ETV Bharat / state

Panchayat Elections 2023: ভোটযুদ্ধের মধ্যেই পটনায় এক মঞ্চে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল, কতটা প্রভাব জোড়াফুলে ? - নীতিশ কুমার

34 বছরের ‘অপশাসন’ তুলে ধরে পালটা তোপ দাগছে ঘাসফুল শিবিরও ৷ এরই মধ্যে শুক্রবার দেখা গিয়েছে অন্য ছবি ৷ চব্বিশের লোকসভা ভোটে পদ্মমুক্ত ভারত গড়তে পটনায় বিরোধী নক্ষত্রের মেলা ৷

Etv Bharat
ভোটযুদ্ধের মধ্যেই পটনায় এক মঞ্চে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলও
author img

By

Published : Jun 24, 2023, 11:00 PM IST

মালদা, 24 জুন: বাকি আর মাত্র 15 দিন ৷ বঙ্গে গ্রাম দখলের লড়াই এখন তুঙ্গে ৷ প্রচার পর্বে একের পর এক বাণে তৃণমূলকে ক্ষতবিক্ষত করছে বাম-কংগ্রেস ৷ 34 বছরের ‘অপশাসন’ তুলে ধরে পালটা তোপ দাগছে ঘাসফুল শিবিরও ৷ এরই মধ্যে শুক্রবার দেখা গিয়েছে অন্য ছবি ৷ চব্বিশের লোকসভা ভোটে পদ্মমুক্ত ভারত গড়তে পটনায় বিরোধী নক্ষত্রের মেলা ৷ সেই পুঞ্জে যেমন ছিলেন রাহুল গান্ধি, তেমনই সীতারাম ইয়েচুরি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সংবাদমাধ্যমের আলো শুষে নিয়েছেন ৷ ছিলেন নীতিশ কুমার, লালুপ্রসাদ যাদবের মতো রাজনীতির ময়দানে পোড় খাওয়ারাও ৷ আগামী বছরের লোকসভা ভোটে বিরোধী ঐক্য কেমন হবে, কোন রাসায়নিক ফর্মুলায় সম্পৃক্ত হবে, চাওয়া পাওয়ার হিসাব মিলবে কি না, তা অনেক দূরের কথা ৷ কিন্তু গতকালের বৈঠকের পর অনেক বঙ্গবাসীর মনেই প্রশ্ন তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেসের দ্বৈত অবস্থান নিয়ে ৷ রাজ্যে যখন একে অন্যের বিরুদ্ধে হাতের গুলি পাকিয়ে কুস্তিতে ব্যস্ত, সেই মুহূর্তে পটনায় তিন দলের দোস্তির হিসাব মেলাতে পারছেন না অনেকেই ৷ তবে তিন দলের নীচুতলার নেতা-কর্মীরা কিন্তু বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলেই মেনে নিচ্ছেন ৷ ভোটের প্রচারে কেউ এনিয়ে প্রশ্ন করলে তাঁরা সেভাবেই প্রশ্নকর্তাকে বোঝাচ্ছেন ৷

মালদার মানিকচক এলাকায় সিপিএমের জেলা পরিষদ আসনের প্রার্থী দেবজ্যোতি সিনহা বলেন, “গোটা দেশের প্রেক্ষাপটে যারা মোদির বিরুদ্ধে, তাদের একটা মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে৷ বামপন্থীরা এই বিরোধী মঞ্চে বরাবরের মতো এখনও থাকছে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাঝে মধ্যে থাকেন, মাঝে মধ্যে থাকেন না ৷ মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে ৷ শুক্রবার তিনি বিরোধীদের বৈঠকে ছিলেন ৷ কিন্তু ওই বৈঠকের আহ্বায়ক তিনি নন ৷ আর এক মঞ্চে তৃণমূলের সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে বলতে পারি, দেশের জার্সিতে ফুটবল খেললে আমরা কি মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের হয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে খেলতে পারব না? পঞ্চায়েত নির্বাচনের সঙ্গে দেশের নির্বাচনের প্রেক্ষিত কখনও মেলানো যায় না ৷ রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে আমরা ভাবছি না ৷ এখানে মানুষ বিরোধী জোটকে বেছে নিয়েছে ৷” প্রায় একই বক্তব্য ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস প্রার্থী নীলমণি মণ্ডলের ৷

তাঁর সাফ বক্তব্য, “এই ভোট গ্রামীণ মানুষের অধিকার রক্ষার ভোট ৷ লোকসভা ভোট দেশের নীতি নির্ধারণের ভোট ৷ দুই ভোটের অবস্থান একেবারেই ভিন্ন ৷ দিল্লির গদি থেকে মোদিকে হটাতে বিরোধীদের এক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে ৷ কিন্তু এই রাজ্যে তৃণমূল যে দুর্নীতি চালাচ্ছে, মানুষের উপর যে অত্যাচার করছে, তা থেকে গ্রামের মানুষকে মুক্ত করতে তৃণমূলকে হারাতে হবে ৷ এই লড়াইয়ে বাম-কংগ্রেস এককাট্টা ৷” চাঁচলের জেলা পরিষদ আসনের তৃণমূল প্রার্থী এটিএম রফিকুল হোসেনও দুই নির্বাচনের পটভূমি আলাদা বলে মন্তব্য করেছেন ৷ তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচন হল গ্রামের মানুষকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন যজ্ঞে শামিল করার লড়াই৷ আর লোকসভা ভোট মোদিকে গদিচ্যুত করার লড়াই ৷ দুই ভোটের বিস্তর ফারাক ৷ গতকালের বৈঠকে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলকে এক মঞ্চে দেখে কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন ৷ আমরা তাঁদের দুই ভোটের বিশেষত্বের কথাই বলছি ৷”

শুধু মালদা নয়, গতকালের বৈঠকে যুযুধান তিন দলের এক মঞ্চে অবস্থান নিয়ে আলোচনা ছড়িয়েছে কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত ৷ পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী শেখ নাসিরুদ্দিনের প্রতিক্রিয়া, “গ্রাম পঞ্চায়েত লড়াই গ্রামীণ মানুষের অধিকারের লড়াই, বাঁচার লড়াই ৷ আমাদের এই লড়াই তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে৷ কিন্তু কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেস আর তৃণমূলের যে জোটবদ্ধ লড়াই, তার প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ ভিন্ন ৷ এই লড়াই একের বিরুদ্ধে আরেকজনের ৷” ওই ব্লকেরই আরেক সিপিএম প্রার্থী বদরে আলম জানাচ্ছেন, “পঞ্চায়েতে আমাদের লড়াই তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৷ শাসকদল যেভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য থেকে শুরু করে সবকিছুতে দুর্নীতি করেছে, তা মানুষ মেনে নিতে পারছে না ৷ তাই এই লড়াই ৷ তবে কেন্দ্রের মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার যেভাবে দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে, যেভাবে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারে থাবা বসিয়েছে, সেটাও আর মানা যাচ্ছে না ৷ তাই বিজেপির বিরুদ্ধেও জোটবদ্ধ লড়াইয়ের প্রয়োজন রয়েছে ৷ ওই জোট নিয়ে গ্রামীণ মানুষের কোনও মাথাব্যথা নেই ৷ তাদের কাছে আগে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ৷ গতকাল বিজেপি বিরোধী মঞ্চে কারা থাকল, কারা থাকল না, তা নিয়ে তাদের কিছু যায় আসে না ৷”

