মালদা, 20 জুন : রোজের মতো ভিড় বাজারে । সবজি কেনাবেচাতে ব্যস্ত মানুষজন । তার মধ্যে হঠাৎ শুরু চিৎকার চেঁচামেচি । নজরে পড়ল জোর করে তুলে দেওয়া হচ্ছে সবজি বিক্রেতাদের । এমনকী, এক ব্যবসায়ীকে ধাক্কা দিতে দেখা গেল ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যানকে । জানা গেল, বাজারটি অস্থায়ী । অনুমতি না থাকলেও রথবাড়ি সংলগ্ন 34 নম্বর জাতীয় সড়কের ফুটপাতে এভাবেই বসে সবজি বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা । বাজারের সমস্ত আবর্জনা থেকে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়ায় । আগেও একবার তুলে দেওয়া হয়েছিল এই অস্থায়ী বাজার । তবে লাভ কিছু হয়নি । ফের ফুটপাত ঘিরে ব্যবসা শুরু করেন সবজি বিক্রেতারা । আজ সকালে ফের ফুটপাত পুনরুদ্ধারের জন্য উচ্ছেদ অভিযান চালায় ইংরেজবাজার পৌরসভা ।
মালদা শহরের মধ্যে দিয়ে গেছে 34 নম্বর জাতীয় সড়ক ৷ প্রতিদিন এই জাতীয় সড়কে প্রায় 30 হাজার গাড়ি চলাচল করে ৷ রথবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় এই জাতীয় সড়কের ধারের ফুটপাতগুলি চলে গেছিল অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের দখলে ৷ এই ফুটপাত হয়ে উঠেছিল অস্থায়ী বাজার ৷ বাজারের সমস্ত আবর্জনা জমা হচ্ছিল জাতীয় সড়কে ৷ জমা আবর্জনা থেকে গোটা এলাকায় ছড়াচ্ছিল দুর্গন্ধ ৷ রাস্তা সরু হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ছিল ৷ এর আগেও পৌরসভার পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় ৷ তবে দু'দিনের মধ্যেই ফের জাতীয় সড়কটি অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায় ৷ তাই আজ সকালে ফের উচ্ছেদ অভিযান চালাল ইংরেজবাজার পৌরসভা ৷ উচ্ছেদ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন DSP (হেড কোয়ার্টার) বিপুল মজুমদার সহ অন্যান্য পুলিশ কর্তারা ৷ উচ্ছেদ অভিযান চলাকালীন বাজারের এক ব্যবসায়ীকে ধাক্কা দিতে দেখা যায় পৌরপ্রধান নীহাররঞ্জন ঘোষকে ।
নীহারবাবু বলেন, "রথবাড়ি সংলগ্ন জাতীয় সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বেআইনিভাবে কিছু অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছেন ৷ শুধু তাই নয় জাতীয় সড়ককে পরিত্যক্ত ফল-সবজি দিয়ে আবর্জনার স্তূপে পরিণত করছেন ৷ তাতে এলাকায় যেমন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, তেমনই শহরবাসীর রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনাও বাড়ছে ৷ জাতীয় সড়ক সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বাড়ছে ৷ আজ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় ৷ তবে এই অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে চাইলে তাঁদের ফুলবাড়ি বাজারে কিংবা 420 মোড়ের বাজারে জায়গা করে দেওয়া হবে ৷"
পৌরসভা প্রতিদিন অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের থেকে তোলা আদায় করে, অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগ প্রসঙ্গে নীহারবাবু বলেন, "আগে নিয়ম ছিল শহরের মধ্যে ব্যবসা করতে হলে পৌরসভাকে ট্যাক্স দিতে হবে ৷ দু'মাস আগে পৌরসভা থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল জাতীয় সড়কে অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের যেন টাকা না তোলা হয় ৷ যদি পৌরসভার নাম করে কেউ টাকা তুলে থাকে তবে অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা কেন পৌরসভায় বা চেম্বার অব কমার্সে অভিযোগ জানাননি ৷ আমার অনুমান, অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা মিথ্যে কথা বলে পৌরসভাকে বদনামের চেষ্টা করছে ৷ অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা যদি পৌরসভার নাম করে তোলা নেওয়ার অভিযোগ জানান, তবে যারা তোলা তুলছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব ৷"
এর আগেও পৌর কর্তৃপক্ষ এই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছিল ৷ দু'দিনের মধ্যেই ফের জাতীয় সড়ক দখল হয়ে যায় ৷ এবারেও কি সেই ছবি উঠে আসবে ? এই প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, "এটা শুধু পৌরসভার দায়িত্ব নয় ৷ যারা এই অভিযোগ করছেন তাঁরা নিজেদের দায়িত্ববোধটা এড়িয়ে যাচ্ছেন ৷ মানুষের সহযোগিতা না পেলে প্রতিদিন এত পুলিশ ফোর্স নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব নয় ৷ তবে এবারে প্রতিদিন ভোর পাঁচটা থেকে পুলিশ ও পৌরসভার কিছু কর্মী দু'টি সিফটে কাজ করবেন ৷ আমরা কোনও মতে জাতীয় সড়কে আর ব্যবসা করতে দেব না ৷"