মালদা, 8 জুন : দিনের পর দিন অল্প অল্প করে চুরি হয়ে যাচ্ছে আস্ত নদী ৷ অবাক হওয়ার কিছু নেই ৷ এমনটাই ঘটে চলেছে চাঁচলে ৷ নদীর গতিপথ রুদ্ধ করে তৈরি হয়েছে একের পর এক বহুতল ৷ গড়ে উঠেছে মার্কেট কমপ্লেক্স, এমনকি রিসর্টও ৷ চোখের সামনে এ সব হয়ে চললেও প্রশাসনের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই ৷ গোটা ঘটনায় সরব হয়েছেন এলাকার জেলা পরিষদের সদস্য ৷
চাঁচলের একপাশ দিয়ে বইছে মহানন্দা ৷ সেখান থেকেই একটি শাখানদী চাঁচলের মূল এলাকা দিয়ে গিয়েছে ৷ যা স্থানীয়দের কাছে মরা মহানন্দা নামে পরিচিত ৷ কোনও একসময় মরা মহানন্দায় জলপ্রবাহ ছিল ৷ চাঁচল এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার একমাত্র ভরসা ছিল ছোট্ট এই নদীটি ৷ কিন্তু, সময় যত গড়িয়েছে, ততই রুদ্ধ হয়েছে মরা মহানন্দার প্রবাহ ৷ এখন এই নদীর বুকে মাটি ফেলে তৈরি হচ্ছে বহুতল, মার্কেট কমপ্লেক্স ৷ সবটাই হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায় ৷ এতে ভেঙে পড়েছে চাঁচলের নিকাশি ব্যবস্থা ৷ সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমছে চাঁচল জুড়ে ৷ এই ঘটনা নিয়ে এর আগে একাধিকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন চাঁচলের বাসিন্দারা ৷ কাজ কিছু হয়নি ৷ করোনা আবহে সেই নদীর বুক বুজিয়ে তৈরি হচ্ছে আরও একটি বহুতল ৷ খবর পেয়েই সেখানে ছুটে যান স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য ৷ তাঁর সাফ হুঁশিয়ারি, এই বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করতে তিনি প্রশাসনের সব মহলেই যাবেন ৷
আরও পড়ুন : বেআইনি নির্মাণ দখলমুক্ত করতে গিয়ে বাধার মুখে ADDA আধিকারিকরা
স্থানীয় বাসিন্দা আফজল হোসেন বলেন, “খবর পেয়ে এখানে এসে দেখি, মরা মহানন্দার মূলস্রোত জঞ্জাল দিয়ে বন্ধ করে বহুতল নির্মাণ করা হচ্ছে ৷ লকডাউনের মধ্যেই এই কাজ করা হচ্ছে ৷ এর আগেও আমরা এমন ঘটনা দেখেছি ৷ বেশ কিছু জায়গায় নদীকেই দখল করে নিচ্ছে একশ্রেণির মানুষ ৷ এর ফলে চাঁচলের নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে ৷ প্রশাসনের এ ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ৷’’ আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মহবুল হক বলেন, “যেখানে নদীর বুকে বাড়িটি তৈরি হচ্ছে, সেটা চাঁচল বাসস্ট্যান্ডের পিছনে ৷ এর আগে এখানে নদীতে একটি মার্কেট কমপ্লেক্সও হয়েছে ৷ আজ আমরা হঠাৎ খবর পাই, লকডাউনের মধ্যে মরা মহানন্দার খাত বুজিয়ে বহুতল তৈরি হচ্ছে ৷ সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় মানুষজন ও জেলা পরিষদ সদস্যকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসি ৷ দেখা যায়, যা শোনা গিয়েছিল সেটা সঠিক ৷ এর আগে কৃষ্ণগঞ্জে এই নদী ভরাট করে একটি রিসর্ট তৈরি করা হচ্ছিল ৷ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানিয়ে সেই রিসর্টের কাজ বন্ধ করা হয়েছে ৷ মরা মহানন্দাকে বুজিয়ে যেখানেই এমন কাজ হোক না কেন, আমরা আন্দোলনে নামব ৷ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে অভিযোগ জানাব ৷ এক্ষেত্রেও তা করা হবে ৷’’
আরও পড়ুন : কোরোনা পরিস্থিতির সুযোগে সরকারি জমিতে বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, কড়া ব্যবস্থার নির্দেশ গৌতমের
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পর মালদা জেলা পরিষদের সদস্য সামিউল ইসলাম বলেন, “খবর পেয়েছিলাম মরা মহানন্দার উপর একটি নতুন বহুতল তৈরি করা হচ্ছে ৷ এসে দেখলাম, সেই খবর সঠিক ৷ এই কাজ পুরোপুরি অবৈধ ৷ বাড়ি তৈরির জন্য নদীখাতে মাটি ফেলে উঁচু করা হয়েছে ৷ আর লকডাউনের মধ্যে এ ভাবে শ্রমিক নিয়োগ করে বাড়ি নির্মাণের কাজ করানো যায় না ৷ বিষয়টি আমি জেলাশাসককে জানাচ্ছি ৷ চাঁচলে জল নিকাশির ব্যবস্থা নেই ৷ সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটে জল জমে ৷ এর আগে এনিয়ে আলোচনা করা হলেও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি ৷ যাই হোক, এই অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করার জন্য আমি জেলাশাসককে অভিযোগ জানাব ৷ চাঁচলের মহকুমাশাসককেও জানাব ৷’’