ETV Bharat / state

Covid Vaccine : করোনা টিকার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন গ্রামীণ মালদার মানুষ - CoWIN App

কো-উইন (CoWIN) অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া মিলবে না করোনার টিকা (Covid Vaccine) ৷ ফলে সমস্যায় পড়েছেন গ্রামীণ সাধারণ মানুষ ৷ অনেকেই জানেন না অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের সঠিক পদ্ধতি ৷ একই অবস্থা মালদা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজনের ৷ সেখানে স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্যই নেই অনেক দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের ৷

মালদায় করোনার ভ্যাকসিন
মালদায় করোনার ভ্যাকসিন
author img

By

Published : Jun 7, 2021, 9:03 PM IST

Updated : Jun 8, 2021, 5:20 PM IST

মালদা, 7 জুন : করোনার দাপট অব্যাহত ৷ এগিয়ে আসছে তৃতীয় ঢেউ ৷ জীবন বাঁচাতে টিকাই সম্বল বলে বারবার বার্তা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরাও ৷ মালদা জেলায় টিকাকরণের হারও আশাপ্রদ ৷ এখন 18 থেকে 44 বছর বয়সীদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে জেলায় ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও আগামী তিন থেকে চারমাসের মধ্যেও প্রতিটি জেলাবাসী টিকা পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে খোদ প্রশাসনেরই ৷ এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয়েছে, অ্যাপের মাধ্যমে সবাইকে টিকা নিতে হবে ৷ টিকা নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের প্রথমে নিজেদের স্মার্টফোনে কো-উইন অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে ৷ সেখানে নির্দিষ্ট জায়গায় ইচ্ছুকদের নাম ও সচিত্র পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে ভ্যাকসিন স্লট নিতে হবে ৷ নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের কোভিড ভ্যাকসিন নিতে হবে ৷

সমস্যা অন্য জায়গায় ৷ পরিসংখ্যান বলছে, এই মুহূর্তে মাত্র 42 শতাংশ ভারতবাসী স্মার্টফোন ব্যবহার করেন ৷ 2025 সাল নাগাদ সেই হিসাবটা 51 শতাংশে দাঁড়াতে পারে ৷ তবে গত এপ্রিল পর্যন্ত দেশের 86.66 শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছেন ৷ অর্থাৎ 44 শতাংশের বেশি সংখ্যক মানুষের হাতে এখনও স্মার্টফোন নেই ৷ ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে গ্রামীণ এলাকার প্রায় 59 শতাংশ মানুষও রয়েছে ৷ প্রশ্ন উঠেছে, যাঁদের এখনও মোবাইল ফোন নেই, অথবা মোবাইল ফোন থাকলেও স্মার্টফোন নেই তাঁরা কী করে ভ্যাকসিন নেবেন ৷ আবার এমনও অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁদের স্মার্টফোন থাকলেও তার ব্যবহার জানেন না ৷ অনেকেই ততটা শিক্ষিতও নন ৷ তাঁরাই বা কীভাবে ভ্যাকসিন নেওয়ার এই জটিল প্রক্রিয়া পেরোতে পারবেন ৷ উত্তর জানা নেই কারও ৷

করোনার ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে মানুষকে ৷ সেই তালিকায় রয়েছে মালদার প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামবাসীরা ৷

সমস্যা আর সমাধানের রাস্তা খুঁজতে যাওয়া হয়েছিল পুরাতন মালদার আমতলা গ্রামে ৷ গ্রামে আদিবাসী মানুষের সংখ্যা বেশি ৷ এখন তাঁদের অনেক ছেলেমেয়েই বই-খাতার গন্ধ শোঁকে ৷ তবে এখনও অনেকেই অশিক্ষার অন্ধকারে ৷ গ্রামের বাসিন্দা জিতেন কুড়োল মহারাষ্ট্রে শ্রমিকের কাজ করেন ৷ করোনাকালে মাস তিনেক আগে বাড়ি এসে আর কাজের জায়গায় ফিরতে পারেননি ৷ তিনি মহারাষ্ট্রেই ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৷ কিন্তু বাড়ির বাকি ছ'জন পাননি ৷ তিনি বলেন, "কোম্পানি থেকে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করায় আমি তা নিতে পেরেছি ৷ এখন শুনছি মোবাইলে অ্যাপের মাধ্যমে সবাইকে টিকা নিতে হবে ৷ আমার স্মার্টফোন নেই ৷ কীভাবে বাড়ির লোকজন ভ্যাকসিন নেবে জানি না ৷ সরকারের তরফে গ্রামের স্কুলে ক্যাম্প করে সবাইকে টিকা দেওয়া হলে ভাল হয় ৷"

