মালদা, 11 জুন : অনুপ্রবেশের অভিযোগে কালিয়াচকের ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ধৃত চিনা নাগরিক কি সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে ভারতে কাজ করছিল? শুধু বিএসএফ নয়, সেই সন্দেহ প্রকাশ করছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ৷ ওই চিনা নাগরিকের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগেই লখনউয়ের অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড মামলা রুজু করেছে ৷
বিএসএফ সূত্রের খবর, তাকে জেরা করতে ইতিমধ্যে লখনউ এটিএসয়ের একটি দল মালদায় এসে পৌঁছেছে ৷ এদিকে গতকাল দিনভর ধৃতকে জেরা করে বিএসএফয়ের হাতেও কিছু তথ্য এসেছে ৷
উল্লেখ্য, গতকাল সকালে বেআইনিভাবে এদেশে প্রবেশের দায়ে কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের আকন্দবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মিলিক সুলতানপুর গ্রাম থেকে হান জুনেই নামে 36 বছরের এক চিনা নাগরিককে গ্রেফতার করে বিএসএফ ৷ পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তার বাড়ি চিনের হুবেই প্রদেশে ৷ সীমান্তে থাকা জওয়ানরা তাকে থামতে বললেও সে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে ৷ তাড়া করে তাকে ধরে ফেলেন জওয়ানরা ৷
হান জুনেইয়ের কাছ থেকে একটি দামি ল্যাপটপ, দুটি আইফোন, একটি বাংলাদেশি সিমকার্ড, একটি ভারতীয় সিমকার্ড, দুটি চিনা সিমকার্ড, একটি পেনড্রাইভ, মানি ট্র্যানজাকশন মেশিন, দুটি মাস্টারকার্ড, আমেরিকান ডলারসহ বেশ ভাল পরিমাণে বাংলাদেশী ও ভারতীয় টাকা উদ্ধার করা হয় ৷ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নিয়ে আসা হয় ইংরেজবাজারের মহদিপুর বিএসএফ ক্যাম্পে ৷ তার ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভ খতিয়ে দেখে চোখ কপালে ওঠে বিএসএফ কর্তাদের ৷ জানা যাচ্ছে, সেই দুটিতে এদেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক তথ্য রয়েছে ৷
ধৃত চিনা নাগরিকের পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথি খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে, বিজনেস ভিসা নিয়ে গত 2 জুন সে বিমানে চড়ে ঢাকায় আসে ৷ সেখানে এক চিনা বন্ধুর বাড়িতে ছিল ৷ 8 জুন সে বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার সোনা মসজিদ এলাকায় একটি হোটেলে ওঠে ৷ মহদিপুর সীমান্ত পেরোলেই সোনা মসজিদ ৷ 10 জুন সকালে হান অরক্ষিত ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে ঢোকার চেষ্টা করছিল ৷
জেরায় হান জুনেই জানিয়েছেন, এবারই প্রথম নয়, এর আগেও সে চারবার ভারতে এসেছে ৷ 2010 সালে সে হায়দরাবাদে কিছুদিন ছিল ৷ এরপর 2019 সালের পর তিনবার দিল্লি ও গুরুগ্রামে আসে ৷ বিএসএফ কর্তাদের সে জানায়, গুরুগ্রামে ‘স্টার স্প্রিং’ নামে তার একটি হোটেল আছে ৷ ওই হোটেলের কিছু কর্মী চিনা নাগরিক, বাকিরা ভারতীয় ৷ সম্প্রতি সে হুবেই ফিরে যায় ৷ চিনে থাকাকালীন তার ব্যবসার অংশীদার সান জিয়াং তাকে 10-15টি ভারতীয় সিমকার্ড পাঠায় ৷ তিনি এবং তার স্ত্রী চিনে সেই সিমকার্ডগুলি রিসিভ করে ৷
আরও পড়ুন : কালিয়াচক সীমান্তে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ধৃত চিনা নাগরিক
জুনেই আরও জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে সান জিয়াংকে লখনউ এটিএস গ্রেফতার করে ৷ সান ফোন মারফৎ তাঁদের জানায়, তাঁর বিরুদ্ধেও লখনউ এটিএস মামলা রুজু করেছে ৷ এর জন্য তিনি ভারতীয় ভিসা পাচ্ছিলেন না ৷ কিন্তু বাংলাদেশ ও নেপালের ভিসা পেয়ে যান ৷ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন তিনি ৷
গতকাল রাতেই বিএসএফয়ের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের তরফে মালদায় কর্মরত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, হান জুনেই একজন কুখ্যাত অপরাধী ৷ দীর্ঘদিন ধরে তার খোঁজ চলছে ৷ দেশের সমস্ত গোয়েন্দা সংস্থা একযোগে তার খোঁজ চালাচ্ছে ৷ সেই খবর পেয়ে আরও তৎপর হয়ে ওঠেন মালদার বিএসএফ কর্তারা ৷
ধৃতের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভ ঘেঁটে তাঁরা দেখেন, সেসবে দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক তথ্য মজুত রয়েছে ৷ এদিকে হান জুনেইয়ের গ্রেফতারির খবর পেয়ে গতকাল মাঝরাতেই মালদায় এসে পৌঁছোয় লখনউ এটিএসের একটি দল ৷ এই মুহূর্তে ওই দলটি হান জুনেইকে জেরা করছে বলে সূত্রের খবর ৷