মালদা, 11 ফেব্রুয়ারি : আপাতত স্বাভাবিক গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ৷ নিজেদের দাবি সম্পূর্ণ পূরণ না হলেও লাগাতার আন্দোলনের পথ থেকে সরে এসেছেন শিক্ষাকর্মীরা ৷ তৃণমূল সমর্থিত শিক্ষাকর্মীদের সংগঠনের সেই আন্দোলন কি স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাহার করা হয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রত্যেককে প্রতি মাসে যে ৪২০০ টাকা অন্তর্বর্তী ভাতার সূত্র দিয়েছিল, তাতেই কি খুশি হয়ে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন? নাকি এর পিছনে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ রয়েছে ৷ এ'নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি উত্তরও খুঁজছে জেলার শিক্ষামহল ৷ যদিও আন্দোলনকারীরা এ'নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন ৷ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে আশঙ্কার আবহ থেকেই গেছে ৷ ফের কবে শিক্ষাকর্মীরা আন্দোলন শুরু করবেন তা নিয়ে কৌতূহল সবারই ৷
তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পরপর দুই দফায় শিক্ষাকর্মীদের 10 দফা আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অচল হয়ে যাওয়ার ঘটনা মেনে নিতে পারেনি শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ বিধানসভা নির্বাচনের আগে এমনতর আন্দোলন যে শিক্ষামহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও মেনে নিচ্ছে না, তা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছিল শাসকদল ৷ বিশেষ করে শিক্ষাকর্মীদের এই আন্দোলন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজকর্মে নয়, প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল স্বাভাবিক পঠনপাঠনেও ৷ যদিও আন্দোলনরত শিক্ষাকর্মীরা বারবার দাবি করেছেন, তাঁদের আন্দোলন পঠন-পাঠনে কোনও প্রভাব ফেলেনি ৷ কিন্তু তাঁদের আন্দোলনে ক্লাসরুমগুলি যেমন নোংরা হয়ে থাকছিল, শৌচাগারগুলিও কার্যত ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠেছিল ৷ এ'নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন পড়ুয়ারাও ৷ আন্দোলন চলাকালীন রাতভর ঘেরাও করে রাখা হয়েছে একাধিক আধিকারিককে ৷ এ'সবই প্রশ্ন তুলেছিল শাসকদলের অন্দরে ৷ জানা গেছে, এ'নিয়ে বিরক্ত হয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও ৷ তিনি আন্দোলনকারী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশ দেন জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুরকে ৷ কিন্তু সেই বৈঠকও নিষ্ফলা হয় ৷ শিক্ষামন্ত্রীর ডাকে কলকাতা চলে যান মৌসম ৷ গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন শিক্ষামন্ত্রী ৷ তারপরই এক আন্দোলনকারী শিক্ষাকর্মীকে অভব্য আচরণের জন্য সাসপেন্ড করেন উপাচার্য স্বাগত সেন ৷ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষাকর্মীরা ৷ আজই কলকাতা থেকে মালদায় ফিরেছেন মৌসম ৷
জেলায় ফিরে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তিনি ETV ভারতকে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, “শিক্ষাকর্মীদের আন্দোলন নিয়ে শিক্ষামহলে যে প্রভাব পড়েছে তা অবশ্যই আমরা ভালো চোখে দেখছি না ৷ গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সুনাম রয়েছে ৷ অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত ৷ এর সঙ্গে মালদার সম্মানও জড়িয়ে রয়েছে ৷ কিন্তু এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে ৷ এটা দুর্ভাগ্যজনক ৷ এ'নিয়ে আমি কয়েকদিন আগে পার্থবাবুর কাছে গেছিলাম ৷ তাঁকে আমি আবেদন জানিয়েছি, তিনি যেন ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়টি দেখেন ৷ আমার মনে হয়, যে সমস্যাগুলি সামনে আসছে তার কিছুটা তৈরি করা ৷ কীভাবে সেই সমস্যাগুলি সমাধান করা যায় তা দেখার জন্য পার্থবাবুকে আর্জি জানিয়েছি ৷ আমার মনে হয়, এই সমস্ত সমস্যা দূর করতে খানিকটা কড়া পদক্ষেপ করা প্রয়োজন ৷ সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধানের কথা ভাবতে হবে ৷ বর্তমানে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রচুর টাকা দিচ্ছেন ৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে পড়ুয়ারা পড়তে আসছেন ৷ তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যায় না ৷ পার্থবাবু নিজেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝামেলা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৷ আমরাও চাইছি, নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত সমস্যার সমাধান হোক ৷ তবে সমস্যা তৈরির পিছনে অনেকেই জড়িয়ে রয়েছে ৷ তবে এটা এমন কিছু নয়, যাতে তার সমাধান হয় না ৷ তবে সবার আগে সমস্যার শিকড় খুঁজে বের করতে হবে ৷”
মৌসম আরও বলেন, “আমি পার্থবাবুকে বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসিত সংস্থা ৷ তাই শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরও এখানকার সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুক ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই আমাদের দলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ৷ সেই কারণেই সমস্যার সমাধানে দলেরও কিছু ভূমিকা থেকে যাচ্ছে ৷ কিন্তু এর বেশি আমাদের মতো রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়িত থাকা উচিত নয় বলেই আমি মনে করি ৷ পার্থবাবু ব্যক্তিগতভাবে এখানকার রাশ ধরুন ৷ আমি সেটাই চাই ৷ প্রয়োজনে তিনি আমাদের এ'নিয়ে কোনও নির্দেশ দিতে পারেন ৷ পার্থবাবুর সঙ্গে এ'নিয়ে আমার দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে ৷ তিনিও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন ৷ আমি আশাবাদী, খুব তাড়াতাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ৷ এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর কোনও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তা কর্তৃপক্ষই তদন্ত করে দেখবে ৷ এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইস্তফাপত্র পেশ করেছেন ৷ খুব তাড়াতাড়ি নতুন উপাচার্যও এখানে নিয়োগ করা হবে ৷ আমরা সবাই মিলে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই ৷ তবে যাই হোক না কেন, শিক্ষাকর্মীদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও তাঁদের এহেন আন্দোলন আমি সমর্থন করছি না ৷”