মালদা, 20 সেপ্টেম্বর : ইচ্ছে থাকলে যে উপায় হয়, তা আরও একবার প্রমাণ করল মালদার (Malda) একটি গ্রামীণ স্কুলের পড়ুয়ারা ৷ জাতীয় স্তরের শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতায় রাজ্যের একমাত্র প্রতিনিধি হয়ে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছে তারা ৷ শুধু পড়ুয়ারাই নয়, ওই মঞ্চে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন স্কুলের এক শিক্ষকও ৷ এই মুহূর্তে স্কুলে এখন শরতের খুশির হাওয়া ৷ ইটিভি ভারতের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই ছবি ৷
16 থেকে 18 সেপ্টেম্বর উত্তর প্রদেশের (Uttar Pradesh) প্রতাপগড়ে 16তম জাতীয় ম্যাথমেটিক্স কনভেশন (Mathematics Convention) এবং রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হয় ৷ দেশের 26টি রাজ্য থেকে বিভিন্ন স্কুল এই কনভেনশনে অংশগ্রহণ করে ৷ এর উদ্যোক্তা ছিল অল ইন্ডিয়া রামানুজম ম্যাথ ক্লাব ও ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ টিচার সায়েন্টিস্ট ৷
উত্তর প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কনভেনশনের উদ্বোধন করেন ৷ প্রধান অতিথি ছিলেন দেশের আইআইটি ইঞ্জিনিয়ার তৈরির কারিগর আনন্দ কুমার ৷ গোটা দেশ থেকে প্রচুর নামি বিজ্ঞানী, শিক্ষক, ক্যারিয়ার কাউন্সেলর-সহ আরও অনেকে এই কনভেনশনে অংশ নেন ৷
সেখানে এরাজ্যের একমাত্র প্রতিনিধি ছিল ইংরেজবাজারের শোভানগর হাইস্কুল ৷ দেশের অসংখ্য পড়ুয়াদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাহিরুজ্জামান, মিসবাউলরা পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছে ৷ তাৎক্ষণিক বক্তৃতায় প্রথম স্থান পেয়েছেন স্কুলের শিক্ষক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ও ৷ এই শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে গর্বিত গোটা স্কুল ৷ এই গর্ব রাজ্যের মুকুটেও নতুন পালক ৷
শিক্ষক আর পড়ুয়াদের সঙ্গে সেই জাতীয় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ড. হরিস্বামী দাস ৷ তিনি বলছেন, “26টি রাজ্যের কনভেশনে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি শুধুমাত্র আমরা ৷ এটা ভেবেই খুব গর্ববোধ করেছিলাম ৷ সেখানে অঙ্কের উপর নানা প্রতিযোগিতা হয়েছিল ৷ স্কুলের চার ছাত্র ও তাদের প্রশিক্ষক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় সেখানে আমাদের স্কুলের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ৷ দেশের নামিদামি ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে আমাদের স্কুলের ছাত্ররা যেভাবে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেছে, তাতে আমি গর্বিত ৷ এতদিন আমাদের ছেলেরা জেলা ও রাজ্যস্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে ৷ সফলও হয়েছে ৷ কিন্তু এত বড় মঞ্চে তারা প্রথমবার প্রতিনিধিত্ব করল ৷ সোমনাথবাবুও তাৎক্ষণিক বক্তৃতায় প্রথম হয়েছেন ৷ আমরা খুব গর্বিত ৷”
স্কুলের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক সোমনাথবাবু বলেন, “কনভেনশনে দেশের 26টি রাজ্যের প্রতিনিধিরা ছিলেন ৷ প্রচুর ছাত্রছাত্রীও ছিল ৷ ওই মঞ্চে ক্রিপ্টোগ্রাফি অ্যান্ড ম্যাথমেটিক্সের উপর তাৎক্ষণিক বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ হয় আমার ৷ তাতে আমি এই বিষয়ের উপর প্রথম হয়েছি ৷ ছাত্রাবস্থায় এত বড় আসরে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাইনি ৷ শিক্ষক হয়ে সেই সুযোগ পেলাম৷ অপূর্ণতা এবার পূর্ণ হল ৷ স্কুলের পড়ুয়াদের আমরা সবসময় জাতীয় স্তরের বিভিন্ন পরীক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছি৷ আশা করছি, আগামীতে পড়ুয়ারা দেশের কাছে এই স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করবে ৷”
প্রতাপগড়ে পড়ুয়াদের টিম লিডার ছিল নবম শ্রেণির মিসবাউল হক ৷ নিজের অভিজ্ঞতার কথা ইটিভি ভারতকে জানায় সে ৷ জামাকাপড় রাখা নিয়ে ভিনরাজ্যের পড়ুয়াদের সঙ্গে মন কষাকষির কথাও তার গলায় উঠে আসে ৷ সে বলে, “আড়াই মাস আগে জানতে পারি, প্রতাপগড়ে অঙ্কের কনভেনশনে যেতে হবে ৷ সেখানে কেমন প্রশ্ন হবে, তার কিছু ইঙ্গিত আমাদের দেওয়া হয়েছিল ৷ সেসবের কিছু আমাদের সিলেবাসে নেই ৷ প্রস্তুতির হাতিয়ার হয়ে ওঠে ইউটিউব আর স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক সামাদ স্যার ৷ ভালো প্রস্তুতি নিয়েই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম ৷”
শোভানগর হাইস্কুলের বেশিরভাগ পড়ুয়াই গঙ্গা ভাঙন (Erosion of Ganges) উদ্বাস্তু পরিবারের ৷ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া ৷ যেমন বিলাস ঘোষের বাবা সাইকেল সারানোর মিস্ত্রি ৷ মহিরুজ্জামানের বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৷ শেখ নবিদুল হোসেনের বাবা মাছের ব্যবসা করেন ৷ তারাই জাতীয় মঞ্চে মুখ উজ্জ্বল করেছে স্কুলের, এই জেলার, এমনকি রাজ্যেরও ৷ রাজ্যের শিক্ষাঙ্গন নিয়ে যখন গোটা দেশেই নানা প্রশ্ন উঠছে, ঠিক সেই সময় এই স্কুলের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা যেন কিছুটা ঠান্ডা হাওয়ার ঝলক এনে দিলেন ৷
আরও পড়ুন : পরিবেশ নিয়ে গবেষণার জন্য বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন মালদার অন্বেষা