মালদা, 22 অক্টোবর: মালদার ইংরেজবাজার ব্যায়াম সমিতির কালীপুজো ৷ এ এক অন্য কালীপুজো ৷ এই পুজো রাতে হয় না ৷ অমাবস্যা তিথিতেও নয় ৷ চতুর্দশী তিথিতে দিনের আলোয় এই পুজো হয় (Kali Puja 2022) ৷ রয়েছে আরও চমক ৷ এখানে দেবী চতুর্ভূজা নন ৷ তিনি দশভূজা ৷ রয়েছে 10টি করে হাত ও পা ৷ এখানে শিবের কোনও অস্তিত্ব নেই ৷ তার পরিবর্তে রয়েছে দুটি অসুরের মূর্তি ৷ সেই ব্রিটিশ আমল থেকে একই রীতি মেনে আজও এখানে মহাকালীর পুজো হয়ে আসছে (Kali Puja of Malda English Bazar Byam Samiti) ৷
1930 সালে এই পুজোর পত্তন করেন মালদা শহরের পুড়াটুলি এলাকার কিছু যুবক ৷ তাঁদের মননে তখন দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন ৷ নিজেদের মানসিক ও শারীরিকভাবে শক্তিশালী করতে তাঁরা একটি ব্যায়ামাগার খোলেন ৷ নাম দেন, ইংরেজবাজার ব্যায়াম সমিতি ৷ দেশকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্য সফল করতে তাঁরাই এই কালীপুজোর পত্তন করেন ৷ মালদা থেকে সামান্য দূরেই বিহারের বিন্দুবাসিনী পাহাড় ৷ সেই পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা রয়েছে মহাকালীর মূর্তি ৷ ওই যুবকরা সেই মূর্তিকেই নিজেদের আরাধ্যা হিসাবে বেছে নেন ৷ স্বামীর দেহে পা-রেখে শক্তির দেবীর লজ্জায় রাঙা মুখের পরিবর্তে তাঁরা দেবীর অসুর সংহারী রূপকেই বেছে নেন ৷ হয়তো এর পিছনে মানুষের উপর ব্রিটিশদের নির্মম অত্যাচার কাজ করেছিল ৷ হয়তো ওই স্বাধীনতা সংগ্রামী যুবকের দল ইংরেজ শাসকদেরই অসুরের সঙ্গেই তুলনা করেছিলেন ৷ সেই মূর্তিই তাঁরা নিজেদের আরাধ্যা করে পুজো শুরু করেন ৷
আরও পড়ুন: বালিকা রূপে দেখা দিয়েছিলেন দেবী ! জেনে নিন ময়দা কালীবাড়ির নেপথ্যের কাহিনি
পরবর্তীতে তাঁরা জানতে পারেন, পুরাণের শ্রীশ্রী চণ্ডী গ্রন্থের বৈকৃতিক রহস্য সূত্রে এই মূর্তির উল্লেখ রয়েছে ৷ যে সময় এই পুজোর সূচনা হয় সেই সময় সারা দেশে ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ৷ মারের বদলা হিসেবে পালটা মারই বেছে নিয়েছেন অকুতোভয় স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ৷ তাই ইংরেজ শাসকের অত্যাচারের মাত্রাও চরমে উঠেছে ৷ রাতবিরেতে কাউকে বাইরে দেখলেই খাঁকি উর্দির দল তাঁর উপর চরম অত্যাচার চালাচ্ছিল ৷ তাই পুড়াটুলির সংগ্রামী যুবকরা রাতের বদলে দিনেই মহাকালীর পুজো শুরু করেন ৷ অমাবস্যার রাতে বিদেশি শাসক পুজো করতে না দেওয়ায় চতুর্দশী তিথিতে দুপুরবেলাতেই মায়ের আরাধনা শুরু করেন তাঁরা ৷ সেই থেকে দুপুরেই এখানে কালীপুজো হয়ে আসছে ৷
পুড়াটুলি এলাকায় এই পুজোর প্রবর্তন হলেও সময়ের সঙ্গে পুজোর জায়গার কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে ৷ শেষ পর্যন্ত 1985 সালে শহরের গঙ্গাবাগ এলাকায় পাকাপাকিভাবে এই পুজো সরে আসে৷ একসময় গঙ্গাবাগের বাসিন্দা ছিলেন প্রখ্যাত তান্ত্রিক প্রফুল্লধন মুখোপাধ্যায়৷ তখন এই এলাকাটি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ ৷ সাধনার জন্য সেখানেই তিনি পঞ্চমুণ্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৷ 1985 সালে সেই আসনের উপরেই তৈরি হয়েছে মহাকালীর বেদি ৷ গড়ে উঠেছে সুদৃশ্য মন্দির (Malda English Bazar Byam Samiti) ৷
আরও পড়ুন: কন্যাহারা পিতার আর্তিতে সাড়া দিয়েছিলেন মা করুণাময়ী !
16 বছর ধরে মহাকালীর মূর্তি গড়ছেন শহরেরই মৃৎশিল্পী অষ্টম চৌধুরী৷ তিনি বলেন,“আগে শিবু পাল এই মূর্তি গড়তেন৷ তিনি প্রয়াত হয়েছেন ৷ 16 বছর ধরে আমি প্রতিমা বানাচ্ছি ৷ এই মূর্তির 10টি মাথা, হাত ও পা৷ মায়ের হাতে ও পায়ে একটি করে অসুর ৷ চতুর্দশীর দুপুরে এই পুজো হয় ৷"
অন্যদিকে, ইংরেজবাজার ব্যায়াম সমিতির সম্পাদক পাপান চৌধুরী বলেন, “1930 সালে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের হাতে ব্যায়াম সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৷ একইসঙ্গে চালু হয়েছিল মহাকালী পুজো ৷ তান্ত্রিক মতে এই পুজো হয় ৷ ছাগবলিও হয় ৷ মহাকালীর আদি রূপে তাঁর 10টি মাথা, হাত ও পা৷ সেখানে শিবের কোনও অস্তিত্ব নেই৷ প্রথম থেকে মায়ের সেই রূপই এখানে পূজিত হয়ে আসছে ৷ রবিবার বিকেল 4টা 59 মিনিটে চতুর্দশী তিথি শুরু হতেই এখানে পুজো শুরু হয় ৷”