বীরভূমের বোলপুরের সিপিএম নেতা বকুল ঘড়ুই বলছেন, রাজ্য আর জাতীয়, দুই রাজনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন ৷ রাজ্যে শাসকের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রয়েছে ৷ কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সেই লড়াইয়ে যদি কেউ সঙ্গী হয়, তাতে সমস্যা কোথায় ! তাছাড়া পটনার ওই বৈঠকে প্রমাণ হয় না যে বাংলায় সিপিএম আর তৃণমূলের জোট হয়ে গেল ৷” বোলপুরেরই তৃণমূল নেতা নরেশ বাউরির বক্তব্য, “আমরা সিপিএমের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই করে বাংলায় ক্ষমতায় এসেছি ৷ এখন ওরা ক্ষমতায় নেই ৷ তাই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করা যেতেই পারে ৷ ভবিষ্যতে সিপিএম যদি ফের ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস শুরু করে, আমরা ফের গর্জে উঠব ৷ তবে আমাদের নেত্রী অনেক বেশি দূরদর্শী ৷ তিনি নিশ্চিতভাবেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মুখ্য ভূমিকা নেবেন ৷” এনিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা আবদুল মান্নান বলছেন, “এখনও বিরোধী জোট বলে কিছু হয়নি ৷ শুধুমাত্র একটা আলোচনা হয়েছে ৷ কিন্তু কংগ্রেসের কোনও কর্মী বিজেপি বা তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতে পারবে না ৷ এই রাজ্যে কংগ্রেসের প্রচুর অফিস তৃণমূল দখল করে নিয়েছে ৷ আমাদের প্রচুর কর্মী খুন হয়েছে ৷ তবে আমি এখনও মনে করি না, তৃণমূল আর বিজেপি একে অন্যের বিরোধী ৷ বাম ও কংগ্রেসকে উৎখাত করতে ওদের গোপন বোঝাপড়া রয়েছে ৷ আগামী লোকসভা ভোটে বিরোধী জোট হবে কি না, তা সময় বলবে ৷ তবে এআইসিসির উপর আমাদের আস্থা রয়েছে ৷ তারা নিশ্চয়ই এই রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীদের সম্মানে আঘাত লাগে এমন কোনও কাজ করবে না ৷ এর আগে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করা নিয়ে এআইসিসি আমাদের মতামত নিয়েছে ৷ আশা করি এবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা একই কাজ করবে ৷”

আরও পড়ুন: কড়া পদক্ষেপ শাসক শিবিরে, 56 জন নির্দল প্রার্থীকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল

অন্যদিকে, সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “কেউ যদি কোনও মঞ্চে হঠাৎ চলে যান, তাঁকে কি মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া যায়! মঞ্চে কেউ যাওয়া মানেই যে তিনি বিজেপি বিরোধী, তার কোনও মানে নেই ৷ মমতাকে কখনই বিজেপি বিরোধী শিবিরে পাওয়া যাবে না ৷ তিনি বিজেপিকে সুবিধেই পাইয়ে দেন ৷ তাই গতকালের মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি নিয়ে অত ভাবার প্রয়োজন নেই ৷ এটা লিখে রাখা যায়, ভারতবর্ষে বিজেপি বিরোধী মঞ্চে মমতা থাকবেন না ৷ গতকালের বৈঠকে একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁকে সৌজন্যমূলক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ৷ এর বেশি কিছু নয় ৷”

মালদা, 24 জুন: বাকি আর মাত্র 15 দিন ৷ বঙ্গে গ্রাম দখলের লড়াই এখন তুঙ্গে ৷ প্রচার পর্বে একের পর এক বাণে তৃণমূলকে ক্ষতবিক্ষত করছে বাম-কংগ্রেস ৷ 34 বছরের ‘অপশাসন’ তুলে ধরে পালটা তোপ দাগছে ঘাসফুল শিবিরও ৷ এরই মধ্যে শুক্রবার দেখা গিয়েছে অন্য ছবি ৷ চব্বিশের লোকসভা ভোটে পদ্মমুক্ত ভারত গড়তে পটনায় বিরোধী নক্ষত্রের মেলা ৷ সেই পুঞ্জে যেমন ছিলেন রাহুল গান্ধি, তেমনই সীতারাম ইয়েচুরি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সংবাদমাধ্যমের আলো শুষে নিয়েছেন ৷ ছিলেন নীতিশ কুমার, লালুপ্রসাদ যাদবের মতো রাজনীতির ময়দানে পোড় খাওয়ারাও ৷ আগামী বছরের লোকসভা ভোটে বিরোধী ঐক্য কেমন হবে, কোন রাসায়নিক ফর্মুলায় সম্পৃক্ত হবে, চাওয়া পাওয়ার হিসাব মিলবে কি না, তা অনেক দূরের কথা ৷ কিন্তু গতকালের বৈঠকের পর অনেক বঙ্গবাসীর মনেই প্রশ্ন তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেসের দ্বৈত অবস্থান নিয়ে ৷ রাজ্যে যখন একে অন্যের বিরুদ্ধে হাতের গুলি পাকিয়ে কুস্তিতে ব্যস্ত, সেই মুহূর্তে পটনায় তিন দলের দোস্তির হিসাব মেলাতে পারছেন না অনেকেই ৷ তবে তিন দলের নীচুতলার নেতা-কর্মীরা কিন্তু বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলেই মেনে নিচ্ছেন ৷ ভোটের প্রচারে কেউ এনিয়ে প্রশ্ন করলে তাঁরা সেভাবেই প্রশ্নকর্তাকে বোঝাচ্ছেন ৷

মালদার মানিকচক এলাকায় সিপিএমের জেলা পরিষদ আসনের প্রার্থী দেবজ্যোতি সিনহা বলেন, “গোটা দেশের প্রেক্ষাপটে যারা মোদির বিরুদ্ধে, তাদের একটা মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে৷ বামপন্থীরা এই বিরোধী মঞ্চে বরাবরের মতো এখনও থাকছে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাঝে মধ্যে থাকেন, মাঝে মধ্যে থাকেন না ৷ মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে ৷ শুক্রবার তিনি বিরোধীদের বৈঠকে ছিলেন ৷ কিন্তু ওই বৈঠকের আহ্বায়ক তিনি নন ৷ আর এক মঞ্চে তৃণমূলের সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে বলতে পারি, দেশের জার্সিতে ফুটবল খেললে আমরা কি মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের হয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে খেলতে পারব না? পঞ্চায়েত নির্বাচনের সঙ্গে দেশের নির্বাচনের প্রেক্ষিত কখনও মেলানো যায় না ৷ রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে আমরা ভাবছি না ৷ এখানে মানুষ বিরোধী জোটকে বেছে নিয়েছে ৷” প্রায় একই বক্তব্য ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস প্রার্থী নীলমণি মণ্ডলের ৷

তাঁর সাফ বক্তব্য, “এই ভোট গ্রামীণ মানুষের অধিকার রক্ষার ভোট ৷ লোকসভা ভোট দেশের নীতি নির্ধারণের ভোট ৷ দুই ভোটের অবস্থান একেবারেই ভিন্ন ৷ দিল্লির গদি থেকে মোদিকে হটাতে বিরোধীদের এক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে ৷ কিন্তু এই রাজ্যে তৃণমূল যে দুর্নীতি চালাচ্ছে, মানুষের উপর যে অত্যাচার করছে, তা থেকে গ্রামের মানুষকে মুক্ত করতে তৃণমূলকে হারাতে হবে ৷ এই লড়াইয়ে বাম-কংগ্রেস এককাট্টা ৷” চাঁচলের জেলা পরিষদ আসনের তৃণমূল প্রার্থী এটিএম রফিকুল হোসেনও দুই নির্বাচনের পটভূমি আলাদা বলে মন্তব্য করেছেন ৷ তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচন হল গ্রামের মানুষকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন যজ্ঞে শামিল করার লড়াই৷ আর লোকসভা ভোট মোদিকে গদিচ্যুত করার লড়াই ৷ দুই ভোটের বিস্তর ফারাক ৷ গতকালের বৈঠকে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলকে এক মঞ্চে দেখে কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন ৷ আমরা তাঁদের দুই ভোটের বিশেষত্বের কথাই বলছি ৷”

শুধু মালদা নয়, গতকালের বৈঠকে যুযুধান তিন দলের এক মঞ্চে অবস্থান নিয়ে আলোচনা ছড়িয়েছে কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত ৷ পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী শেখ নাসিরুদ্দিনের প্রতিক্রিয়া, “গ্রাম পঞ্চায়েত লড়াই গ্রামীণ মানুষের অধিকারের লড়াই, বাঁচার লড়াই ৷ আমাদের এই লড়াই তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে৷ কিন্তু কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেস আর তৃণমূলের যে জোটবদ্ধ লড়াই, তার প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ ভিন্ন ৷ এই লড়াই একের বিরুদ্ধে আরেকজনের ৷” ওই ব্লকেরই আরেক সিপিএম প্রার্থী বদরে আলম জানাচ্ছেন, “পঞ্চায়েতে আমাদের লড়াই তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৷ শাসকদল যেভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য থেকে শুরু করে সবকিছুতে দুর্নীতি করেছে, তা মানুষ মেনে নিতে পারছে না ৷ তাই এই লড়াই ৷ তবে কেন্দ্রের মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার যেভাবে দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে, যেভাবে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারে থাবা বসিয়েছে, সেটাও আর মানা যাচ্ছে না ৷ তাই বিজেপির বিরুদ্ধেও জোটবদ্ধ লড়াইয়ের প্রয়োজন রয়েছে ৷ ওই জোট নিয়ে গ্রামীণ মানুষের কোনও মাথাব্যথা নেই ৷ তাদের কাছে আগে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ৷ গতকাল বিজেপি বিরোধী মঞ্চে কারা থাকল, কারা থাকল না, তা নিয়ে তাদের কিছু যায় আসে না ৷”

