মালদা, 12 ডিসেম্বর: চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে পা পিছলে লাইনে পড়ে গিয়েছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুরের এক পরিযায়ী শ্রমিক ৷ তাঁর পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে ৷ কাটা পড়ে দু’টি আঙুল ৷ প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল, সেখান থেকে তাঁকে চাঁচল সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখান থেকে তাঁকে রেফার করে দেওয়া হয় মালদা মেডিক্যালে ৷ সেখানেও চিকিৎসা না পেয়ে পূর্ণিয়ার একটি নার্সিংহোমে যান ৷ মাসখানেকের চিকিৎসায় আপাতত সুস্থ তিনি৷ চিকিৎসক তাঁকে ছুটিও দিয়ে দিয়েছেন৷ কিন্তু বিলের টাকা না পেলে রোগীকে ছাড়তে নারাজ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ৷ লাখখানেক টাকা কোথায় থেকে জোগাড় হবে, তা ভেবেই অকূল পরিবারের লোকজন৷ টাকা জোগাড় করতে এখন দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করছেন মা ও শাশুড়ি ৷
গণেশবাবুর স্ত্রী ও এক সন্তান এই মুহূর্তে পূর্ণিয়াতেই রয়েছেন ৷ আরেক ছেলে বাড়িতে ৷ তাঁর শাশুড়ি মৃদুলা দাস বলেন, "জামাই বাইরে কাজ করতে গিয়েছিল ৷ ফেরার সময় হরিশ্চন্দ্রপুরে দুর্ঘটনা ঘটে ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে ৷ এখানে চিকিৎসা না হওয়ায় ওকে পূর্ণিয়া নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ চিকিৎসায় সব টাকাপয়সা শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ ডাক্তার ছুটিও দিয়ে দিয়েছে ৷ কিন্তু নার্সিংহোমের বিলের টাকা না মিটিয়ে ওকে আসতে দিচ্ছে না ৷ 15 দিন আগে মেয়ে বলেছিল, নার্সিংহোমে 70 হাজার টাকা বিল বাকি আছে ৷ আর কত টাকা বিল হয়েছে জানি না ৷ এখন আমরা টাকা জোগাড় করে যাচ্ছি ৷ স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের কাগজ জমা দিয়েছি ৷ এখনও কার্ড হয়নি ৷ হাতজোড় করে সবাইকে বলছি, জামাই যখন প্রাণে বেঁচেই গিয়েছে তখন সবাই ওকে ঘরে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন ৷"
বিজেপির জেলা এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য রীতেশ আগরওয়ালার বক্তব্য, "স্বাস্থ্যসাথী কার্ড এই রাজ্যের বাইরে অচল ৷ সারা ভারতের মানুষের জন্য আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু হয়েছে ৷ এই কার্ড থাকলে আজ গণেশের এই অবস্থা হত না ৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়ুষ্মান ভারত কার্ড রাজ্যে চালু হতে দেয়নি ৷ স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রাজ্যের বাইরে তো দূরের কথা, পশ্চিমবঙ্গেও চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায় না ৷ নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই কার্ড চালু করেছেন ৷ বিজেপি গণেশ দাসের পাশে সবসময় রয়েছে ৷"
প্রসঙ্গত, হরিশ্চন্দ্রপুরের পিপলা গ্রামের বাসিন্দা বছর চল্লিশের গণেশ দাস ৷ পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক ৷ কিছুদিন আগে দিল্লিতে কাজ করতে গিয়েছিলেন ৷ কাজ শেষ করে ঘরে ফেরার ট্রেনে চেপে বসেন৷ খেয়াল করেননি, যে ট্রেনে তিনি চেপেছেন সেটা হরিশ্চন্দ্রপুর স্টেশনে দাঁড়ায় না৷ একেবারে মালদা টাউন স্টেশনে তার স্টপেজ৷ তাই হরিশ্চন্দ্রপুর স্টেশনে গতি কমতেই তিনি চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দেন ৷ তাতেই ঘটে বিপত্তি ৷
আরও পড়ুন: