ETV Bharat / state

Human Touched Story: মৃত মায়ের মুখে জল দিতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সাফাইকর্মীর

author img

By

Published : May 31, 2023, 10:52 PM IST

এই ঘটনা আপনার চোখে জল আনবেই ৷ মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা থাকাটাই স্বাভাবিক ৷ কিন্তু মৃত্যুর পর মায়ের মুখে জল জিতে গিয়ে শোকে মৃত্যুবরণ করলেন ছেলেও ৷ এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল মালদা ৷

Etv Bharat
মৃত মায়ের মুখে জল দিতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু শোকবিহ্বল সাফাইকর্মীর

মালদা, 31 মে: বৃদ্ধাশ্রমের দুনিয়ায় নিজের জীবন দিয়ে মাতৃপ্রেমের উদাহরণ তৈরি করে গেলেন আবদুস সালাম ৷ বৃদ্ধা মায়ের মৃত্যুও তাঁর কাছে বিষতুল্য, হৃদয়বিদারী ৷ সেই শোকের ধাক্কা 48 বছর বয়সি সালামের হৃদযন্ত্র সহ্য করতে পারেনি ৷ মায়ের মৃতদেহ দেখেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি ৷ ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে মৃত্যু হয় তাঁরও ৷ মা-ছেলের মনের অটুট বাঁধনের সাক্ষী থেকেছে পুরাতন মালদা পৌরসভার 10 নম্বর ওয়ার্ডের পাড়া সামণ্ডি এলাকা ৷ সবাই চাইছে, সালামের কাহিনি থেকেই শিক্ষা নিক বর্তমান প্রজন্ম ৷ বৃদ্ধাশ্রম নয়, বৃদ্ধ বাবা-মা'র ঠিকানা হোক ছেলেমেয়েদের আট ফুট বাই আট ফুটের ঘরই ৷

পাড়া সামণ্ডি এলাকায় দীর্ঘদিনের বসবাস সালামদের ৷ তাঁর মা, প্রায় 80 বছর বয়সী হালিমা বেওয়া বেশ কয়েকবছর ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন ৷ বৃদ্ধা মায়ের সমস্ত দেখাশোনা করতেন ছেলে সালামই ৷ পেশায় পুরাতন মালদা পৌরসভার সাফাইকর্মী ছিলেন তিনি ৷ গতকাল বিকেলে মৃত্যু হয় মায়ের ৷ রীতি মেনে মৃত মায়ের মুখে জল দিতে যান সালাম ৷ শোকে তাঁর মুখের ভাষা হারিয়েছিল ৷ তাঁর চোখে জলও দেখতে পাননি কেউ ৷ মৃত মায়ের মুখে জল দেওয়ার সময়ই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি ৷ তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানীয় মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ চিকিৎসকরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে মালদা মেডিক্যালে রেফার করে দেন ৷ কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি ৷ ঘণ্টাখানেক পর মৃত্যু হয় সালামেরও ৷ এলাকায় মুনু নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি ৷

এই খবর চাউর হতেই পড়শিদের ভিড় আছড়ে পড়ে সালামদের বাড়িতে ৷ জোড়ামৃত্যুতে কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না পরিবারের কেউই ৷ এক প্রতিবেশী আবদুল রহমান বলেন, "মুনুর মা দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন ৷ মুনুই তাঁর দেখাশোনা করত ৷ শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধা মারা যান ৷ মায়ের মুখে জল দেওয়ার সময় শোক সহ্য করতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় মুনুও ৷ তাঁকে প্রথমে মৌলপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ পরে মালদা মেডিক্যালে ৷ সেখানেই ও মারা যায় ৷ মায়ের প্রতি ওর ভালোবাসা উদাহরণ হয়ে রইল ৷"

দিদার পর মামার এহেন মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে ভাগনি রোকেয়া বিবিকে ৷ বুধবারও সেই মানসিক আঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি তিনি ৷ তাঁর কথায়, "নানি 22 দিন ধরে প্রচণ্ড অসুস্থ ছিল ৷ নানি ছিল মামার প্রাণ ৷ মামাই তাঁর সব কিছু করত ৷ গতকাল নানির মৃত্যুশোক মামা সহ্য করতে পারেনি ৷ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মামাও মারা যায় ৷ আজ অনেক ছেলেমেয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখে না ৷ বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয় ৷ মারা গিয়েও মামা তাঁদের বার্তা দিয়ে গেল ৷ মামা খুব বেশি শিক্ষিত ছিল না ৷ পৌরসভার সাফাইকর্মী ছিল ৷ রাতে টোটো চালাত ৷ কিন্তু জীবনের শিক্ষায় মামা অনেকের থেকে বেশি শিক্ষিত ছিল ৷"

সালামের এমন মৃত্যুতে হতবাক পুরাতন মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষও ৷ তাঁর বক্তব্য, "মায়ের সঙ্গে সন্তানের কতটা আত্মিক যোগ থাকলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে ! মাতৃবিয়োগের যন্ত্রণায় আমাদের পৌরসভার সাফাইকর্মী সালাম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৷ বর্তমান সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই মায়েদের আমরা উপেক্ষিত হতে দেখেছি ৷ সেই সময় সালামের মৃত্যু সত্যিই ব্যতিক্রমী ৷ আমরা তাঁর পরিবারের পাশে আছি ৷ আগামীতেও থাকব ৷"

আরও পড়ুন : রিমা-রিয়াকে খড়কুটো করে বাঁচছেন 'অনাথ' বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা, চর্চায় আসানসোলে বোনেদের তৈরি বৃদ্ধাশ্রম

নচিকেতার লেখায় বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মা চেয়েছিলেন 100 বছর বাঁচতে ৷ স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁর 59 বছরের খোকাকে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের একই ঘরে পাশাপাশি থাকবেন ৷ বাস্তবের সালাম যেন সময়কে থমকে দিয়েছেন মায়ের সঙ্গে নিজে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়ে ৷

মালদা, 31 মে: বৃদ্ধাশ্রমের দুনিয়ায় নিজের জীবন দিয়ে মাতৃপ্রেমের উদাহরণ তৈরি করে গেলেন আবদুস সালাম ৷ বৃদ্ধা মায়ের মৃত্যুও তাঁর কাছে বিষতুল্য, হৃদয়বিদারী ৷ সেই শোকের ধাক্কা 48 বছর বয়সি সালামের হৃদযন্ত্র সহ্য করতে পারেনি ৷ মায়ের মৃতদেহ দেখেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি ৷ ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে মৃত্যু হয় তাঁরও ৷ মা-ছেলের মনের অটুট বাঁধনের সাক্ষী থেকেছে পুরাতন মালদা পৌরসভার 10 নম্বর ওয়ার্ডের পাড়া সামণ্ডি এলাকা ৷ সবাই চাইছে, সালামের কাহিনি থেকেই শিক্ষা নিক বর্তমান প্রজন্ম ৷ বৃদ্ধাশ্রম নয়, বৃদ্ধ বাবা-মা'র ঠিকানা হোক ছেলেমেয়েদের আট ফুট বাই আট ফুটের ঘরই ৷

পাড়া সামণ্ডি এলাকায় দীর্ঘদিনের বসবাস সালামদের ৷ তাঁর মা, প্রায় 80 বছর বয়সী হালিমা বেওয়া বেশ কয়েকবছর ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন ৷ বৃদ্ধা মায়ের সমস্ত দেখাশোনা করতেন ছেলে সালামই ৷ পেশায় পুরাতন মালদা পৌরসভার সাফাইকর্মী ছিলেন তিনি ৷ গতকাল বিকেলে মৃত্যু হয় মায়ের ৷ রীতি মেনে মৃত মায়ের মুখে জল দিতে যান সালাম ৷ শোকে তাঁর মুখের ভাষা হারিয়েছিল ৷ তাঁর চোখে জলও দেখতে পাননি কেউ ৷ মৃত মায়ের মুখে জল দেওয়ার সময়ই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি ৷ তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানীয় মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ চিকিৎসকরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে মালদা মেডিক্যালে রেফার করে দেন ৷ কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি ৷ ঘণ্টাখানেক পর মৃত্যু হয় সালামেরও ৷ এলাকায় মুনু নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি ৷

এই খবর চাউর হতেই পড়শিদের ভিড় আছড়ে পড়ে সালামদের বাড়িতে ৷ জোড়ামৃত্যুতে কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না পরিবারের কেউই ৷ এক প্রতিবেশী আবদুল রহমান বলেন, "মুনুর মা দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন ৷ মুনুই তাঁর দেখাশোনা করত ৷ শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধা মারা যান ৷ মায়ের মুখে জল দেওয়ার সময় শোক সহ্য করতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় মুনুও ৷ তাঁকে প্রথমে মৌলপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ পরে মালদা মেডিক্যালে ৷ সেখানেই ও মারা যায় ৷ মায়ের প্রতি ওর ভালোবাসা উদাহরণ হয়ে রইল ৷"

দিদার পর মামার এহেন মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে ভাগনি রোকেয়া বিবিকে ৷ বুধবারও সেই মানসিক আঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি তিনি ৷ তাঁর কথায়, "নানি 22 দিন ধরে প্রচণ্ড অসুস্থ ছিল ৷ নানি ছিল মামার প্রাণ ৷ মামাই তাঁর সব কিছু করত ৷ গতকাল নানির মৃত্যুশোক মামা সহ্য করতে পারেনি ৷ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মামাও মারা যায় ৷ আজ অনেক ছেলেমেয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখে না ৷ বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয় ৷ মারা গিয়েও মামা তাঁদের বার্তা দিয়ে গেল ৷ মামা খুব বেশি শিক্ষিত ছিল না ৷ পৌরসভার সাফাইকর্মী ছিল ৷ রাতে টোটো চালাত ৷ কিন্তু জীবনের শিক্ষায় মামা অনেকের থেকে বেশি শিক্ষিত ছিল ৷"

সালামের এমন মৃত্যুতে হতবাক পুরাতন মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষও ৷ তাঁর বক্তব্য, "মায়ের সঙ্গে সন্তানের কতটা আত্মিক যোগ থাকলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে ! মাতৃবিয়োগের যন্ত্রণায় আমাদের পৌরসভার সাফাইকর্মী সালাম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৷ বর্তমান সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই মায়েদের আমরা উপেক্ষিত হতে দেখেছি ৷ সেই সময় সালামের মৃত্যু সত্যিই ব্যতিক্রমী ৷ আমরা তাঁর পরিবারের পাশে আছি ৷ আগামীতেও থাকব ৷"

আরও পড়ুন : রিমা-রিয়াকে খড়কুটো করে বাঁচছেন 'অনাথ' বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা, চর্চায় আসানসোলে বোনেদের তৈরি বৃদ্ধাশ্রম

নচিকেতার লেখায় বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মা চেয়েছিলেন 100 বছর বাঁচতে ৷ স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁর 59 বছরের খোকাকে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের একই ঘরে পাশাপাশি থাকবেন ৷ বাস্তবের সালাম যেন সময়কে থমকে দিয়েছেন মায়ের সঙ্গে নিজে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়ে ৷

For All Latest Updates

TAGGED:

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.