মালদা, 2 মে : লকডাউনের জেরে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হাতে কোনও কাজ নেই । রুজি রোজগার বন্ধ । বাড়িতে দু'বেলা খাবারের জন্য তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত বিবি সহ ছেলেমেয়ে । এদিকে মুম্বই কাজে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বড় ছেলে ৷ তারও কোনও খবর নেই । এসব নিয়েই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন । এরপরই একটি গাছে বছর সাতচল্লিশের এক শ্রমিকের ঝুলন্ত দেহ মেলে ৷ অনুমান, গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। মৃতের নাম সানাউল্লাহ শেখ ৷ পুরাতন মালদার যাত্রাডাঙার হালনা মহম্মদপুরের ঘটনা ।
সানাউল্লাহ শেখ । শ্রমিকের কাজ করেই সংসার চালাতেন । বড় ছেলে শাহনাজ আলি (18) মাস দেড়েক আগে কাজের জন্য মুম্বইয়ে যায়। কিন্তু লকডাউনের জেরে সেখানেই আটকে রয়েছে সে ৷ কয়েকদিন তার অসুস্থতার খবর পান সানাউল্লাহ । এরপর দিন দশেক ধরে ছেলের কোনও খবর পাওয়া যায়নি ৷ এদিকে নিজের কাজকর্মও বন্ধ। বাড়িতে বিবি ছাড়াও রয়েছে বছর 14-র মেয়ে ও ছ'বছরের একটি ছেলে রয়েছে ৷ কয়েকদিন আগেই ফুরিয়েছে ঘরের খাবার ৷ রেশন থেকে পাওয়া খাদ্যসামগ্রীও শেষ ৷ এই পরিস্থিতিতে পড়শিরা সাধ্যমতো সাহায্য করছিল ৷ কিন্তু একের পর এক সমস্যা আর মানসিক চিন্তায় অবসাদে ভুগছিলেন সানাউল্লাহ ৷ আর সেই অবসাদই প্রাণ কেড়ে নিল তাঁর ।
শওহরের মৃত্যুতে নির্বাক ফরিদা বিবি । আপাতত তিনি কথা বলার অবস্থায় নেই । শোকে ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার । স্থানীয় বাসিন্দা তথা এলাকার তৃণমূল নেতা মহম্মদ শরিফ আলি বলেন, "লকডাউনে সানাউল্লাহের কাজ ছিল না ৷ বড় ছেলেটা বাইরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে ৷ ওঁর কোনও খবর আসছিল না ৷ এদিকে বাড়িতেও তীব্র অভাব । ঠিকমতো খেতে পাচ্ছিল না কেউ ৷ এসব কারণেই চিন্তায় ছিল ৷ আজ বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে একটি গাছে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাওয়া যায় ৷ পরে গ্রামবাসীরা দেহটিকে বাড়িতে নিয়ে আসে ৷ রমজান মাসে এই ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত ৷ যতটা পারছি, ওই পরিবারকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি ৷"
খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে পৌঁছায় মালদা থানার পুলিশ । সানাউল্লাহের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে । মালদা থানার IC শান্তিনাথ পাঁজা জানিয়েছেন, ঘটনায় আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ৷