মালদা, 20 এপ্রিল : মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সাংসদের ৷ “রাজ্যের FCI গুদামগুলিতে 1 লক্ষ 25 হাজার মেট্রিক টন চাল এসে পড়ে রয়েছে৷ কিন্তু রাজ্য সরকার সেই চাল তুলছে না৷ বিপন্ন মানুষ খেতে পাচ্ছে না৷ আর তৃণমূল গরিবদের খাদ্য নিয়ে রাজনীতি করছে৷ মুখ্যমন্ত্রী রাজধর্ম পালন করছেন না” ইটিভি ভারতকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু৷
কোরোনা মোকাবিলায় টানা 27 দিনের লকডাউনে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে দুস্থ মানুষেরা৷ এই সমস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার৷ বিনা পয়সায় রেশন দেওয়া হচ্ছে৷ অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এই সমস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে৷ কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়৷ অনেক জায়গা থেকেই অভিযোগ এসেছে, বিপদের এই সময়ে কিছু রেশন ডিলার গরিব মানুষের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে কালোবাজারি করছে৷
এমনই তার প্রমাণও মিলেছে এই জেলার বেশ কিছু জায়গায়৷ রাতের অন্ধকারে রেশন সামগ্রী পাচার করতে গিয়ে পুরাতন মালদায় হাতেনাতে ধরা পড়েছে এক গাড়িচালক৷ গ্রামবাসীদের বিক্ষোভে পুলিশ অভিযুক্ত রেশন ডিলারের ছেলেকে গ্রেপ্তারও করেছে৷ তবে পলাতক অভিযুক্ত রেশন ডিলার৷ একই অভিযোগ উঠেছে জেলার অন্যান্য প্রান্তেও৷
লকডাউন চলাকালীন অনেক জায়গাতেই নিরন্ন মানুষ যে প্রায় না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে তা নিয়ে ইটিভি ভারতে খবরও প্রকাশিত হয়েছে৷ এবার এনিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু৷ তিনি এনিয়ে বিঁধেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে৷ তাঁর সাফ কথা, রাজ্য সরকারের জন্য এখানকার গরিব মানুষ দু’বেলা পেট ভরে খেতে পাচ্ছে না৷ এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক অঙ্কও ৷
সাংসদ বলেন, “আমাদের রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সরকার কিংবা তথাকথিত মা-মাটি-মানুষের দল বিপদের এই সময় গরিব মানুষের পাশে সেভাবে দাঁড়ায়নি৷ অন্তত আমরা তা দেখতে পাচ্ছি না৷ প্রধানমন্ত্রী লকডাউন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ঘোষণা করেছেন, দেশের 81 কোটি গরিব মানুষকে 5 কিলো চাল, এক কেজি করে ডাল দেওয়া হবে৷ সেই খাদ্যসামগ্রী তিনি বরাদ্দও করে দিয়েছেন৷ কোনও গরিব মানুষ যেন এই পরিস্থিতি না খেয়ে না থাকে, অন্তত নুন-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারে, তার জন্যই প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা৷ দেশে দুটি প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার রেশন বিলি করে৷ আগে এই দুই প্রকল্পে 2 টাকা কিলো দরে চাল কিনে নিতে হত৷ এখন দুই প্রকল্পেই বিনা পয়সায় খাদ্যসামগ্রী বিলি করা হচ্ছে৷ একইভাবে রাজ্য সরকারও RKSY প্রকল্পেও এখন বিনামূল্যে খাবার বিলির কথা ঘোষণা করেছে৷ সেই প্রকল্পে গরিব মানুষকে খাবার দেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পে এখনও রাজ্য সরকার খাদ্যসামগ্রী বিলি করা হচ্ছে না৷ গতকালই আমাদের রাজ্য সভাপতি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে রাজ্যের FCI গোডাউনে 1 লক্ষ 25 হাজার মেট্রিক টন চাল এসে পড়ে রয়েছে৷ রাজ্য সরকার সেই চাল তুলছে না৷“
তাঁর কথায়, “এই চাল রাজ্যের আড়াই থেকে তিন কোটি গরিব মানুষের মধ্যে বিলি করা যেত৷ রাজ্য সরকারের এই কাজে গরিব মানুষ আরও বিপন্ন হচ্ছে৷ আসলে উনি ভাবছেন, গরিব মানুষ যত বিপদে পড়বে, ততই তিনি রাজনৈতিক ফায়দা লুটবেন৷ আজও দেখলাম, সারা রাজ্যে তৃণমূল কীভাবে রেশন সামগ্রী লুট করছে৷ চাল লুট করে তারা নিজেদের পার্টি অফিসে জমা করছে৷ আমি বলব, মুখ্যমন্ত্রী শুধুমাত্র কোনও রাজনৈতিক দলের নয়৷ তিনি গোটা রাজ্যের মানুষের মুখ্যমন্ত্রী৷ সব মানুষের জন্যই তিনি এক৷ কিন্তু তিনি তাঁর রাজধর্ম পালন করছেন না৷ তাঁর কাছে আমার আবেদন, FCI গোডাউনগুলিতে জমে থাকা চাল অবিলম্বে সংগ্রহ করে তিনি যেন গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন৷ প্রয়োজনে আমি এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও পাঠাব৷”