মালদা, 24 নভেম্বর: আধার কার্ড নিয়ে নয়া প্রতারণার ছক ৷ শিকার গ্রামীণ মহিলারা ৷ ঋণ দেওয়ার নামে ভুল বুঝিয়ে তাঁদের আধার কার্ডের তথ্য এবং আঙুলের ছাপ নিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক বেসরকারি ঋণ প্রদানকারী সংস্থার কর্মীর বিরুদ্ধে ৷ অভিযোগ, সেই নথি ব্যবহার করে ওই সংস্থা থেকেই মহিলাদের নামে ঋণ তোলা হয়, যা জানেনই না ওই মহিলারা ৷ পরে তাঁদের কাছে ঋণ পরিশোধের নোটিশ আসায় বিষয়টি জানাজানি হয় ৷ এমনকি ওই সংস্থার কর্মীরা তাঁদের বাড়ি গিয়ে ঋণ পরিশোধের চাপ দিতেও শুরু করেন ৷ শুক্রবারও সংস্থার এক কর্মী ওই মহিলাদের কাছে ঋণ পরিশোধের জন্য গিয়েছিলেন ৷ তখনই ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা তাঁকে আটক করে রাখে ৷ অনেক বোঝানোর পর তাঁকে ছাড়া হয় ৷ ঘটনাটি ঘটেছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গাংনদীয়া গ্রামে ৷ তবে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি ৷
ঋণ প্রদানকারী ওই সংস্থাটির নাম ভারত ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন লিমিটেড ৷ আগে এর নাম ছিল এসকেএস মাইক্রোফিনান্স লিমিটেড ৷ হায়দরাবাদের সংস্থা এটি ৷ মালদার অনেক জায়গায় তাদের অফিস রয়েছে ৷ সংস্থাটি গ্রামীণ মহিলাদের ঋণ দিয়ে থাকে ৷ ঋণগ্রহীতারা কিস্তির মাধ্যমে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারেন ৷ গাংনদীয়া গ্রামের বেশকিছু মহিলার অভিযোগ, তাঁরা কোনও ঋণ নেননি ৷ অথচ এই সংস্থার লোকজন ঋণের টাকা শোধ করার জন্য তাঁদের চাপ দিচ্ছে ৷
এদিনও বিকি নুনিয়া নামে সংস্থার এক কর্মী মহিলাদের কাছে ঋণ পরিশোধের কিস্তির টাকা আদায় করতে যান ৷ ক্ষিপ্ত মহিলারা তাঁকে আটকে রাখেন ৷ তখনই বেরিয়ে আসে আসল তথ্য ৷ কয়েক মাস আগে এই সংস্থারই এক কর্মী শিবা রায় গাংনদীয়া গ্রামে বেশ কয়েকজন মহিলাকে ঋণ দেওয়ার টোপ দিয়ে ওই মহিলাদের আঙুলের ছাপ ও আধার কার্ডের তথ্যও হাতিয়ে নেন ৷ তিনি বলে যান, তিনি প্রত্যেককে বড় অংকের ঋণের ব্যবস্থা করে দেবেন ৷ কিন্তু মহিলাদের কেউই ঋণের টাকা পাননি ৷ উলটে তাঁদের কাছে ঋণ শোধের চাপ আসতে শুরু করে ৷ তাঁরা শিবা রায়ের খোঁজ নেন ৷ জানতে পারেন, তিনি ভালুকা থেকে অন্য কোনও অফিসে বদলি হয়ে গিয়েছেন ৷
এক প্রতারিতা মহিলা শোভা দাস বলছেন,“প্রথমে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম ৷ সেটা শোধ করার পর বলল, একটা ছোট ঋণ আমার নামে এসেছে ৷ আমি সেই ঋণ নিতে রাজি ছিলাম না ৷ শিবা বলেছিল, অফিসে গিয়ে ওই ছোট ঋণের টাকা যেন ফিরিয়ে দিই ৷ আমি টাকা তুলে তা মিটিয়ে দিই ৷ শিবা জানায়, আমাকে আর কোনও টাকা শোধ দিতে হবে না ৷ পরে আমার ফের টাকার প্রয়োজন পড়ে ৷ ঋণ নিতে সংস্থার অফিসে যা ই৷ তখন ওরা বলে, আমাকে ঋণ দেবে না ৷ আমার নাকি আগের ঋণের টাকা শোধ হয়নি ৷ আমাকে নাকি এখনও ৪৫ সপ্তাহ ধরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে ৷ এসবের জন্য শিবাই দায়ী ৷”
অন্যদিকে, মহিলাদের হাতে আটক সংস্থার কর্মী বিকি নুনিয়ার বক্তব্য, “আমি ন’মাস আগে এই সংস্থায় যোগ দিয়েছি ৷ প্রথমে চাঁচল অফিসে ছিলাম ৷ মাস দুয়েক আগে তুলসিহাটা অফিসে এসেছি ৷ এখানে কী হয়েছে, আমার জানা নেই ৷ সব শুনে আমি এই মহিলাদের হায়দরাবাদের হেড অফিসে ফোন করতে বলেছিলাম ৷ কয়েকজন স্থানীয় অফিসে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন ৷ আমি এই মহিলাদের সমস্যা মেটাতে পারব না ৷ যা করার অফিসাররাই করতে পারবেন ৷” এনিয়ে সংস্থার কোনও আধিকারিক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি ৷ তবে প্রতারিতা মহিলারা জানিয়ে দিয়েছেন, খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হবেন ৷
আরও পড়ুন: