মালদা, ৫ মার্চ: রোগীর প্রাণ বাঁচানোর স্বপ্ন নিয়ে ইউক্রেনে পাড়ি দিয়েছিল ছেলে। ছেলের স্বপ্নের উড়ানে পাখা মেলে ধরেছিল পরিবারও। তবে এখন পরিস্থিতি অন্য। যুদ্ধ ঘোষণার পর দিন থেকেই ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে পরিবারের। ছেলে কি পরিস্থিতিতে রয়েছে তা জানা নেই। তাঁদের শুধু একটাই চাওয়া, যেভাবেই হোক ঘরের ছেলে যেন ঘরে ফিরে আসে।
হরিশ্চন্দ্রপুরের মজ্জিড পাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ মমিনউদ্দিন। তিনি স্থানীয় একটি হাইস্কুলের শিক্ষক। তাঁর চার ছেলেমেয়ে। বড় ছেলে মাসুম হামিদ পারভেজ। ছোটো থেকেই মাসুমের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার। সেই স্বপ্ন নিয়েই তিনি ডাক্তারি পড়াশোনার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন ইউক্রেনের কিভে। মাসুম কিভ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। পরিবারের দাবি, ২৪ তারিখ যুদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পর থেকে মাসুম বন্ধুদের সঙ্গে স্থানীয় একটি বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যুদ্ধ পরিস্থিতির জেরে সেখানে নেটওয়ার্ক সমস্যা দেখা দেওয়ার কারণে মাসুমের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি পরিবারের। কী অবস্থায় রয়েছে ছেলে, জানা নেই পরিবারের ৷ ষেমন জানা নেই ছেলের খাবার, পানীয় জল জুটছে কিনা।(medical student in ukraine disconnect parents)
যুদ্ধে এক ভারতীয় পড়ুয়ার মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে গলায় যেন কাঁটা আটকে রয়েছে মমিনউদ্দিনদের। ভারত সরকার অপারেশন গঙ্গার মাধ্যমে বহু ভারতীয় নাগরিককে দেশে ফেরাচ্ছে। কিন্তু এখনও কোনওভাবে মাসুমের খোঁজ পাওয়া যায়নি। মমিনউদ্দিন সাহেব বলেন, “আমার ছেলে মাসুম কিভ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যখন যুদ্ধ শুরু হয়, সেই সময় ৪০-৫০ জনের সঙ্গে ছেলে হস্টেলের বাঙ্কারে আশ্রয় নেয়। সেই সময় তাঁরা বেশ আতঙ্কিত ছিল। পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল ছিল না। সেদিনই শেষ ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল। এরপর থেকে নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য ছেলের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। ছেলে কি পরিস্থিতিতে রয়েছে তা আমাদের জানা নেই। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ আমাদের ছেলেদের ফিরিয়ে আনুন। ছেলে ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত আমাদের অবস্থা বলে বোঝানো যাবে না।”
আরও পড়ুন : ইউক্রেনে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা রাশিয়ার
মাসুমের মা আমেদা খাতুন বলেন, “ছেলেকে পাশে না পাওয়া পর্যন্ত স্থির হয়ে থাকতে পারছি না। যতক্ষণ না ছেলের খোঁজ পাচ্ছি না, ততক্ষণ মনে হচ্ছে ছেলে যেন যুদ্ধক্ষেত্রে আটকে রয়েছে। দিনে দুপুরে খেতে পাচ্ছে কিনা তাও ঠিক জানা নেই। ছেলের জন্য দিন-রাত দোয়া করছি।”