মালদা, 3 জুন : ভাল ফলের আশা ছিল। কিন্তু এক্কেবারে রাজ্যে দ্বিতীয়। নাহ! সেটা কখনও ভাবেনি কৌশিকী। অকপটে স্বীকার করল সেকথা (koushiki sarkar from malda ranked 2nd in madhyamik 2022) ।
শুক্রবার সকালে পর্ষদের তরফে 2022-এর মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই গাজোলের বিধানপল্লিতে ভিড় মানুষের। সেখানেই বাড়ি মৃণালকান্তি সরকারের। স্থানীয় আলাল হাইস্কুলের ভূগোলের শিক্ষক তিনি। স্ত্রী চন্দ্রিকা লাহা দক্ষিণ দিনাজপুরের মেহেন্দিপাড়ায় একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তাঁদের মেয়ে কৌশিকী শুধু গাজোল নয়, গোটা জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছে। 692 নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে রাজ্যে যুগ্ম দ্বিতীয় হয়েছে সে। এখনও হাতে মার্কশিট না পেলেও জানা গিয়েছে, তার প্রাপ্ত নম্বর বাংলা ও ভূগোল বিষয়ের প্রতিটিতে 99 করে ৷ অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞান ও জীবন বিজ্ঞানের প্রতিটিতে 100 করে, ইংরেজিতে 98 ও ইতিহাসে 96।
প্রবল ভিড়ের চাপ কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত দুপুরে ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয় কৌশিকী। জানায়, "ভাল ফল হবে বলে আশা ছিল। আমার হিসাব বলছিল, 685 থেকে 690 নম্বরের মধ্যে পেতে পারি। কিন্তু একেবারে যে রাজ্যে দ্বিতীয় হয়ে যাব, তা কখনও ভাবতে পারিনি। রেজাল্ট এখনও হাতে পাইনি। অঙ্ক আমার খুব প্রিয় বিষয়। তবে সবচেয়ে বেশি সময় দিয়েছি জীবনবিজ্ঞানে। পড়াশোনার কোনও বাঁধাধরা সময় আমার ছিল না। যখন ইচ্ছে হত, পড়তে বসে যেতাম। আবৃত্তি আর গানের চর্চা আমার পড়াশোনাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে। পড়তে পড়তে হাঁফিয়ে গেলে আবৃত্তির খাতা খুলে খানিকটা চর্চা কিংবা হারমোনিয়ামটা নিয়ে একটু গান করতাম। এতে আমার ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। এই সাফল্যের পিছনে আমার বাবা-মা, পরিবারের সব সদস্য, স্কুলের শিক্ষক-সহ ছ'জন গৃহশিক্ষকের কাছ থেকেই যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছি। এই সাফল্য আমি তাঁদের সবাইকেই উৎসর্গ করতে চাই। তবে এটা সবেমাত্র জীবনের প্রথম ধাপ। এরপর উচ্চমাধ্যমিক এবং তার পরবর্তী বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা রয়েছে। সেখানে আরও কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। আমি গাজোলেই উচ্চমাধ্যমিক পড়তে চাই। ভবিষ্যতে একজন আদর্শ চিকিৎসক হওয়াই আমার লক্ষ্য।"
আরও পড়ুন : ফের শীর্ষে বাঁকুড়া, মেধা তালিকায় 11 জন ; প্রথম স্থানাধিকারীকে নিয়ে বেরল মিছিল
কৌশিকীর মা চন্দ্রিকাদেবী বলেন, "মেয়ের জন্য মা হিসাবে আমি অসম্ভব গর্বিত। আমি তা ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না। ছোট থেকেই পড়াশোনা, গানবাজনা, আবৃত্তিপাঠ, নাচ প্রভৃতি বিষয়ে ওর খুব আগ্রহ ছিল। ওকে পড়াশোনার জন্য সবসময় উৎসাহ দিতাম। তবে ওর উপর কখনও কিছু চাপিয়ে দিইনি। আমি প্রত্যেককেই বলব, বাচ্চা যেটা ভালবাসে, সেটাই করতে দিন। বাচ্চার উপর কিছু চাপিয়ে দেবেন না। তবে দেখতে হবে, বাচ্চা যেন বিপথে না যায়। তবে ছেলেকে নিয়ে এখনও কিছু ভাবিনি। ও এখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। ওকে আমরা সবরকম সহায়তা করতে তৈরি রয়েছি। মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার জন্য বিশেষ কোচিংয়ের বিষয়টি মেয়ে নিজেই দেখছে।"