছে না ৷ শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না৷ এবার আমরা শেষ হয়ে যাব ৷ এখন আমরা গাছে প্রয়োগ করার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছি না ৷ দোকান খুলছে না ৷ গ্রেপ্তারির ভয়ে দোকানদাররা দোকান খুলছে না ৷ কম্পানিগুলিও ওষুধ ছাড়ছে না ৷ পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ ৷ এমন চলতে থাকলে আম টিকবে না ৷ যতটুকু আম পাওয়া যাবে, তা বিক্রি করার জন্য খদ্দেরও পাওয়া যাবে না ৷”

ক্ষতি হচ্ছে আমচাষের...

এবার এক হাজারেরও বেশি গাছ লিজ়ে নিয়ে চাষ শুরু করেছিলেন ওই এলাকারই আমচাষি আকতার মোমিন ৷ তার মুখেও সেই একই কথা ৷ বলেন, “এবার গাছে খুব ভাল মুকুল এসেছিল ৷ কিন্তু অকাল বৃষ্টিতে মুকুল প্রায় শেষ হয়ে গেছিল ৷ এখন গাছে আম নেই বললেই চলে ৷ যেটুকু আম এখনও গাছে আছে, তা বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই সময় স্প্রে করা খুব জরুরি ৷ কিন্তু লকডাউনে সেই কাজ কীভাবে করব? পরিচর্যার জন্য অন্তত পাঁচ থেকে সাতজন শ্রমিককে একসঙ্গে কাজ করতে হয় ৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা কাজে যেতে চাইছে না ৷ প্রশাসনও শ্রমিকদের একসঙ্গে কাজ করতে দিচ্ছে না ৷ ফলে আমরা ভীষণ সমস্যায় পড়ে গেছি ৷ যেটুকু আম এখনও আছে, পরিচর্যার অভাবে তাতে দাগ চলে এসেছে ৷ ওষুধ স্প্রে না করলে এই দাগ আটকানো যাবে না ৷"

অপর এক আম চাষি শামরুল মোমিন বলেন, “কোরোনা ও লকডাউনের জেরে বাগান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি ৷ আমরা কাজ করতে পারছি না ৷ তা ছাড়া পাঁচ-সাতজন শ্রমিককে একসঙ্গে কাজে যেতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ আমাদের খুব সমস্যা হয়ে গিয়েছে ৷ এ দিকে হাতে টাকাপয়সাও নেই ৷ কাজ না করলে খাবার জোগাড় করব কীভাবে? আমরা মূলত বাগানে স্প্রে করি ৷ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মধ্যেও আম বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ৷ মূলত ওষুধ স্প্রে করেই সেই আম টিকিয়ে রাখা যেত ৷ কিন্তু এখন সব বন্ধ ৷ আমচাষি ও বাগানের খদ্দেররাও ভীষণ সমস্যায় রয়েছে ৷” একই বক্তব্য আর এক শ্রমিক রজুল শেখের ৷ তিনি বলেন, “আমরা আমবাগানেই মূলত কাজ করি ৷ কিন্তু লকডাউনের জন্য বাগানে কাজ বন্ধ ৷ কী খাব, জানি না ৷ কোথাও লুকিয়ে কাজে গেলেও পুলিশ দেখতে পেলে তাড়া করছে ৷ রাস্তাতেও বেরোনো যাচ্ছে না৷ এমন চলতে থাকলে কী ভাবে চলব, বুঝতে পারছি না৷”

মালদার অর্থনীতির মূল ভিত্তি আম৷ আমের উপর এই জেলার প্রচুর মানুষ নির্ভর করে থাকে৷ কিন্তু এমন চলতে থাকলে জেলার অর্থনীতি শেষ হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করছেন আমচাষের সঙ্গে জড়িত মানুষদের একটা বড় অংশ ৷

মালদা, 29 মার্চ : কোরোনার দাপটে ভিত কেঁপে গিয়েছে দেশীয় অর্থনীতির ৷ কোরোনার থাবা বসেছে রাজ্যেও ৷ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মালদার আমচাষ৷ লকডাউনে জেরে জেলার আমবাগানগুলিতে কোনও পরিচর্যা করা যাচ্ছে না ৷ আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সবাইকে পথে বসতে হবে৷ ধাক্কা খাবে জেলার অর্থনীতির ভিত ৷ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে বাগান পরিচর্যাকারী শ্রমিকরা ৷ তাদের কাজ বন্ধ ৷ ঘরে খাবার নেই ৷ কীভাবে দিন কাটবে, তার উত্তর নেই কারও কাছেই ৷ কোরোনার ধাক্কায় মালদায় আম চাষে সংকট তৈরি হচ্ছে ৷ আর আমের উপরই নির্ভর করছে জেলার মূল অর্থনীতি ৷ স্বাভাবিকভাবেই ধাক্কা খেয়েছে জেলার অর্থনীতিও ৷

মালদা জেলার প্রধান অর্থনৈতিক ফসল আম ৷ জেলার 31 হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আমচাষ হয় ৷ আমের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভর করে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ ৷ এবার শীতের দাপট বেশি দিন থাকায় আমের মুকুল এসেছিল দেরিতে ৷ তবে দেরিতে হলেও প্রতিটি গাছ মুকুলে ভরে গিয়েছিল ৷ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল আমচাষের সঙ্গে জড়িত সকলেই ৷ কিন্তু মুকুল গাছে থাকতেই জেলা জুড়ে শুরু হয়েছিল অকাল বৃষ্টি ৷ কয়েক দফার বৃষ্টিতে জেলার প্রায় 50 শতাংশ গাছের মুকুলেই ছত্রাকের আক্রমণ ঘটেছিল বলে জানাচ্ছেন চাষিরা ৷ পরবর্তীতে শুকিয়ে যায় ফুল ৷ মুকুলে শুধুই কাঠি থেকে যায় ৷ বাকি মুকুল থেকে যেটুকু গুটি বেরিয়েছিল, তা বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন ছিল উপযুক্ত পরিচর্যা ৷ বিশেষত এই সময় গাছে জল ও বোরন জাতীয় তরল স্প্রে করার প্রয়োজন ছিল ৷ প্রয়োজন ছিল ছত্রাকনাশক প্রয়োগেরও ৷ কিন্তু কোরোনার লকডাউনে বাধা পড়েছে চাষিদের সেই কাজে ৷

একদিকে বন্ধ কীটনাশকের দোকান, অন্যদিকে কাজে যোগ দিতে পারছে না শ্রমিকরাও ৷ কোরোনা নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন কোথাও শ্রমিকদের জমায়েত হতে দিচ্ছে না ৷ তারই মূল্য চোকাতে হচ্ছে আমচাষিদের ৷

ইংরেজবাজার ব্লকের অমৃতি গ্রামের আমচাষি নাবিরুল শেখ ৷ তাঁর বাগানে রয়েছে প্রায় তিন'শো গাছ রয়েছে ৷ তিনি বলেন, “আম একেবারে শেষ হতে বসেছে ৷ এবার মুকুল থাকাকালীন বৃষ্টি হয়েছিল ৷ তাতে বেশিরভাগ মুকুল ভিজে, পরে ছত্রাকের আক্রমণে শুকিয়ে গেছিল ৷ যেটুকু মুকুল বেঁচেছিল, তা রক্ষা করতে প্রয়োজন ছিল পরিচর্যার৷ কিন্তু লকডাউনে সেই কাজ করা যাচ্ছে না ৷ শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না৷ এবার আমরা শেষ হয়ে যাব ৷ এখন আমরা গাছে প্রয়োগ করার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছি না ৷ দোকান খুলছে না ৷ গ্রেপ্তারির ভয়ে দোকানদাররা দোকান খুলছে না ৷ কম্পানিগুলিও ওষুধ ছাড়ছে না ৷ পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ ৷ এমন চলতে থাকলে আম টিকবে না ৷ যতটুকু আম পাওয়া যাবে, তা বিক্রি করার জন্য খদ্দেরও পাওয়া যাবে না ৷”

ক্ষতি হচ্ছে আমচাষের...

এবার এক হাজারেরও বেশি গাছ লিজ়ে নিয়ে চাষ শুরু করেছিলেন ওই এলাকারই আমচাষি আকতার মোমিন ৷ তার মুখেও সেই একই কথা ৷ বলেন, “এবার গাছে খুব ভাল মুকুল এসেছিল ৷ কিন্তু অকাল বৃষ্টিতে মুকুল প্রায় শেষ হয়ে গেছিল ৷ এখন গাছে আম নেই বললেই চলে ৷ যেটুকু আম এখনও গাছে আছে, তা বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই সময় স্প্রে করা খুব জরুরি ৷ কিন্তু লকডাউনে সেই কাজ কীভাবে করব? পরিচর্যার জন্য অন্তত পাঁচ থেকে সাতজন শ্রমিককে একসঙ্গে কাজ করতে হয় ৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা কাজে যেতে চাইছে না ৷ প্রশাসনও শ্রমিকদের একসঙ্গে কাজ করতে দিচ্ছে না ৷ ফলে আমরা ভীষণ সমস্যায় পড়ে গেছি ৷ যেটুকু আম এখনও আছে, পরিচর্যার অভাবে তাতে দাগ চলে এসেছে ৷ ওষুধ স্প্রে না করলে এই দাগ আটকানো যাবে না ৷"

অপর এক আম চাষি শামরুল মোমিন বলেন, “কোরোনা ও লকডাউনের জেরে বাগান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি ৷ আমরা কাজ করতে পারছি না ৷ তা ছাড়া পাঁচ-সাতজন শ্রমিককে একসঙ্গে কাজে যেতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ আমাদের খুব সমস্যা হয়ে গিয়েছে ৷ এ দিকে হাতে টাকাপয়সাও নেই ৷ কাজ না করলে খাবার জোগাড় করব কীভাবে? আমরা মূলত বাগানে স্প্রে করি ৷ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মধ্যেও আম বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ৷ মূলত ওষুধ স্প্রে করেই সেই আম টিকিয়ে রাখা যেত ৷ কিন্তু এখন সব বন্ধ ৷ আমচাষি ও বাগানের খদ্দেররাও ভীষণ সমস্যায় রয়েছে ৷” একই বক্তব্য আর এক শ্রমিক রজুল শেখের ৷ তিনি বলেন, “আমরা আমবাগানেই মূলত কাজ করি ৷ কিন্তু লকডাউনের জন্য বাগানে কাজ বন্ধ ৷ কী খাব, জানি না ৷ কোথাও লুকিয়ে কাজে গেলেও পুলিশ দেখতে পেলে তাড়া করছে ৷ রাস্তাতেও বেরোনো যাচ্ছে না৷ এমন চলতে থাকলে কী ভাবে চলব, বুঝতে পারছি না৷”

মালদার অর্থনীতির মূল ভিত্তি আম৷ আমের উপর এই জেলার প্রচুর মানুষ নির্ভর করে থাকে৷ কিন্তু এমন চলতে থাকলে জেলার অর্থনীতি শেষ হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করছেন আমচাষের সঙ্গে জড়িত মানুষদের একটা বড় অংশ ৷

Last Updated : Apr 24, 2020, 8:57 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.