ETV Bharat / state

Tarashankar Roy: 8 বছরে 192 জন ভবঘুরেকে বাড়ি ফিরিয়ে মানবতার প্রতীক মালদার তারাশংকর রায় - Tarashankar Roy

Malda Resident Social Worker Tarashankar Roy: মালদার হবিবপুর ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা তারাশংকর রায় ৷ কলকাতার আশুতোষ কলেজে পড়াশোনা করার সময় রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ানো ভবঘুরেদের বাড়ি ফেরানোর কাজ শুরু করেছিলেন ৷ মানবসেবক হিসেবে তারাশংকরকে এখন একডাকে চেনে জেলাবাসী ৷

Tarashankar Roy ETV BHARAT
Tarashankar Roy
author img

By

Published : Aug 21, 2023, 7:48 PM IST

8 বছরে 192 জন ভবঘুরেকে বাড়ি ফিরিয়ে মানবতার প্রতীক মালদার তারাশংকর রায়

মালদা, 21 অগস্ট: মালদার হবিবপুর ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিরষি গ্রাম ৷ গ্রামের ধারে ইন্দো-বাংলা সীমান্তের কাঁটাতার ৷ শহর থেকে দূরত্ব 40 কিলোমিটার দূরের এই গ্রামেই জন্ম 27 বছরের তারাশংকর রায়ের ৷ তাঁর বাবা ঊমাশংকরবাবু পেশায় ফার্মাসিস্ট ৷ এখন অবশ্য চাষবাসেই বেশি মন দিয়েছেন ৷ আর মা প্রতিমা রায় আইসিডিএস কর্মী ৷ এহেন এই গ্রাম্য যুবক তারাশংকর এখন মানবসেবায় মালদা জেলার আইকন ৷ তাঁর কাজ ভবঘুরেদের বাড়ি ফেরানো ৷ কলেজ জীবনে শুরু করেছিলেন ৷ এখনও পর্যন্ত 192 জন ভবঘুরেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁদের পরিবারে ৷ তাঁর এই কাজকে স্যালুট জানিয়েছেন খোদ মালদা জেলার পুলিশ সুপার ৷ তারাশংকরের অবদান কি ভুলতে পারেন হারিয়ে যাওয়া ঘরের লোককে ফিরে পাওয়া মানুষজন !

স্নাতক তারাশংকর আর চাকরি খোঁজেন না ৷ পারিবারিক কৃষিজমিতেই নিজের ভবিষ্যৎ খুঁজে নিয়েছেন ৷ চাকরি যে তাঁর মানবসেবায় সময়ের বাধা হতে পারে ! তিনি বলছেন, “ভবঘুরেদের মানুষ অন্য চোখে দেখে ৷ ওরা রাস্তায় পড়ে থাকে ৷ কলকাতায় আশুতোষ কলেজে পড়তাম ৷ কলেজ থেকে মেসে যাতায়াতের পথে এমন অনেক মানুষকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখতাম ৷ তাঁদের পোশাক নেই, পেটে খাবার নেই ৷ অনেকের তো মাথায়, পায়ে পোকা বাসা বেঁধেছে ৷ ওদের দেখে খুব কষ্ট হত ৷ তখনই মাথায় আসে, এদের সেবা করে, সুস্থ করে বাড়ি ফেরাতে হবে ৷ সেই শুরু, 2016 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত আমার এই সেবা চলছে ৷”

তারাশংকর বলেন, “এখনও পর্যন্ত গোটা দেশের 192 জন ভবঘুরেকে তাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়েছি ৷ সবসময় পুলিশ বা প্রশাসনের সহযোগিতা পাই না ৷ তবে, বেশিরভাগ সময় সেই সহায়তা পাই ৷ কোনও ভবঘুরেকে রাস্তায় দেখতে পেলে প্রথমে, তাঁর কাছে গিয়ে ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করি ৷ বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে আসি ৷ স্নান করিয়ে, নতুন পোশাক পরিয়ে, খাবার খাইয়ে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করি যে, সে এই পরিবারেরই একজন ৷ এর পর কথাবার্তা বলে তাঁর বাড়ির কোনও সূত্র পাওয়ার চেষ্টা করি ৷ সেই সূত্র মিললেই গুগল ম্যাপে সেই জায়গার সন্ধান চালাই ৷ সেখানকার স্থানীয় লোকজন, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি ৷ এই কাজে অসুস্থ বাবা-মা যেভাবে পাশে দাঁড়ান, তা বলার নয় ৷ তাঁরাই ভবঘুরেদের সন্তান স্নেহে আসল পরিচর্যা করেন ৷”

মানবসেবক তারাশংকরকে এখন একডাকে চেনে জেলাবাসী ৷ তাঁর সেই জনপ্রিয়তা এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাজে লাগিয়েছে বিজেপি ৷ জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী হয়ে জয়ও পেয়েছেন তিনি ৷ কেন রাজনীতিতে ? তাঁর উত্তর, “রাজনীতিতে আসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না ৷ শুধু অবহেলিত আর অপমানিত মানুষজনের জন্য এই রাস্তায় নেমেছি ৷ এই এলাকার 90 শতাংশ মানুষ আদিবাসী ৷ তাঁদের অধিকাংশ প্রশাসনিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত ৷ সামান্য একটি ত্রিপলের জন্য তাঁদের বিডিও অফিসের সামনে পড়ে থাকতে হয় ৷ বিডিও-র ঘাড়ধাক্কা খেয়ে তাঁদের বাড়ি ফিরে আসতে হয় ৷ এর থেকে কষ্টের আর কী হতে পারে !’’

তাঁর মতে, ‘‘আমার মনে হয়েছিল, রাজনীতিতে এসে এই মানুষগুলোর অধিকারের জন্য লড়াই করা যেতে পারে ৷ তার জন্যই এই পথে এসেছি ৷ আপাতত নিজেদের জমানো অর্থেই ভবঘুরেদের সেবা করি ৷ এতে বন্ধুরাও আমাকে খুব সাহায্য করে ৷ সামাজিক মাধ্যমেও সাহায্য পাই ৷ এই কাজ করে মানুষের ভালোবাসা পাই ৷ এর থেকে আর বেশি পাওয়ার কী আছে ! সবাইকে বলব, আজ আছি, কাল নেই ৷ কিন্তু, আমাদের প্রত্যেকের সমাজের জন্য কিছু দিয়ে যাওয়া প্রয়োজন ৷ এতে সমাজও তাঁর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কিছু দিয়ে যেতে পারবে ৷”

আরও পড়ুন: বরাবরের ফার্স্ট-বয় সৎপালের নেশা ছিল বাগান পরিচর্যা ও সমাজসেবা

মাস সাতেক আগে এভাবেই রাস্তা থেকে বৈদি দেবীকে ঘরে নিয়ে এসেছিলেন তারাশংকর ৷ ওড়িশার বালাঙ্গির জেলার টিকলাগড়ের বাসিন্দা তিনি ৷ মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন ৷ ভরপুর সেবায় এখন অনেকটাই সুস্থ ৷ বছর বিয়াল্লিশের এই মহিলা বিবাহিতা ৷ অভিযোগ অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামী পেটে লাথি মেরে পালিয়ে গিয়েছিলেন ৷ তাতে তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু হয় ৷ তার পর থেকেই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারান ৷ তাঁর দুই ভাই রয়েছে ৷ তাঁরা মুম্বইয়ে থাকেন ৷ এখনও তাঁর ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তারাশংকর ৷ তাই এখনও বৈদিদেবী তাঁর বাড়ির একজন সদস্য ৷ তিনিও আর এই বাড়ি থেকে কোথাও যেতে চান না ৷ বাড়ির কাজকর্মও বেশ ভালোই করেন ৷ কোনওভাবে জানালেন, “পুরী থেকে ট্রেনে চেপে বসেছিলাম ৷ ঘুরতে ঘুরতে এখানে চলে এসেছি ৷ এই ভাই তাঁর বাড়িতে আমাকে নিয়ে এসেছেন ৷ আমি এখানেই থাকব ৷ আর বাড়ি যাব না ৷”

