মালদা, 14 ডিসেম্বর :ধানতলা গ্রামে তরুণী খুনের কিনারা করে ফেলল পুলিশ । উদ্ধার হল কোতওয়ালির ধানতলা গ্রামের আমবাগানে খুন হওয়া তরুণীর মোবাইল ফোনও ৷ পুলিশের জেরায় এই ঘটনায় ধৃত বাপন ঘোষ আগেই জানিয়েছিল, সে নিজেই ওই তরুণীকে খুন করে দেহ জ্বালিয়ে দিয়েছে ৷ পুলিশ শুক্রবার এই ঘটনার পুননির্মাণে জন্য অভিযুক্ত বাপনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় । বিকেলের দিকে মালদা রেঞ্জের DIG সহ অন্যান্য পুলিশকর্তাদের উপস্থিতিতে গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয় ।
বাপন ঘোষের খুনের ছক চমকে দিয়েছে পুলিশকেও ৷ শিলিগুড়ির তরুণীকে ডেকে এনে পরিকল্পনামাফিকই খুন করেছে সে ৷ খুনের পর প্রমাণ লোপাট করতে সে চেষ্টার কসুর রাখেনি ৷ সবচেয়ে জরুরি বিষয়, এই পরিকল্পনার কথা আগেও দুই বন্ধুকে সে জানিয়েছিল ৷ ঝুমা দে নামে ওই তরুণীকে খুন করার পর বাপন যোগাযোগ করে তার বাড়িতে ৷ সেই ঝুমার অভিভাবকদের পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেয় ৷ পুলিশ নিশ্চিত, এই ঘটনায় বাপনের সঙ্গে আর কেউ জড়িত নয় ৷ তাই তার বন্ধুদেরও ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এই মামলা থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে ভারতীয় দণ্ডবিধির 34 নম্বর ধারাও ৷ আজ পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তাঁরা দ্রুত আদালতে চার্জশিট পেশ করবেন৷ এদিকে আজ সন্ধেয় বাপনকে ঘটনাস্থানে নিয়ে যান পুলিশকর্তারা৷ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) দীপক সরকারের উপস্থিতিতে গোটা ঘটনা বিবৃত করে বাপন ৷
আজ বিকেলে এক সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “শিলিগুড়ির তরুণী ঝুমা দে খুনের ঘটনায় আমরা বাপন ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছিলাম৷ আমরা বাপনের কাছের লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি ৷ সব কিছু খতিয়ে দেখে আমরা জানতে পেরেছি, গত 2 ডিসেম্বর ঝুমা আর বাপন মালদা স্টেশনে দেখা করে৷ স্টেশন থেকে বেরিয়ে তারা কিছুটা ঘোরাঘুরি করে ৷ এরপর তারা ঘটনাস্থানের কাছে আমবাগানেই এক জায়গায় বসে মদ্যপান করে ৷ খাবারও খায় ৷ মদ্যপানের পর দু’জনের মধ্যে বিয়ের বিষয় নিয়ে ঝামেলা শুরু হয় ৷ ঝুমার সঙ্গে অন্য পুরুষের সম্পর্ক রয়েছে বলে বাপন সন্দেহ করত ৷ সব মিলিয়ে বচসা বাড়তে থাকে ৷ তখনই বাপন ঝুমার গলা টিপে তাকে খুন করে ৷ এরপর সেখানে ঝুমার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় ৷ তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, বাপন ঝুমাকে খুন করবে বলে আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিল ৷ সে ঘটনাস্থানে আগে থেকে পেট্রোল নিয়ে গিয়েছিল ৷ সে কথাচ্ছলে তার দুই বন্ধুকেও তার পরিকল্পনার বিষয়ে জানিয়েছিল ৷ আজ আমরা ঝুমার মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছি৷ একই সঙ্গে যে জায়গায় তারা বসে মদ্যপান করেছিল, সেখান থেকে মদের বোতল, প্লাস্টিকের গ্লাস ও খাবারের উচ্ছিষ্ট উদ্ধার করেছি ৷ এই ঘটনার তদন্তের স্বার্থে আমরা ওই এলাকার সমস্ত CCTV-র ফুটেজ খতিয়ে দেখেছি ৷
প্রশ্ন উঠছে অন্য জায়গায় ৷ পুলিশ সুপার জানাচ্ছেন, 2 ডিসেম্বর রাত 12টা থেকে 1টার মধ্যে বাপন ঝুমাকে খুন করে ৷ কিন্তু তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে 5 তারিখ সকালে ৷ যে জায়গায় মৃতদেহটি পড়ে ছিল, তার পাশেই রয়েছে একটি জলাশয় ৷ তাতে মাছ চাষ হয় ৷ সবচেয়ে বড়ো বিষয়, ওই আমবাগানে প্রচুর শিয়ালের বাস ৷ প্রশ্ন উঠছে, 3টি রাত চলে গেলেও কোনও শিয়াল কিংবা কুকুর ওই মৃতদেহ ছোঁয়নি কেন? 3 দিনেও মৃতদেহে পচন শুরু হয়নি কেন তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে ৷ এব্যাপারে পুলিশ সুপার বলেন, “পুড়ে যাওয়া কোনও লাশে পচন শুরু হতে কিছুটা বেশি সময় লাগে ৷ আমরা আরেকটা তথ্য পেয়েছি ৷ ওই গ্রামের এক মহিলা 5 তারিখ সকালের আগেও ঘটনাস্থানে মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন ৷ কিন্তু ভয়ে তিনি কাউকে কিছু জানাননি ৷ পেট্রোলের গন্ধ থাকা কোনও খাদ্যসামগ্রী সাধারণত শিয়াল, কুকুর কিংবা বিড়াল খায় না ৷"