মালদা, 10 ফেব্রুয়ারি: করোনায় শুধু মানুষের জীবন নয়, বিধ্বস্ত হয়েছিল ব্যবসা বাণিজ্যও ৷ ভাইরাসের দাপটে বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ৷ যার প্রভাব পড়েছিল মালদা জেলাতেও ৷ মহদিপুর স্থলবন্দর দিয়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য (India Bangladesh International Trade) ৷ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দুই দেশের মানুষের যাতায়াত ৷ করোনার দাপট কমায় ধীরে ধীরে সবকিছুই স্বাভাবিক হয়েছে ৷ কিছু আবার স্বাভাবিক হওয়ার পথে ৷ কিন্তু এই জেলা দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য এখনও আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি ৷ শুধু তাই নয়, এখনও বন্ধ হয়ে রয়েছে অভিবাসন ৷ ফলে দুই দেশের মানুষ মহদিপুর দিয়ে যাতায়াতও করতে পারছেন না ৷
এইসব সমস্যা খতিয়ে দেখতে উদ্যোগী হয়েছে দুই দেশের ব্যবসায়ী সংগঠন ৷ এগিয়ে এসেছে প্রশাসনও ৷ মহদিপুর স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে গতি ফিরিয়ে আনতে দুই দেশের ব্যবসায়ী সংগঠন ও প্রশাসনের উদ্যোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করা হল (Mahadipur Meeting for International Trade) ৷ মালদার জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়া, পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব, বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু, মহদিপুর ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রসেনজিৎ ঘোষ-সহ আরও অনেকে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ৷ বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি কমিশনারও ৷
বিএসএফ ও মালদা জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বৈঠকটি মহদিপুর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্রেই অনুষ্ঠিত হয় ৷ বৈঠকে দুই দেশের আমদানি ও রফতানিকারীরা নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন ৷ বৈঠক শেষে মালদা জেলা বণিকসভার সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, "এই বাণিজ্য বন্দর দিয়ে রফতানির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ছিল ৷ দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই সেই সমস্যা ভোগ করছিলেন ৷ বৈঠকে জেলাশাসক আবেদন জানিয়েছেন, যাতে এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন অন্তত 600 লরিবোঝোই পণ্য বাংলাদেশে পাঠানো যায় ৷ এ নিয়ে আমরা সবাই বসে আলোচনা করে সদর্থক কোনও ব্যবস্থা নেব ৷ ব্যবসা বাড়াতে প্রয়োজনে আমরা বাংলাদেশে গিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ী এবং প্রশাসনের সঙ্গেও আলোচনা করব ৷ বর্তমানে এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে মূলত পণ্য রফতানি করা হয় ৷ আমরা এবার বাংলাদেশ থেকে আমদানির কথাও ভাবছি ৷ সেদেশ থেকে ইলিশ মাছ, নকশি কাঁথা, কাঠের আসবাবপত্র, তাঁতের শাড়ি, মশারি, পোশাকের মতো সামগ্রী আমরা এদেশে আমদানি করতে চাই ৷ তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে চলেছি ৷ বর্তমানে এই বন্দরে অভিবাসনও বন্ধ হয়ে রয়েছে ৷ বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে ৷ আশা করছি, আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই ফের এখানে অভিবাসন চালু হয়ে যাবে ৷ আজকের বৈঠকে প্রায় 20 শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে ৷ আশা করা যায়, খুব দ্রুত বাকি 80 শতাংশ সমস্যাও মিটে যাবে ৷ করোনার কারণেই এই সমস্যাগুলি তৈরি হয়েছিল ৷"
আরও পড়ুন: চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত পরিদর্শনে ভুটানের বিদেশ মন্ত্রক
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি কমিশনার মনোজ কুমার বলেন, "আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের কিছু সমস্যা ছিল ৷ সেইসব সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে ৷ এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর পক্ষে সহায়ক হবে ৷ এই স্থলবন্দর দিয়ে আপাতত অভিবাসন বন্ধ রয়েছে ৷ তা ফের চালু করার কাজ চলছে ৷ আমার আশা, খুব তাড়াতাড়ি এখানে ফের অভিবাসন চালু হয়ে যাবে ৷"