গ্রামের মাতব্বর বিশ্বনাথ মণ্ডলও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ৷ তিনি বলেন, "শুধুমাত্র যারা স্থানীয় সিল্ক ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন, তাঁরাই ভ্যাকসিন পেয়েছে ৷ আর কেউ টিকা পায়নি ৷ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য সরকার যে প্রক্রিয়ার কথা বলেছে, তা মেনে চলতে গেলে এই গ্রামের কেউ কোনওদিন ভ্যাকসিন পাবেন না ৷ এখানে অনেকেরই স্মার্টফোন নেই ৷ যাঁদের আছে, তাঁরা ফোন ব্যবহারই করতে পারেন না ৷ এটা সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত ৷ বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেওয়া হলে সবাই ভ্যাকসিন পেত ৷ ভ্যাকসিন সবাই নিতে চায় ৷”

এই পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন গ্রামেরই এক শিক্ষিত যুবক রাজেশ মুর্মু ৷ তিনি বলেন, "অনলাইনে না করে অফলাইনে স্থানীয় হাসপাতালে প্রত্যেকের ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যবস্থা হলে ভাল হত ৷ গ্রামের মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন না ৷ গ্রামের হাতে গোনা কয়েকজন ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৷ টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে কয়েকজন ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৷ অ্যাপের মাধ্যমে ভ্যাকসিনেশনের পদ্ধতিটা গ্রামবাসীদের কাছে খুব জটিল ৷ এই কাজে বিভিন্ন এনজিওকেও ব্যবহার করা যেত ৷ এই অবস্থায় অনেকেই আমার কাছে আসছেন ৷ আমিই তাঁদের ফোনে স্লট বুক করে দিচ্ছি ৷ সার্টিফিকেটও ডাউনলোড করে দিচ্ছি ৷"

পুরাতন মালদায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা ৷ সেগুলিতে কাজ করেন অনেক শ্রমিক ৷ তাঁদের একজন কার্তিক রায় ৷ এখনও ভ্যাকসিন পাননি ৷ তিনি বলেন, "স্মার্টফোন কেনার পয়সা নেই ৷ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য সরকার যে নিয়ম করেছে, আমাদের কাছে তা বেকার ৷ বাড়ি বাড়ি ভ্যাকসিন দিলে আমাদের সুবিধে হয় ৷ করোনার ভয় সবার রয়েছে ৷ প্রাণে বাঁচতে ভ্যাকসিন নিতে চাই ৷" ওই ভাটারই আর এক শ্রমিক মসিরুদ্দিন শেখ বলেন, "পয়সা জমিয়ে একটা স্মার্টফোন কিনেছি ৷ কিন্তু শুধু ফোন করা আর ধরা, তার সঙ্গে একটু ফেসবুক আর হোয়াটস্অ্যাপ দেখা ছাড়া কিছু করতে পারি না ৷ ওসব অ্যাপের কাজ করতেও পারব না ৷ সরকার যদি গ্রামে গ্রামে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করে, তবে আমাদের মতো মানুষের সুবিধে হয় ৷”

আরও পড়ুন : 21 জুন থেকে সাবালক সবাইকে ফ্রি-তে করোনা টিকা দেবে কেন্দ্র: মোদি

মালদা, 7 জুন : করোনার দাপট অব্যাহত ৷ এগিয়ে আসছে তৃতীয় ঢেউ ৷ জীবন বাঁচাতে টিকাই সম্বল বলে বারবার বার্তা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরাও ৷ মালদা জেলায় টিকাকরণের হারও আশাপ্রদ ৷ এখন 18 থেকে 44 বছর বয়সীদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে জেলায় ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও আগামী তিন থেকে চারমাসের মধ্যেও প্রতিটি জেলাবাসী টিকা পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে খোদ প্রশাসনেরই ৷ এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয়েছে, অ্যাপের মাধ্যমে সবাইকে টিকা নিতে হবে ৷ টিকা নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের প্রথমে নিজেদের স্মার্টফোনে কো-উইন অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে ৷ সেখানে নির্দিষ্ট জায়গায় ইচ্ছুকদের নাম ও সচিত্র পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে ভ্যাকসিন স্লট নিতে হবে ৷ নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের কোভিড ভ্যাকসিন নিতে হবে ৷

সমস্যা অন্য জায়গায় ৷ পরিসংখ্যান বলছে, এই মুহূর্তে মাত্র 42 শতাংশ ভারতবাসী স্মার্টফোন ব্যবহার করেন ৷ 2025 সাল নাগাদ সেই হিসাবটা 51 শতাংশে দাঁড়াতে পারে ৷ তবে গত এপ্রিল পর্যন্ত দেশের 86.66 শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছেন ৷ অর্থাৎ 44 শতাংশের বেশি সংখ্যক মানুষের হাতে এখনও স্মার্টফোন নেই ৷ ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে গ্রামীণ এলাকার প্রায় 59 শতাংশ মানুষও রয়েছে ৷ প্রশ্ন উঠেছে, যাঁদের এখনও মোবাইল ফোন নেই, অথবা মোবাইল ফোন থাকলেও স্মার্টফোন নেই তাঁরা কী করে ভ্যাকসিন নেবেন ৷ আবার এমনও অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁদের স্মার্টফোন থাকলেও তার ব্যবহার জানেন না ৷ অনেকেই ততটা শিক্ষিতও নন ৷ তাঁরাই বা কীভাবে ভ্যাকসিন নেওয়ার এই জটিল প্রক্রিয়া পেরোতে পারবেন ৷ উত্তর জানা নেই কারও ৷

