মালদা, 13 ডিসেম্বর: লোকসভার জিরো আওয়ারে তখন মালদায় বিমানবন্দর নির্মাণের হয়ে সওয়ালই করছিলেন তিনি ৷ হঠাতই ছন্দপতন ৷ মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এল 2001 সালের 13 ডিসেম্বর হামলার স্মৃতি ৷ তবে এবার একেবারে অন্দরে ৷ দুই হানাদার ৷ হাতে বোমার মতো বস্তু ৷ তা ছুড়েও দেয় একজন ৷ হলুদ ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে লোকসভায় ৷ মুহূর্তের মধ্যে অধিবেশন স্থগিত করে দেন স্পিকার ৷ তখনও হতভম্ব1 বক্তব্য পেশ করতে থাকা উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ এদিন নিজের অভিজ্ঞতার কথা তিনি ভাগ করে নিলেন ইটিভি ভারতের সঙ্গে ৷
সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, “মালদায় কোনও এয়ারপোর্ট নেই ৷ জেলায় এয়ারপোর্ট গড়ার জন্য সাড়ে চার বছর ধরে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ৷ বিভিন্ন সময় বিষয়টি পার্লামেন্টে তুলেও ধরেছি ৷ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে আর্জি জানিয়েছি ৷ তাঁকে লিখিত আকারেও মালদায় এয়ারপোর্ট গড়ার প্রস্তাব জানিয়েছি ৷ আজ সংসদের জিরো আওয়ারে আমি এই বিষয়টি নিয়ে ফের বলার অনুমতি পেয়েছিলাম ৷ আমি মাত্র 50 সেকেন্ড মতো বক্তব্য রেখেছি ৷ হঠাৎ ডানদিক থেকে ধুপধাপ শব্দ কানে আসে ৷ কিন্তু আমি প্রথমে সেদিকে তাকাতে পারিনি ৷ আমার তখন নজর ছিল নিজের বক্তব্যের উপরেই ৷ কারণ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমাকে বক্তব্য শেষ করতে হবে ৷ খানিক পরেই দেখি, সামনের দিকে থাকা সাংসদরা দৌড়োদৌড়ি করছেন ৷ পাকড়ো, পাকড়ো বলে চিৎকার করছেন ৷ তখনই আমি ডানদিকে তাকাই ৷ দেখি, রেলিং থেকে একজন নীচে পড়ল ৷ তার হাতে থাকা একটি জিনিস থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল ৷ সে বলছিল, তানাশাহি নেহি চলেগি ৷ সব দেখেশুনে আমি কার্যত হতভম্ব হয়ে যাই ৷ কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না ৷ ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম ৷ ততক্ষণে বেলা দু'টো পর্যন্ত সংসদ স্থগিত হয়ে যায় ৷ ওই দু’জনকে নিরাপত্তারক্ষী আর সাংসদরা বাইরে নিয়ে চলে গিয়েছেন ৷”
উত্তর মালদার সাংসদ আরও বলেন, “খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ৷ এমন সাংঘাতিক ঘটনা আগে কখনও দেখা যায়নি ৷ আর তখন একমাত্র আমিই দাঁড়িয়েছিলাম ৷ বাকিরা সবাই বসে ছিলেন ৷ ফলে আমাকে সহজেই টার্গেট করা যেত ৷ আজকের সঙ্গে 22 বছর আগের ঘটনার কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা তদন্তের পরেই জানা যাবে ৷ ইতিমধ্যে স্পিকার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ৷ আমাদের দেশের মধ্যে এমন কলঙ্কিত ঘটনা যাতে বারবার না ঘটে তার জন্য প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত ব্যবস্থা নেবেন ৷” এদিনের দুই আগন্তুক এক বিজেপি সাংসদের পাস নিয়েই সংসদে প্রবেশ করে ৷ খগেনবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আজ যদি আমার এলাকার কেউ সদন দেখতে চায়, তবে কি আমি তাকে পাস দেব না ? নাকি পাস দেওয়ার পর জামা-প্যান্ট-জুতো খুলে তল্লাশি করব ! একজন সাংসদের পক্ষে এসব সম্ভব নাকি! আমার এলাকার লোক যদি সংসদ দেখতে চায়, তার সেই ইচ্ছে পূরণ করা আমার তো এক ধরনের কর্তব্য ৷ এক্ষেত্রে সাংসদের কী দোষ ! তবে তখন ভয়ে আমি কাঁপছিলাম ৷ এখন ধাতস্থ হয়েছি ৷”
আরও পড়ুন