মালদা, 30 জুন: মালদার আম বিদেশের বাজার মাতিয়েছে আগেই ৷ ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ এই জেলার মধুমাখা রসের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে ৷ এবার মালদার আমসত্ত্বও বিদেশে যাত্রা শুরু করেছে ৷ অবশ্য এখনও ইউরোপের কোনও দেশে তা রফতানি করা হয়নি ৷ তবে আশা করা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি ইউরোপিয়ানরাও এই আমসত্ত্বের স্বাদ নিতে পারবেন ৷ সেক্ষেত্রে আমসত্ত্বের প্রেমে পড়তে বিদেশিদের খুব বেশি দেরি নেই ৷ এই নিয়ে আশাবাদী রফতানিকারকরা ৷
এই প্রসঙ্গে মালদা ম্যাঙ্গো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলেন, "সাধারণত গাছ থেকে যে পাকা আম পড়ে যায় এবং ঝড়ে যে সব পাকা আম বাগানে পড়ে থাকে, সেসব আম দিয়েই আমাদের জেলায় উৎকৃষ্ট মানের আমসত্ত্ব তৈরি হয় ৷ এই আমসত্ত্ব প্রায় 2 হাজার টাকা কিলো দরে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে, এমনকি বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে ৷ কিন্তু রফতানির ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হল, মালদার আমসত্ত্বের কোনও ব্র্যান্ডিং নেই ৷ এবার জেলা প্রশাসন সেই উদ্যোগ নিয়েছে ৷ জেলার বিভিন্ন স্বনির্ভর দলের সঙ্গে গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের তৈরি আমসত্ত্বই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে বিদেশে রফতানি করা হবে ৷ প্রশাসনের এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হলে মালদার গ্রামীণ এলাকার অর্থনীতিরও অনেক পরিবর্তন ঘটবে ৷ লাভ হবে আমচাষি, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রফতানিকারকদেরও ৷"
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মালদায় প্রশাসনিক সভা করতে এসে মালদার আম থেকে তৈরি আমসত্ত্ব, আম দই এবং আম মিষ্টির বাজারিকরণ করার জন্য জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ তারপরই এই নিয়ে নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন ৷ প্রশাসনিক মহল সূত্রে খবর, মালদার আমসত্ত্ব দেশ তথা বিদেশের বাজারে পাঠাতে জেলাশাসক জেলা শিল্পকেন্দ্র এবং উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন ৷ তখনই উঠে আসে আমসত্ত্বের ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়টি ৷ বর্তমানে প্লাসটিকে মুড়েই আমসত্ত্ব বিক্রি হয় ৷ কিন্তু বিদেশের বাজারে এভাবে তা বিক্রি করা যাবে না ৷ তবু এবার দুবাইয়ে কিছু আমসত্ত্ব রফতানি হয়েছে ৷ সেখানকার মানুষের মধ্যে এর ভালো চাহিদাও লক্ষ্য করা গিয়েছে ৷ তবে বর্তমানে নির্বাচনী বিধি লাগু থাকায় এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি কোনও প্রশাসনিক কর্তা ৷ জানা গিয়েছে, নির্বাচন শেষ হলেই এই নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷
প্রশাসন সূত্রে খবর, মালদা জেলার 15টি ব্লকেই কমবেশি আমসত্ত্ব তৈরি হয় ৷ তবে আমসত্ত্বের হাব বলে জেলায় পরিচিত ইংরেজবাজারের কোতওয়ালি ও বিনোদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ৷ আমসত্ত্ব তৈরির পদ্ধতি খুব জটিল না হলেও তা একদিকে যেমন সময়সাপেক্ষ, অন্যদিকে কষ্টকর ৷
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত ফলন, প্রক্রিয়াজাত কাঁচা আমেরও দর পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা
কোতওয়ালির কল্যাণপুর গ্রামের কাকলি সরকার জানান, প্রথমে আমের বোঁটার অংশ কেটে প্রায় 30 মিনিট জলে ভিজিয়ে রাখতে হয় ৷ এরপর আমের খোসা ছাড়িয়ে ফের 15 মিনিট জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে ৷ তারপর আমের রস বের করে পরিষ্কার কাপড়ে ছেঁকে নিতে হবে ৷ এরপর বাঁশের তৈরি চালায় পরিষ্কার কাপড় পেতে তার উপর পাতলা করে আমের রসের প্রলেপ দিতে হবে ৷ একটি প্রলেপ পুরোপুরি শুকোনোর আগেই দ্বিতীয় প্রলেপ পড়া প্রয়োজন ৷
এভাবে প্রায় 25-30 বার প্রলেপ দেওয়ার পর কড়া রোদে সেটা অন্তত 15 দিন শুকোতে হবে ৷ প্রতি মুহূর্তে নজর রাখতে হবে যাতে আমসত্ত্বের উপর ধুলোবালি না পড়ে কিংবা কোনও পাখি না বসে ৷ পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে আমসত্ত্ব স্লাইস করে কেটে নিয়ে বাজারজাত করা হয় ৷ মূলত গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া আর ফজলি আমের আমসত্ত্বের চাহিদা বেশি ৷ তবে অন্যান্য আমের আমসত্ত্বও তৈরি করা হয় ৷ তৈরির পর মাস ছয়েক দর ভালো পাওয়া গেলেও তারপর আর পাওয়া যায় না ৷ কারণ, 6 মাস পর আমসত্ত্বের রং খারাপ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে পোকা লাগার সম্ভাবনাও থাকে ৷ তখন ফেলা দামেই আমসত্ত্ব বিক্রি করে দিতে হয় ৷