করোনার ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে মানুষকে ৷ সেই তালিকায় রয়েছে মালদার প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামবাসীরা ৷

সমস্যা আর সমাধানের রাস্তা খুঁজতে যাওয়া হয়েছিল পুরাতন মালদার আমতলা গ্রামে ৷ গ্রামে আদিবাসী মানুষের সংখ্যা বেশি ৷ এখন তাঁদের অনেক ছেলেমেয়েই বই-খাতার গন্ধ শোঁকে ৷ তবে এখনও অনেকেই অশিক্ষার অন্ধকারে ৷ গ্রামের বাসিন্দা জিতেন কুড়োল মহারাষ্ট্রে শ্রমিকের কাজ করেন ৷ করোনাকালে মাস তিনেক আগে বাড়ি এসে আর কাজের জায়গায় ফিরতে পারেননি ৷ তিনি মহারাষ্ট্রেই ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৷ কিন্তু বাড়ির বাকি ছ'জন পাননি ৷ তিনি বলেন, "কোম্পানি থেকে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করায় আমি তা নিতে পেরেছি ৷ এখন শুনছি মোবাইলে অ্যাপের মাধ্যমে সবাইকে টিকা নিতে হবে ৷ আমার স্মার্টফোন নেই ৷ কীভাবে বাড়ির লোকজন ভ্যাকসিন নেবে জানি না ৷ সরকারের তরফে গ্রামের স্কুলে ক্যাম্প করে সবাইকে টিকা দেওয়া হলে ভাল হয় ৷"

গ্রামের মাতব্বর বিশ্বনাথ মণ্ডলও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ৷ তিনি বলেন, "শুধুমাত্র যারা স্থানীয় সিল্ক ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন, তাঁরাই ভ্যাকসিন পেয়েছে ৷ আর কেউ টিকা পায়নি ৷ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য সরকার যে প্রক্রিয়ার কথা বলেছে, তা মেনে চলতে গেলে এই গ্রামের কেউ কোনওদিন ভ্যাকসিন পাবেন না ৷ এখানে অনেকেরই স্মার্টফোন নেই ৷ যাঁদের আছে, তাঁরা ফোন ব্যবহারই করতে পারেন না ৷ এটা সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত ৷ বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেওয়া হলে সবাই ভ্যাকসিন পেত ৷ ভ্যাকসিন সবাই নিতে চায় ৷”

এই পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন গ্রামেরই এক শিক্ষিত যুবক রাজেশ মুর্মু ৷ তিনি বলেন, "অনলাইনে না করে অফলাইনে স্থানীয় হাসপাতালে প্রত্যেকের ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যবস্থা হলে ভাল হত ৷ গ্রামের মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন না ৷ গ্রামের হাতে গোনা কয়েকজন ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৷ টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে কয়েকজন ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৷ অ্যাপের মাধ্যমে ভ্যাকসিনেশনের পদ্ধতিটা গ্রামবাসীদের কাছে খুব জটিল ৷ এই কাজে বিভিন্ন এনজিওকেও ব্যবহার করা যেত ৷ এই অবস্থায় অনেকেই আমার কাছে আসছেন ৷ আমিই তাঁদের ফোনে স্লট বুক করে দিচ্ছি ৷ সার্টিফিকেটও ডাউনলোড করে দিচ্ছি ৷"

পুরাতন মালদায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা ৷ সেগুলিতে কাজ করেন অনেক শ্রমিক ৷ তাঁদের একজন কার্তিক রায় ৷ এখনও ভ্যাকসিন পাননি ৷ তিনি বলেন, "স্মার্টফোন কেনার পয়সা নেই ৷ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য সরকার যে নিয়ম করেছে, আমাদের কাছে তা বেকার ৷ বাড়ি বাড়ি ভ্যাকসিন দিলে আমাদের সুবিধে হয় ৷ করোনার ভয় সবার রয়েছে ৷ প্রাণে বাঁচতে ভ্যাকসিন নিতে চাই ৷" ওই ভাটারই আর এক শ্রমিক মসিরুদ্দিন শেখ বলেন, "পয়সা জমিয়ে একটা স্মার্টফোন কিনেছি ৷ কিন্তু শুধু ফোন করা আর ধরা, তার সঙ্গে একটু ফেসবুক আর হোয়াটস্অ্যাপ দেখা ছাড়া কিছু করতে পারি না ৷ ওসব অ্যাপের কাজ করতেও পারব না ৷ সরকার যদি গ্রামে গ্রামে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করে, তবে আমাদের মতো মানুষের সুবিধে হয় ৷”

আরও পড়ুন : 21 জুন থেকে সাবালক সবাইকে ফ্রি-তে করোনা টিকা দেবে কেন্দ্র: মোদি

Last Updated : Jun 8, 2021, 5:20 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.