বীরভূমের বোলপুরের সিপিএম নেতা বকুল ঘড়ুই বলছেন, রাজ্য আর জাতীয়, দুই রাজনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন ৷ রাজ্যে শাসকের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রয়েছে ৷ কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সেই লড়াইয়ে যদি কেউ সঙ্গী হয়, তাতে সমস্যা কোথায় ! তাছাড়া পটনার ওই বৈঠকে প্রমাণ হয় না যে বাংলায় সিপিএম আর তৃণমূলের জোট হয়ে গেল ৷” বোলপুরেরই তৃণমূল নেতা নরেশ বাউরির বক্তব্য, “আমরা সিপিএমের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই করে বাংলায় ক্ষমতায় এসেছি ৷ এখন ওরা ক্ষমতায় নেই ৷ তাই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করা যেতেই পারে ৷ ভবিষ্যতে সিপিএম যদি ফের ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস শুরু করে, আমরা ফের গর্জে উঠব ৷ তবে আমাদের নেত্রী অনেক বেশি দূরদর্শী ৷ তিনি নিশ্চিতভাবেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মুখ্য ভূমিকা নেবেন ৷” এনিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা আবদুল মান্নান বলছেন, “এখনও বিরোধী জোট বলে কিছু হয়নি ৷ শুধুমাত্র একটা আলোচনা হয়েছে ৷ কিন্তু কংগ্রেসের কোনও কর্মী বিজেপি বা তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতে পারবে না ৷ এই রাজ্যে কংগ্রেসের প্রচুর অফিস তৃণমূল দখল করে নিয়েছে ৷ আমাদের প্রচুর কর্মী খুন হয়েছে ৷ তবে আমি এখনও মনে করি না, তৃণমূল আর বিজেপি একে অন্যের বিরোধী ৷ বাম ও কংগ্রেসকে উৎখাত করতে ওদের গোপন বোঝাপড়া রয়েছে ৷ আগামী লোকসভা ভোটে বিরোধী জোট হবে কি না, তা সময় বলবে ৷ তবে এআইসিসির উপর আমাদের আস্থা রয়েছে ৷ তারা নিশ্চয়ই এই রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীদের সম্মানে আঘাত লাগে এমন কোনও কাজ করবে না ৷ এর আগে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করা নিয়ে এআইসিসি আমাদের মতামত নিয়েছে ৷ আশা করি এবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা একই কাজ করবে ৷”

আরও পড়ুন: কড়া পদক্ষেপ শাসক শিবিরে, 56 জন নির্দল প্রার্থীকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল

অন্যদিকে, সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “কেউ যদি কোনও মঞ্চে হঠাৎ চলে যান, তাঁকে কি মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া যায়! মঞ্চে কেউ যাওয়া মানেই যে তিনি বিজেপি বিরোধী, তার কোনও মানে নেই ৷ মমতাকে কখনই বিজেপি বিরোধী শিবিরে পাওয়া যাবে না ৷ তিনি বিজেপিকে সুবিধেই পাইয়ে দেন ৷ তাই গতকালের মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি নিয়ে অত ভাবার প্রয়োজন নেই ৷ এটা লিখে রাখা যায়, ভারতবর্ষে বিজেপি বিরোধী মঞ্চে মমতা থাকবেন না ৷ গতকালের বৈঠকে একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁকে সৌজন্যমূলক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ৷ এর বেশি কিছু নয় ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.