মালদা, 1 জুন: ইটিভি ভারতে প্রকাশিত খবরের জেরে নিজের স্বপ্নপূরণে প্রশাসনকে পাশে পেল বিশেষভাবে সক্ষম ঈশ্বরী ৷ পুরাতন মালদা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতি মাসে তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে দু'হাজার টাকা করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেন ৷ উচ্চমাধ্যমিকে দুরন্ত সাফল্যের জন্য বৃহস্পতিবার তিনি ঈশ্বরীর বাড়িতে গিয়ে সংবর্ধনাও জানান ৷ তাঁর আরও আশ্বাস, ঈশ্বরীর হাতে তৈরি সামগ্রী যাতে সরকারি স্টলে জায়গা পায়, তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেন তিনি ৷
পুরাতন মালদা পৌরসভার 15 নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষপাড়ার বাসিন্দা ঈশ্বরী সাঁপুই ৷ 85 শতাংশ বিশেষভাবে সক্ষম তিনি ৷ বাবার অবর্তমানে মা স্থানীয় একটি হাইস্কুলে মিড-ডে মিলের রান্না আর বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালান ৷ মাসিক তিন হাজার টাকা উপার্জন ৷ সেই অর্থেই দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন তিনি ৷ অবশ্য ঈশ্বরী পাশে পেয়েছিলেন তাঁর শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বন্ধুদের ৷ এভাবেই জীবনের প্রথম বড় লড়াইয়ে 471 নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি ৷ কলা বিভাগে উচ্চমাধ্যমিকে 94.2 শতাংশ নম্বর প্রাপ্তি তাঁর ৷
ঈশ্বরীর এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে গত 26 মে তাঁকে নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইটিভি ভারত ৷ সেই খবর দেখে আজ ঈশ্বরীদের ভাঙাচোরা ঘরে সপারিষদ উপস্থিত হন পুরাতন মালদা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম ৷ তিনি ঈশ্বরী ও তাঁর মায়ের লড়াইয়ের কাহিনি শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন ৷
তিনি বলেন, "ঈশ্বরী 85 শতাংশ বিশেষভাবে সক্ষম ৷ অত্যন্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান ৷ তারপরেও জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য তাঁর যে লড়াই, তাঁকে সম্মান জানাতেই হয় ৷ ঈশ্বরীর সাফল্যের খবর জানতে পেরেই আমি তাঁদের বাড়িতে লোক পাঠিয়েছিলাম ৷ কিন্তু পরে ইটিভি ভারতে প্রকাশিত খবরে তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি শুনে বাড়িতে আর থাকতে পারলাম না ৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর পাশে দাঁড়াতে চাই ৷ ও যতদিন পড়াশোনা করবে, ততদিন প্রতি মাসে আমি ওর অ্যাকাউন্টে ব্যক্তিগতভাবে দু'হাজার টাকা পাঠিয়ে যাব ৷ আজ জানতে পারলাম, 85 শতাংশ প্রতিবন্ধী শংসাপত্র থাকা সত্ত্বেও ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় রাইটার পায়নি ৷ অশক্ত হাতে নিজেই পরীক্ষা দিয়েছে ৷ এটা আগে জানতে পারলে ওকে অবশ্যই সাহায্য করতাম ৷ ঈশ্বরীর হাতের কাজও বেশ ভালো ৷ ওর সামগ্রী যাতে বিভিন্ন মেলায় সরকারি স্টলে জায়গা পায় তার জন্য আমি জেলাশাসক এবং মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব ৷"
আরও পড়ুন : তিন হাজারি সংসারে নিত্য লড়াই, 85% শারীরিক প্রতিবন্ধকতা; তবু উচ্চমাধ্যমিকে 94 শতাংশ
উপ-পৌরপ্রধানকে পাশে পেয়ে আপ্লুত ঈশ্বরী ৷ তাঁর কথায়, "আজ আমি খুব খুশি ৷ উচ্চমাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পর আমি যে সবাইকে এভাবে পাশে পাব, তা আশা করিনি ৷ আজ ভাইস চেয়ারম্যান আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি আমাকে প্রতি মাসে দু'হাজার টাকা করে দেবেন ৷ তাঁর এই আশ্বাস শুনে আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি ৷ আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব ৷ আমি ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছি ৷ কিন্তু সবার আগে আমি ভালো মানুষ হতে চাই ৷"