মালদা, 14 মার্চ : মালদার আমের খ্যাতি বিশ্বজোড়া । দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মালদার আম পাড়ি দেয় ইংল্যান্ড-সহ বেশ কিছু দেশে । আম বিদেশে পাড়ি দিলে আর্থিক দিক থেকে লাভবান হন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা । এসবছরও সেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন জেলার আম চাষিরা । কিন্তু, ক্রমাগত বৃষ্টির জেরে মাথায় হাত মালদার আম চাষিদের ৷ বৃষ্টিতে আম চাষের ক্ষতির কথা মেনে নিয়েছেন জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টরও ।
মালদায় প্রায় 31 হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয় । এবার দীর্ঘকালীন শীতের জন্য খানিকটা দেরিতে মুকুল এসেছে আমবাগানগুলিতে ৷ মুকুল আসার পরে মনে হয়েছিল, এবছর আমের ফলন চার লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে । তবে গতকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে মাথায় হাত পড়েছে আম চাষিদের । এর আগে গত সপ্তাহে একদিনের বৃষ্টিতেও ক্ষতি হয়েছিল আমের মুকুলের । অসময়ের এই বৃষ্টিতে আমচাষের যে ক্ষতি হল তা মেনে নিয়েছেন জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর কৃষ্ণেন্দু নন্দন ।
মালতিপুরের আম চাষি চুনিয়া মুর্মু বলেন, "হঠাৎ এই বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কা করছি । এবছর খুব সুন্দর মুকুল এসেছিল । কিন্তু এই বৃষ্টিতে সেই মুকুল টিকবে কি না তা নিয়ে চিন্তিত । আগে আমরা জৈবিক পদ্ধতিতে চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছিলাম । কিন্তু দু'দিন থেকে চলতে থাকা লাগাতার বৃষ্টিতে কী হবে তা বুঝে উঠতে পারছি না ।" আম বিশেষজ্ঞ কমলকৃষ্ণ দাস জানান, "গতকাল থেকে হঠাৎ বৃষ্টিতে মালদার আম চাষিরা চিন্তিত । চিন্তিত হওয়ার কারণও আছে । কারণ, যে মুকুল থেকে ফুল ফুটেছে । বৃষ্টিতে সেই ফুল থেকে মধু ঝরে যাচ্ছে । বেশ কিছু ফুলে আম ধরেছে ইতিমধ্যেই । সেই আমের গুটিতে ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকলেও ফুলের ক্ষতি হচ্ছে । এবছর শীতের কারণে মুকুল দেরিতে এসেছে । এখন সেই ফুল ফুটতে শুরু করেছে । তবে চাষিদের এখনই সেভাবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই । কারণ মালদায় প্রতি বছরই এমন তিন-চারটি দুর্যোগ হয়ে থাকে । যত তাড়াতাড়ি এই দুর্যোগ কেটে যাবে, মালদার আম চাষের জন্য ততই মঙ্গল হবে ।"
উদ্যানপালন দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর কৃষ্ণেন্দুবাবু জানান, "গতকাল থেকে বৃষ্টিতে আম চাষের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে । এখনও পর্যন্ত বৃষ্টি ছাড়েনি । ফলে আম চাষের ক্ষেত্রে ঠিক কতখানি ক্ষতি হল তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয় । তবে চাষিদের এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই । সাতদিন আগেও এক দফা বৃষ্টি হয়েছিল । পরে আবার রোদ উঠেছিল । এই বৃষ্টিও লাগাতার চলবে না হয়তো । তাই অকারণে আতঙ্কিত না হওয়ায় ভালো ৷"
উদ্যানপালন দপ্তর আম চাষিদের আতঙ্কিত হতে বারণ করলেও মালদা ম্যাঙ্গো মার্চেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলেন, "গতকাল থেকে হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে৷ এতে মুকুলে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ এবার গাছে ভালো মুকুল এসেছিল৷ ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল৷ কিন্তু অকাল বৃষ্টি সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিল বলেই মনে হচ্ছে৷ যেসব মুকুলে গুটি চলে এসেছে, বৃষ্টিতে তার উপকার হলেও যে মুকুলে ফুল ফুটে রয়েছে, তার ক্ষতি হবে৷ তবে দু’একদিনের মধ্যে রোদ না উঠলে গুটিতেও ছত্রাক ধরবে৷ কীভাবে এই সমস্যা দূর করা যায়, তা নিয়ে আমরা চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করব৷ এনিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে৷"