মালদা, 17 অগস্ট: বিচারপতি সেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay) ৷ তাঁর নির্দেশেই চাকরি ফিরে পেলেন মালদার (Malda) ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের চণ্ডীপুর গ্রামের বাসিন্দা মিরাজ শেখ ৷ বৈধভাবে চাকরি পাওয়ার পরও তাঁর নিয়োগ বাতিল হয়ে গিয়েছিল ! শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হয়ে খোয়া যাওয়া চাকরি ফেরত পেলেন (Primary Teacher Job) এই যুবক ৷
2014 সালে রাজ্য শিক্ষা দফতরের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি দেখে প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরির জন্য আবেদন করেন মিরাজ ৷ লিখিত পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর 2020 সালে ইন্টারভিউয়ে ডাক পান তিনি ৷ শেষ পর্যন্ত 2021 সালে নিয়োগপত্র হাতে পান মিরাজ ৷ ওই বছরেরই 11 ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদ জেলার রঘুনাথগঞ্জের পুথিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগ দেন তিনি ৷ কিন্তু, 2022 সালের 31 জানুয়ারি স্কুলের অন্য শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে বেতনের টাকা ঢুকে গেলেও তিনি তা পাননি ৷ এরপর মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মিরাজ ৷ শেষ পর্যন্ত শিক্ষাগত শংসাপত্রে ত্রুটি থাকার অভিযোগ তুলে গত 31 মার্চ তাঁর চাকরি কেড়ে নেওয়া হয় ! এরপরই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মিরাজ ৷
মিরাজ জানিয়েছেন, "31 জানুয়ারি সবার বেতন হয়ে গেলেও আমি বেতন পাইনি ৷ পরের দিন আমি এ নিয়ে স্কুল পরিদর্শককে ফোন করি ৷ তিনি আমাকে জানান, আমার ফাইলে সমস্যা রয়েছে ৷ আমি যেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে যোগাযোগ করি ৷ সেখানে যোগাযোগ করলে আমাকে বলা হয়, আমার স্নাতকস্তরের নম্বর ঠিক থাকলেও অনার্স সাবজেক্টের নম্বর প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে ৷ এক্ষেত্রে রাজ্য শিক্ষা দফতর এনসিআরটি-এর নিয়ম মানেনি ৷ আসলে এ সব কিছু যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার কৌশল ছিল ৷ আমার বিএড-ও রয়েছে ৷ তেমনই নিয়ম হলে অনার্স নম্বরের ভিত্তিতে আমাকে বিএড কেন করতে দেওয়া হল ? যাই হোক, ডিপিএসসি-এর চেয়ারম্যানের সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা করার পরও আমার সমস্যা মেটেনি ৷ এ নিয়ে কথা বলার জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমি রাজ্য শিক্ষা দফতরে মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করি ৷ কিন্তু, তিনি আমার কথার কোনও গুরুত্ব দেননি ৷ সাফ জানিয়ে দেন, ডিপিএসসি যা করবে সেটাই চূড়ান্ত ৷ 31 মার্চ আমাকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, আমার চাকরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে ৷ এরপর মে মাসে আমি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হই ৷"
সংশ্লিষ্ট মামলাটি ওঠে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের এজলাসে ৷ সব দিক খতিয়ে দেখে তিনি যত দ্রুত সম্ভব মিরাজ শেখের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন ৷ আদালতের রায়ে খুশি এই যুবক ৷ তাঁর বক্তব্য, এভাবে চাকরি চলে যাওয়ায় তাঁর সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছিল ৷ সম্প্রতি অসংখ্য চাকরি প্রাপকের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে ৷ আদালতের নির্দেশে তাঁদের অনেককেই অবৈধভাবে পাওয়া চাকরি হারাতে হয়েছে ৷ মিরাজ বলেন, তাঁর চাকরি চলে যাওয়াকেও এই বেআইনি কারবারের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন অনেকে ৷ ফলে আদালতের নির্দেশে শুধুমাত্র চাকরি নয়, হৃত সম্মানও ফিরে পেয়েছেন বলে মনে করছেন মিরাজ ৷ প্রসঙ্গত, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের নির্দেশেই চাকরি ফিরে পেয়েছিলেন শিলিগুড়ির ববিতা সরকার ৷