আরও পড়ুন: ফের নজির গড়লেন সোনু

মানবসেবার এই কাজে তারাশংকরের তারিফ করছেন পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদবও ৷ তিনি বলেন, “এটা পুলিশেরই কাজ ৷ সেই কাজ করছেন ওই যুবক ৷ তিনি খুব ভালো কাজ করছেন ৷ তাঁকে পুলিশের তরফে যতটা সম্ভব সাহায্য করা হয় ৷ এই কাজের জন্য তাঁকে তারিফ জানাই ৷”

শিরষি গ্রামের এই যুবকের জন্যই 16 বছর আগে বাড়ি থেকে হারিয়ে যাওয়া বাবাকে খুঁজে পেয়েছেন উত্তর প্রদেশের মথুরার দুই ভাই, ব্রহ্মদেব আর প্রমোদ ৷ বাবা ডাক্কু বেদবীর খানিকটা মানসিক ভারসাম্যহীন ৷ বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোনওভাবে চলে এসেছিলেন মালদায় ৷ তাঁর খোঁজ পেয়েছিলেন তারাশংকর ৷ গত 3 জুন দুই ভাই মালদায় এসে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বাবাকে ৷ ব্রহ্মদেব ফোনে বলেন, “তারাবাবুর অবদান এ জীবনে ভুলতে পারব না ৷ তাঁর জন্য বাবা আজ ঘরে ৷ ভেবেছিলাম, বাবা আর বেঁচেই নেই ৷ কিন্তু, যেদিন তারাবাবু ফোন করেন, মোবাইলে বাবার ছবি পাঠান, সেদিন মনে হয়েছিল তারাবাবুর জন্য আমাদের পুনর্জন্ম হল ৷ এমন মানুষ যেন ঘরে ঘরে জন্মায় ৷”

আরও পড়ুন: প্রতি মাসে হাজার শিশুর পেট ভরাচ্ছেন অর্জুন

ক’দিন আগেই স্বামী রাসু পাহানকে ফিরে পেয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের পতিরামের বাসিন্দা কল্পনা পাহান ৷ তিনি বলেন, “দিনরাত মদ খেয়ে মানুষটার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল ৷ দু’মাস আগে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল ৷ তারা দাদার জন্য স্বামীকে ফের ফিরে পেয়েছি ৷ এখন ওকে সবসময় চোখে চোখে রাখি ৷ যদি আবার কোথাও চলে যায় ! যদি এবার আর তারা দাদার মতো কাউকে না পাওয়া যায় !”

8 বছরে 192 জন ভবঘুরেকে বাড়ি ফিরিয়ে মানবতার প্রতীক মালদার তারাশংকর রায়

মালদা, 21 অগস্ট: মালদার হবিবপুর ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিরষি গ্রাম ৷ গ্রামের ধারে ইন্দো-বাংলা সীমান্তের কাঁটাতার ৷ শহর থেকে দূরত্ব 40 কিলোমিটার দূরের এই গ্রামেই জন্ম 27 বছরের তারাশংকর রায়ের ৷ তাঁর বাবা ঊমাশংকরবাবু পেশায় ফার্মাসিস্ট ৷ এখন অবশ্য চাষবাসেই বেশি মন দিয়েছেন ৷ আর মা প্রতিমা রায় আইসিডিএস কর্মী ৷ এহেন এই গ্রাম্য যুবক তারাশংকর এখন মানবসেবায় মালদা জেলার আইকন ৷ তাঁর কাজ ভবঘুরেদের বাড়ি ফেরানো ৷ কলেজ জীবনে শুরু করেছিলেন ৷ এখনও পর্যন্ত 192 জন ভবঘুরেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁদের পরিবারে ৷ তাঁর এই কাজকে স্যালুট জানিয়েছেন খোদ মালদা জেলার পুলিশ সুপার ৷ তারাশংকরের অবদান কি ভুলতে পারেন হারিয়ে যাওয়া ঘরের লোককে ফিরে পাওয়া মানুষজন !

