ETV Bharat / state

ব্রিটিশ শাসকদের টেবিলেও কদর পেত মালদার 'কুমারখা' - mango

মালদায় টেবিল ম্যাঙ্গো হিসাবে পরিচিত কুমারখা প্রজাতির আম ৷ মালদায় শুধুমাত্র হরিশ্চন্দ্রপুরের একটি অংশে কুমারখা আম পাওয়া যায় ৷ ব্রিটিশ শাসকদের খুশি করতে হরিশ্চন্দ্রপুরের তৎকালীন জমিদাররা স্থানীয় ল্যাংড়া প্রজাতির সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের কোনও এক ভাল প্রজাতির সংমিশ্রণে এই প্রজাতির চারা তৈরি করিয়েছিলেন ৷ ফলনের অভাবে ধুঁকতে থাকা কুমারখা আম চাষিরা চাইছেন সরকারি সাহায্য় ৷

ব্রিটিশ শাসকদের টেবিলেও কদর পেত মালদার 'কুমারখা'
ব্রিটিশ শাসকদের টেবিলেও কদর পেত মালদার 'কুমারখা'
author img

By

Published : Jun 8, 2021, 5:47 PM IST

মালদা, 8 জুন : বউভুলানি অথবা কুমারখা, অনেকেই বলতে পারবেন না এগুলি কিসের নাম ৷ এই দুটিই হল মালদার আমের প্রজাতি ৷ মালদায় উৎপাদিত প্রায় 350 প্রজাতির আমের মধ্যে অনেক নামই মানুষের অজানা ৷ সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে বহু আমের প্রজাতি ৷ কিন্তু তার মধ্যেও টিকে রয়েছে কুমারখা আম ৷ ব্রিটিশ আমল থেকেই টেবিল ম্যাঙ্গো হিসাবে তার সুনাম ৷ এখনও হরিশ্চন্দ্রপুরে এই প্রজাতির কিছু গাছ টিকে রয়েছে ৷ তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এবার এই প্রজাতির ফলন একেবারে তলানিতে ৷

মালদায় শুধুমাত্র হরিশ্চন্দ্রপুরের একটি অংশে কুমারখা আম পাওয়া যায় ৷ এই আমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক পুরনো গল্প ৷ ব্রিটিশ শাসকদের খুশি করতে হরিশ্চন্দ্রপুরের তৎকালীন জমিদাররা স্থানীয় ল্যাংড়া প্রজাতির সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের কোনও এক ভাল প্রজাতির সংমিশ্রণে এই প্রজাতির চারা তৈরি করিয়েছিলেন ৷ টেবিল ম্যাঙ্গো হিসাবে প্রথম থেকেই সমাদৃত কুমারখা আম ৷ পাতলা খোসা, আঁশ প্রায় নেই বললেই চলে ৷ ভরপুর মিষ্টি রসের এই আম মন জয় করে নিয়েছিল ব্রিটিশ শাসকদেরও ৷ তবে দুর্যোগে এবার এই আমের ফলন খুব কম ৷ গতবারও একই কারণে ফলন মার খেয়েছিল ৷ স্বাভাবিক অবস্থায় 400 থেকে 450 টন আম উৎপাদন হলেও এবার 100 টন আম উৎপাদন হবে কি না তা নিয়েই সন্দেহ সবার ৷


হরিশ্চন্দ্রপুরের মিশ্র জমিদার পরিবারের সদস্য চিরঞ্জীব মিশ্র এই আমের ইতিহাস সম্পর্কে বলেন, “আমাদের এখানে যত প্রজাতির আম উৎপাদন হয়, তার মধ্যে কুমারখা সব চেয়ে ভাল বলেই আমরা জানি ৷ এটা টেবিল ম্যাঙ্গো ৷ বাপ-ঠাকুরদাদের কাছে শুনেছি, ব্রিটিশ আমলে গভর্নরদের খুশি করতে সব জমিদাররাই জান লড়িয়ে দিতেন ৷ একই কারণে আমাদের পূর্বপুরুষরা উত্তরপ্রদেশের ভাল কোনও প্রজাতির সঙ্গে এখানকার ল্যাংড়া প্রজাতির সংমিশ্রণে এই বিশেষ প্রজাতির আমের চারা তৈরি করিয়েছিলেন ৷ এই আমের বয়স 100 বছরেরও বেশি পুরনো ৷ তখনকার জমিদাররা এই প্রজাতির গাছ এমন ভাবে লাগিয়েছিলেন, যাতে এই প্রজাতির গাছ বাইরে কোথাও না যায় ৷ এখনও হরিশ্চন্দ্রপুরের পিপলা এলাকাতেই এই আমের গাছ পাওয়া যায় ৷ আমাদের পরিবারের অনেক সদস্য দেশের বিভিন্ন রাজ্য, এমনকি বিদেশেও রয়েছে ৷ তাদের কাছে এই আম প্রতি বছর পাঠানো হয় ৷ বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও কুমারখা আম বিদেশে পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি ৷ সব জায়গাতেই এই আমের কদর রয়েছে ৷”

ব্রিটিশ শাসকদের টেবিলে কদর পাওয়া মালদার টেবিল ম্যাঙ্গোর কাহিনী


হরিশ্চন্দ্রপুরে কুমারখা বিশেষজ্ঞ আম চাষি হিসাবে খ্যাত অরবিন্দ দাস ৷ 20-22 বছর ধরে এই প্রজাতির আমের চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি ৷ তাঁর কথায়, “শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে দু’বছর ধরেই এই আমের ব্যবসায় ভাটা চলছে ৷ এবারও প্রায় তিন লাখ টাকা ক্ষতি হবে ৷ জানি না এই আমের ব্যবসা আর করতে পারব কি না ৷ হরিশ্চন্দ্রপুর ছাড়া আর কোথাও এই আম পাওয়া যায় না ৷ গোটা দেশে এই আম রফতানি করেছি ৷ এবার এলাকার লোকই এই আম খেতে পারবেন কি না সন্দেহ ৷ সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায়, তবে এই আম আমরা আরও ভাল করে উৎপন্ন করতে পারব ৷ দেশ-বিদেশে পাঠাতেও পারব ৷”

জেলা উদ্যানপালন দফতরের উপ অধিকর্তা কৃষ্ণেন্দু নন্দন জানান, হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার একটি অংশেই কুমারখা প্রজাতির আম উৎপন্ন হয় ৷ খুব ভাল এই প্রজাতির আম ৷ কুমারখা দেশ-বিদেশে পাঠাতে উৎসাহী একাধিক ব্যবসায়ী ৷ কিন্তু করোনার জন্য গত বছর থেকেই বাইরে আম সেভাবে পাঠানো যাচ্ছে না ৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কুমারখা রফতানির বিষয়ে ভাবা হবে ৷

আরও পড়ুন : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই পারেন ভারতকে রক্ষা করতে : অভিষেক

মালদা, 8 জুন : বউভুলানি অথবা কুমারখা, অনেকেই বলতে পারবেন না এগুলি কিসের নাম ৷ এই দুটিই হল মালদার আমের প্রজাতি ৷ মালদায় উৎপাদিত প্রায় 350 প্রজাতির আমের মধ্যে অনেক নামই মানুষের অজানা ৷ সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে বহু আমের প্রজাতি ৷ কিন্তু তার মধ্যেও টিকে রয়েছে কুমারখা আম ৷ ব্রিটিশ আমল থেকেই টেবিল ম্যাঙ্গো হিসাবে তার সুনাম ৷ এখনও হরিশ্চন্দ্রপুরে এই প্রজাতির কিছু গাছ টিকে রয়েছে ৷ তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এবার এই প্রজাতির ফলন একেবারে তলানিতে ৷

মালদায় শুধুমাত্র হরিশ্চন্দ্রপুরের একটি অংশে কুমারখা আম পাওয়া যায় ৷ এই আমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক পুরনো গল্প ৷ ব্রিটিশ শাসকদের খুশি করতে হরিশ্চন্দ্রপুরের তৎকালীন জমিদাররা স্থানীয় ল্যাংড়া প্রজাতির সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের কোনও এক ভাল প্রজাতির সংমিশ্রণে এই প্রজাতির চারা তৈরি করিয়েছিলেন ৷ টেবিল ম্যাঙ্গো হিসাবে প্রথম থেকেই সমাদৃত কুমারখা আম ৷ পাতলা খোসা, আঁশ প্রায় নেই বললেই চলে ৷ ভরপুর মিষ্টি রসের এই আম মন জয় করে নিয়েছিল ব্রিটিশ শাসকদেরও ৷ তবে দুর্যোগে এবার এই আমের ফলন খুব কম ৷ গতবারও একই কারণে ফলন মার খেয়েছিল ৷ স্বাভাবিক অবস্থায় 400 থেকে 450 টন আম উৎপাদন হলেও এবার 100 টন আম উৎপাদন হবে কি না তা নিয়েই সন্দেহ সবার ৷


হরিশ্চন্দ্রপুরের মিশ্র জমিদার পরিবারের সদস্য চিরঞ্জীব মিশ্র এই আমের ইতিহাস সম্পর্কে বলেন, “আমাদের এখানে যত প্রজাতির আম উৎপাদন হয়, তার মধ্যে কুমারখা সব চেয়ে ভাল বলেই আমরা জানি ৷ এটা টেবিল ম্যাঙ্গো ৷ বাপ-ঠাকুরদাদের কাছে শুনেছি, ব্রিটিশ আমলে গভর্নরদের খুশি করতে সব জমিদাররাই জান লড়িয়ে দিতেন ৷ একই কারণে আমাদের পূর্বপুরুষরা উত্তরপ্রদেশের ভাল কোনও প্রজাতির সঙ্গে এখানকার ল্যাংড়া প্রজাতির সংমিশ্রণে এই বিশেষ প্রজাতির আমের চারা তৈরি করিয়েছিলেন ৷ এই আমের বয়স 100 বছরেরও বেশি পুরনো ৷ তখনকার জমিদাররা এই প্রজাতির গাছ এমন ভাবে লাগিয়েছিলেন, যাতে এই প্রজাতির গাছ বাইরে কোথাও না যায় ৷ এখনও হরিশ্চন্দ্রপুরের পিপলা এলাকাতেই এই আমের গাছ পাওয়া যায় ৷ আমাদের পরিবারের অনেক সদস্য দেশের বিভিন্ন রাজ্য, এমনকি বিদেশেও রয়েছে ৷ তাদের কাছে এই আম প্রতি বছর পাঠানো হয় ৷ বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও কুমারখা আম বিদেশে পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি ৷ সব জায়গাতেই এই আমের কদর রয়েছে ৷”

ব্রিটিশ শাসকদের টেবিলে কদর পাওয়া মালদার টেবিল ম্যাঙ্গোর কাহিনী


হরিশ্চন্দ্রপুরে কুমারখা বিশেষজ্ঞ আম চাষি হিসাবে খ্যাত অরবিন্দ দাস ৷ 20-22 বছর ধরে এই প্রজাতির আমের চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি ৷ তাঁর কথায়, “শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে দু’বছর ধরেই এই আমের ব্যবসায় ভাটা চলছে ৷ এবারও প্রায় তিন লাখ টাকা ক্ষতি হবে ৷ জানি না এই আমের ব্যবসা আর করতে পারব কি না ৷ হরিশ্চন্দ্রপুর ছাড়া আর কোথাও এই আম পাওয়া যায় না ৷ গোটা দেশে এই আম রফতানি করেছি ৷ এবার এলাকার লোকই এই আম খেতে পারবেন কি না সন্দেহ ৷ সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায়, তবে এই আম আমরা আরও ভাল করে উৎপন্ন করতে পারব ৷ দেশ-বিদেশে পাঠাতেও পারব ৷”

জেলা উদ্যানপালন দফতরের উপ অধিকর্তা কৃষ্ণেন্দু নন্দন জানান, হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার একটি অংশেই কুমারখা প্রজাতির আম উৎপন্ন হয় ৷ খুব ভাল এই প্রজাতির আম ৷ কুমারখা দেশ-বিদেশে পাঠাতে উৎসাহী একাধিক ব্যবসায়ী ৷ কিন্তু করোনার জন্য গত বছর থেকেই বাইরে আম সেভাবে পাঠানো যাচ্ছে না ৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কুমারখা রফতানির বিষয়ে ভাবা হবে ৷

আরও পড়ুন : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই পারেন ভারতকে রক্ষা করতে : অভিষেক

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.