মালদা, 9 এপ্রিল : কোরোনার প্রভাবে সিঁদুরে মেঘ দেখছে কালিয়াচক 3 ব্লকের গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা ৷ লকডাউনে বন্ধ হয়ে রয়েছে গঙ্গার ভাঙনরোধের কাজ ৷ কবে সেই কাজ শেষ হবে, কেউ জানে না ৷ এদিকে এই মরশুমে কাজ না হলে আসন্ন বর্ষায় ফের পাড় ভাঙবে গঙ্গা ৷ রাজ্যের সেচমন্ত্রীকে চিঠি দিচ্ছে হোসেনপুর-পারলালপুর গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ কমিটি ৷ জেলা সেচ বিভাগের কোনও প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও জেলাশাসক বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ৷
1998 সাল থেকে গঙ্গা তার বামতীরে ভাঙন চালাচ্ছে ৷ ফরাক্কা ব্যারেজের ডাউনস্ট্রিমে প্রায় 14 কিলোমিটার এলাকা প্রতি বছর গঙ্গার ভাঙনের কবলে পড়ে ৷ এই 14 কিলোমিটারের মধ্যে 6.9 কিলোমিটার অংশে ভাঙনরোধের কাজের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সংস্থা ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের ৷ বাকি 7.1 কিলোমিটার এলাকার কাজ রাজ্য সরকারের আওতায় রয়েছে ৷ এর মধ্যে অবশ্য মালদা ও মুর্শিদাবাদ, দুই জেলাই রয়েছে ৷
জানা গেছে, ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ নিজেদের কাজ কিছুটা করেছে ৷ তবে, মালদা জেলা সেচ বিভাগ সেই কাজ এখনও শুরু করেনি ৷ ঠিক ছিল, চলতি মরশুমে কাজ শুরু করা হবে ৷ প্রথমে বিপন্ন থাকা 800 মিটার এলাকায় সেই কাজ হবে ৷ কিন্তু মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে কোরোনার জেরে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় ভাঙনরোধের কাজে আর হাত পড়েনি ৷ এতেই নিজেদের বিপন্ন বোধ করছে কালিয়াচক 3 ব্লকের পারলালপুর, পার অনুপনগর, গোলাপ মণ্ডলপাড়া, খাসপাড়া এলাকার প্রায় 30 হাজার মানুষ ৷ একইভাবে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা ব্লকের হোসেনপুর, কুলিদিয়ার গ্রামের আরও 20 হাজার মানুষ ৷ কারণ, শুখা মরশুম চলে গেলে গঙ্গার জলস্তর বাড়তে শুরু করবে ৷ তখন আর ভাঙনরোধের কাজ করা কোনওভাবেই সম্ভব হবে না ৷ ফলে আগামী বর্ষায় চোখের সামনে বাড়ি, কৃষিজমি গঙ্গায় তলিয়ে যেতে দেখা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না ৷
হোসেনপুর-পারলালপুর গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক আসিফ ইকবাল বলেন, " কিছুদিন আগে জলসম্পদ মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা ফরাক্কায় এসেছিলেন ৷ গঙ্গার ভাঙনরোধের কাজ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে রাজ্য সেচ দপ্তরের বৈঠক হয় ৷ সেই বৈঠক ফলপ্রসূও হয়েছিল ৷ কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছিল, হোসেনপুর থেকে পারলালপুর পর্যন্ত গোটা এলাকায় ভাঙনরোধের কাজ হবে ৷ শুখা মরশুমে সেই কাজ শুরু হবে ৷ এর মধ্যে 800 মিটার এলাকায় কাজ করার কথা মালদা জেলা সেচ দপ্তরের ৷ আমরা শুনেছি , মানিকচকের নারায়ণপুরে জেলা সেচ বিভাগ গঙ্গার ভাঙনরোধের কাজ করেছে ৷ কিন্তু এখানে সেই কাজে হাত দেওয়া হয়নি ৷ বলা হচ্ছে, লকডাউনে এই কাজ করা যাবে না ৷ তাদের বক্তব্য, এই কাজে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন ৷ একসঙ্গে এত শ্রমিককে কাজে লাগানো যাবে না ৷ আমরা গোটা বিষয়টি নিয়ে সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে চিঠি দিচ্ছি ৷ কারণ, শুখা মরশুমে ভাঙনরোধের কাজ না হলে আসন্ন বর্ষায় আমাদের ফের বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে ৷ "
এবিষয়ে জেলা সেচ দপ্তরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র প্রণয়কুমার সামন্তেরও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ যদিও জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, " লকডাউনে বড় কোনও কাজে হাত দেওয়ায় কিছুটা সমস্যা রয়েছে ৷ তবুও আমি সেচ দপ্তরের সঙ্গে কথা বলছি ৷ বর্ষার আগে ভাঙনরোধের কাজ কীভাবে করা যায় তা দেখা হবে ৷ "