মালদা, 17 অক্টোবর: এ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নানাবিধ লোকসংস্কৃতি চালু রয়েছে ৷ পুরুলিয়ার ছৌনাচ, সাঁওতালি নাচ, লাঠি নাচ, ঘোড়া নাচ, বাহা, সোহরাই-সহ আরও অনেক কিছু ৷ কিন্তু এ সবের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন মালদার গম্ভীরা ৷ নাচ এবং গান, দুই আঙ্গিকেই পুষ্ট অতি প্রাচীন এই লোকসংস্কৃতি ৷ কিন্তু সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে গম্ভীরা ৷ এখন মানুষ ইলেকট্রনিক গ্যাজেটেই সীমাবদ্ধ ৷
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে জীবনযুদ্ধের দৌড় ৷ এই শিল্পে জড়িতরা আগের মতো উপার্জনও করতে পারেন না ৷ আয় কমায় কমেছে তাগিদ ৷ বর্তমানে রাজ্য সরকারের তরফে গম্ভীরা শিল্পীদের কিছু সহায়তা করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয় ৷ তাই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে লোকসংস্কৃতির এই ধারা ৷ এ ভাবে চললে প্রাচীন এই শিল্পের আয়ু কতদিন ? কীভাবেই বা এই শিল্পের পুনরুজ্জীবন সম্ভব ? সেটাই এ বার উঠে আসছে মালদা শহরের নাটমন্দিরের পুজো মণ্ডপে ৷
পুজো কমিটির সম্পাদক মঙ্গল দাস ইটিভি ভারতকে জানালেন, “আমাদের গম্ভীরা অনেক পুরনো এক লোকশিল্প ৷ এই শিল্প মালদা জেলার অন্যতম ঐতিহ্য ৷ কিন্তু এই শিল্প ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে ৷ এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অনেকেই গম্ভীরা শিল্পের কথা জানে না ৷ তাই আমরা মালদার মানুষের কাছে গম্ভীরার বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করছি ৷ পুজো মণ্ডপে গম্ভীরার ইতিহাস, তার নানা ধারা তুলে ধরা হয়েছে ৷ মণ্ডপে এই শিল্পে ব্যবহৃত নানা মুখোশ ব্যবহার করা হয়েছে ৷ মডেলের মাধ্যমে গম্ভীরা আসরের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে ৷ প্রায় এক মাস ধরে মণ্ডপ নির্মাণের কাজ চলছে ৷ আশা করছি, মালদার মানুষ নিজের জেলার এই ঐতিহ্য মণ্ডপে দেখে খুশি হবে ৷ আমরা নিশ্চয়ই জেলাবাসীর সাড়া পাব ৷ আমাদের প্রতিমা নির্মাণ করেছেন প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী রাজকুমার পণ্ডিত ৷ ক্লাবের সদস্যরাই মূলত মণ্ডপসজ্জা করেন ৷ কিছু মুখোশ বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে ৷ আমাদের বাজেট খুবই কম ৷ মাত্র দু’লাখ টাকা ৷ বাজেট অল্প হলেও প্রতি বছর নতুন নতুন থিমের উদ্ভাবনে আমরা জেলাবাসীকে চমক দিই ৷ এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না ৷”
আরও পড়ুন: চিকিৎসার কাজ সেরে প্রতিমা তৈরি ! বারাসতের অনুপম নেশায় মৃৎশিল্পী
গম্ভীরা আদপে বৌদ্ধ সংস্কৃতির একটি শাখা ৷ শিব পুরাণেও গম্ভীরার উল্লেখ রয়েছে ৷ গম্ভীরা শব্দের উৎস 'গম্ভীর' অর্থাৎ শিব থেকে ৷ গম্ভীরা প্রকৃত অর্থে শিবের উপাসনা ৷ এর দুটি ধারা ৷ আচারগত ও ব্যবহারিক ৷ প্রথম ধারাটি হাজার 'রের বেশি প্রাচীন ৷ তবে ব্যবহারিক ধারাটির উৎপত্তি 500 বছরের কিছু বেশ কিছু আগেক ৷ তেমনটাই বক্তব্য গম্ভীরা গবেষকদের ৷ দ্বিতীয় ধারারই অন্তর্গত গম্ভীরা গান ৷ এই গানের বৈশিষ্ট্য, সারা বছরের সমাজব্যবস্থাকে মানুষের সামনে তুলে ধরা ৷ মূলত শাসকের শাসনব্যবস্থায় ভুলত্রুটিগুলিই এই গানের মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরা হয় ৷ এই আসরে শিবের একটি বড় ভূমিকা থাকে ৷ তিনি সমাজের শীর্ষ অবস্থানের প্রতীক ৷ গম্ভীরা শিল্পীরা স্থানীয় ভাষায় গানের মাধ্যমে শাসকের নানা সিদ্ধান্ত শিবের সামনে উপস্থাপন করেন ৷ শাসকের ভুলত্রুটি মানুষের সামনে তুলে ধরেন ৷ নাটমন্দিরের পুজো মণ্ডপেও পুজোর ক'টা দিন ঠিক সেভাবেই গম্ভীরা উপস্থাপনা করবেন শিল্পীরা ৷