স্নাতক তারাশংকর আর চাকরি খোঁজেন না ৷ পারিবারিক কৃষিজমিতেই নিজের ভবিষ্যৎ খুঁজে নিয়েছেন ৷ চাকরি যে তাঁর মানবসেবায় সময়ের বাধা হতে পারে ! তিনি বলছেন, “ভবঘুরেদের মানুষ অন্য চোখে দেখে ৷ ওরা রাস্তায় পড়ে থাকে ৷ কলকাতায় আশুতোষ কলেজে পড়তাম ৷ কলেজ থেকে মেসে যাতায়াতের পথে এমন অনেক মানুষকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখতাম ৷ তাঁদের পোশাক নেই, পেটে খাবার নেই ৷ অনেকের তো মাথায়, পায়ে পোকা বাসা বেঁধেছে ৷ ওদের দেখে খুব কষ্ট হত ৷ তখনই মাথায় আসে, এদের সেবা করে, সুস্থ করে বাড়ি ফেরাতে হবে ৷ সেই শুরু, 2016 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত আমার এই সেবা চলছে ৷”

তারাশংকর বলেন, “এখনও পর্যন্ত গোটা দেশের 192 জন ভবঘুরেকে তাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়েছি ৷ সবসময় পুলিশ বা প্রশাসনের সহযোগিতা পাই না ৷ তবে, বেশিরভাগ সময় সেই সহায়তা পাই ৷ কোনও ভবঘুরেকে রাস্তায় দেখতে পেলে প্রথমে, তাঁর কাছে গিয়ে ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করি ৷ বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে আসি ৷ স্নান করিয়ে, নতুন পোশাক পরিয়ে, খাবার খাইয়ে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করি যে, সে এই পরিবারেরই একজন ৷ এর পর কথাবার্তা বলে তাঁর বাড়ির কোনও সূত্র পাওয়ার চেষ্টা করি ৷ সেই সূত্র মিললেই গুগল ম্যাপে সেই জায়গার সন্ধান চালাই ৷ সেখানকার স্থানীয় লোকজন, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি ৷ এই কাজে অসুস্থ বাবা-মা যেভাবে পাশে দাঁড়ান, তা বলার নয় ৷ তাঁরাই ভবঘুরেদের সন্তান স্নেহে আসল পরিচর্যা করেন ৷”

মানবসেবক তারাশংকরকে এখন একডাকে চেনে জেলাবাসী ৷ তাঁর সেই জনপ্রিয়তা এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাজে লাগিয়েছে বিজেপি ৷ জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী হয়ে জয়ও পেয়েছেন তিনি ৷ কেন রাজনীতিতে ? তাঁর উত্তর, “রাজনীতিতে আসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না ৷ শুধু অবহেলিত আর অপমানিত মানুষজনের জন্য এই রাস্তায় নেমেছি ৷ এই এলাকার 90 শতাংশ মানুষ আদিবাসী ৷ তাঁদের অধিকাংশ প্রশাসনিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত ৷ সামান্য একটি ত্রিপলের জন্য তাঁদের বিডিও অফিসের সামনে পড়ে থাকতে হয় ৷ বিডিও-র ঘাড়ধাক্কা খেয়ে তাঁদের বাড়ি ফিরে আসতে হয় ৷ এর থেকে কষ্টের আর কী হতে পারে !’’

তাঁর মতে, ‘‘আমার মনে হয়েছিল, রাজনীতিতে এসে এই মানুষগুলোর অধিকারের জন্য লড়াই করা যেতে পারে ৷ তার জন্যই এই পথে এসেছি ৷ আপাতত নিজেদের জমানো অর্থেই ভবঘুরেদের সেবা করি ৷ এতে বন্ধুরাও আমাকে খুব সাহায্য করে ৷ সামাজিক মাধ্যমেও সাহায্য পাই ৷ এই কাজ করে মানুষের ভালোবাসা পাই ৷ এর থেকে আর বেশি পাওয়ার কী আছে ! সবাইকে বলব, আজ আছি, কাল নেই ৷ কিন্তু, আমাদের প্রত্যেকের সমাজের জন্য কিছু দিয়ে যাওয়া প্রয়োজন ৷ এতে সমাজও তাঁর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কিছু দিয়ে যেতে পারবে ৷”

আরও পড়ুন: বরাবরের ফার্স্ট-বয় সৎপালের নেশা ছিল বাগান পরিচর্যা ও সমাজসেবা

মাস সাতেক আগে এভাবেই রাস্তা থেকে বৈদি দেবীকে ঘরে নিয়ে এসেছিলেন তারাশংকর ৷ ওড়িশার বালাঙ্গির জেলার টিকলাগড়ের বাসিন্দা তিনি ৷ মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন ৷ ভরপুর সেবায় এখন অনেকটাই সুস্থ ৷ বছর বিয়াল্লিশের এই মহিলা বিবাহিতা ৷ অভিযোগ অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামী পেটে লাথি মেরে পালিয়ে গিয়েছিলেন ৷ তাতে তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু হয় ৷ তার পর থেকেই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারান ৷ তাঁর দুই ভাই রয়েছে ৷ তাঁরা মুম্বইয়ে থাকেন ৷ এখনও তাঁর ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তারাশংকর ৷ তাই এখনও বৈদিদেবী তাঁর বাড়ির একজন সদস্য ৷ তিনিও আর এই বাড়ি থেকে কোথাও যেতে চান না ৷ বাড়ির কাজকর্মও বেশ ভালোই করেন ৷ কোনওভাবে জানালেন, “পুরী থেকে ট্রেনে চেপে বসেছিলাম ৷ ঘুরতে ঘুরতে এখানে চলে এসেছি ৷ এই ভাই তাঁর বাড়িতে আমাকে নিয়ে এসেছেন ৷ আমি এখানেই থাকব ৷ আর বাড়ি যাব না ৷”

আরও পড়ুন: ফের নজির গড়লেন সোনু

মানবসেবার এই কাজে তারাশংকরের তারিফ করছেন পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদবও ৷ তিনি বলেন, “এটা পুলিশেরই কাজ ৷ সেই কাজ করছেন ওই যুবক ৷ তিনি খুব ভালো কাজ করছেন ৷ তাঁকে পুলিশের তরফে যতটা সম্ভব সাহায্য করা হয় ৷ এই কাজের জন্য তাঁকে তারিফ জানাই ৷”

শিরষি গ্রামের এই যুবকের জন্যই 16 বছর আগে বাড়ি থেকে হারিয়ে যাওয়া বাবাকে খুঁজে পেয়েছেন উত্তর প্রদেশের মথুরার দুই ভাই, ব্রহ্মদেব আর প্রমোদ ৷ বাবা ডাক্কু বেদবীর খানিকটা মানসিক ভারসাম্যহীন ৷ বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোনওভাবে চলে এসেছিলেন মালদায় ৷ তাঁর খোঁজ পেয়েছিলেন তারাশংকর ৷ গত 3 জুন দুই ভাই মালদায় এসে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বাবাকে ৷ ব্রহ্মদেব ফোনে বলেন, “তারাবাবুর অবদান এ জীবনে ভুলতে পারব না ৷ তাঁর জন্য বাবা আজ ঘরে ৷ ভেবেছিলাম, বাবা আর বেঁচেই নেই ৷ কিন্তু, যেদিন তারাবাবু ফোন করেন, মোবাইলে বাবার ছবি পাঠান, সেদিন মনে হয়েছিল তারাবাবুর জন্য আমাদের পুনর্জন্ম হল ৷ এমন মানুষ যেন ঘরে ঘরে জন্মায় ৷”

আরও পড়ুন: প্রতি মাসে হাজার শিশুর পেট ভরাচ্ছেন অর্জুন

ক’দিন আগেই স্বামী রাসু পাহানকে ফিরে পেয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের পতিরামের বাসিন্দা কল্পনা পাহান ৷ তিনি বলেন, “দিনরাত মদ খেয়ে মানুষটার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল ৷ দু’মাস আগে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল ৷ তারা দাদার জন্য স্বামীকে ফের ফিরে পেয়েছি ৷ এখন ওকে সবসময় চোখে চোখে রাখি ৷ যদি আবার কোথাও চলে যায় ! যদি এবার আর তারা দাদার মতো কাউকে না পাওয়া যায় !”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.