মালদা, 14 ডিসেম্বর: এবার পুলিশ আধিকারিকেরই জমি দখল শুরু করেছে মাফিয়ারা (Land Mafia) ৷ একাধিকবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেও বিচার পাননি ওই পুলিশ অফিসার ৷ শেষ পর্যন্ত আদালত ও মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি ৷ ঘটনাটি ঘটেছে খোদ মালদা শহরে ৷ তবে এনিয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি জেলার পুলিশকর্তারা ৷
ওই পুলিশ আধিকারিকের নাম রতনচন্দ্র মণ্ডল ৷ এএসআই রতনবাবু আগে রতুয়া থানায় কর্মরত ছিলেন ৷ বর্তমানে তিনি মালদা থানার অন্তর্গত মঙ্গলবাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ৷ কয়েক বছর আগে তিনি মালদা শহরের চন্দন পার্কে রাজ্য সড়কের ধারে তিন কাঠা জমি কেনেন ৷ সেই জমির দলিল, রেকর্ড সহ সবকিছু তাঁর নামেই ছিল ৷ কিন্তু হঠাৎ করেই তাঁর জমির দলিল অন্যের নামে হয়ে যায় ৷ এরপরেই তাঁর জমি দখল করার চেষ্টা শুরু হয় ৷ ইতিমধ্যে জমির কিছুটা অংশ দখলও হয়ে গিয়েছে ৷ এনিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁকে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ৷ পরিবার নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন তিনি (Land of police officer encroached by mafias) ৷
রতন বলেন, "একজন পুলিশকর্মী হয়েও আমাকে জমি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে ৷ আমার জমি 2019 সাল থেকে ওরা দখল করার চেষ্টা করছে ৷ বাধা দিলে ওরা থেমে যাচ্ছে, কিছুদিন পর ফের জমি দখলের কাজ শুরু করছে ৷ যখন রতুয়ায় ছিলাম, তখন বাড়ি আসার সময় একদিন দেখি, আমার জমিতে মাটি ফেলা হয়েছে ৷ আমি এনিয়ে প্রশ্ন করলে ওরা বলে, ভুল করে মাটি ফেলেছে ৷ খুব তাড়াতাড়ি মাটি সরিয়ে নেবে ৷ সেই সময় প্রণব মণ্ডল, গণেশ ঘোষ আর চন্দন মাহাতোর নাম আমি জানতে পারি ৷ ওরা সবাই জমি মাফিয়া ৷ এনিয়ে আমি 5-6 বার ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ করেছি ৷ কিন্তু থানা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ৷ আমি রতুয়া থেকে এসে তো এখানে অ্যাকশন করতে পারি না ! ওরা জোর করে আমার জমির কিছুটা অংশ ঘিরে নিয়েছে ৷ প্রশাসনের সহায়তা না পেলে আমি আদালতে যেতে বাধ্য হব ৷ মুখ্যমন্ত্রীরও দ্বারস্থ হব ৷ এই মাফিয়াদের দাপট দেখে পরিবার নিয়ে আমি আতঙ্কেই রয়েছি ৷"
এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে একহাত নিয়েছেন বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি ৷ তিনি বলেন, "এই সরকারের আমলে পশ্চিমবঙ্গে পুলিশেরও কোনও নিরাপত্তা নেই ৷ তাঁদের জমিই এখন দখল হয়ে যাচ্ছে ৷ থানায় ঢুকে তাঁদের মারা হচ্ছে ৷ অহরহ এই ঘটনা ঘটছে ৷ মালদা জেলাও তার ব্যতিক্রম নয় ৷ রতনবাবু একজন পুলিশের এএসআই ৷ তাঁর নিজস্ব জমি রয়েছে ৷ জমির দলিলও তাঁর ৷ সেই জমিই এখন মাফিয়ারা দখল করে নিচ্ছে ৷ দেখা যাবে, এই জমি মাফিয়াদের সঙ্গে তৃণমূলের কিছু নেতা আর পুলিশের একটা অংশ জড়িয়ে রয়েছে ৷ তারা টাকা নিয়ে পুলিশের জমি দখল করিয়ে দিচ্ছে ৷ এই সরকারের আমলে এর থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না ৷ এখানে পুলিশ দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে ৷ পুলিশের উপর থেকে মানুষের বিশ্বাসও উঠে গিয়েছে ৷"
আরও পড়ুন: মাফিয়াদের দখলে আদিবাসীদের জমি, রাত পর্যন্ত অভিযোগ শুনে আধিকারিককে ধমক জেলাশাসকের
বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, "আমার মনে হয় না, এই ঘটনার সঙ্গে শাসকদলের কেউ জড়িত ৷ জমি মাফিয়ারা কোনওদিন একটি নির্দিষ্ট দলের অধীনে থাকে না ৷ ওরা যখন যেখান থেকে সুবিধে পায়, সেদিকেই ভিড়ে যায় ৷ যদি ওই পুলিশ অফিসারের কাগজপত্র ঠিক থাকে তবে তাঁর অধিকার পাওয়া উচিত ৷ প্রয়োজন হলে আমরাও সেভাবে বলব ৷"