মালদা, 16 মে : কালিয়াচকের রেশম শিল্পের সুদিন কি সত্যিই ফিরে আসছে ? এদিন মালদায় রেশম শিল্প পরিদর্শনে এসেছিলেন এক প্রতিনিধি দল ৷ সেই দলের সঙ্গে ছিলেন জেলা রেশম বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর অভিজিৎ গোস্বামী। এদিন তাঁরা শেরশাহী এলাকায় রেশম সুতো তৈরির যাবতীয় কাজ পরিদর্শন করেন (Silk Cultivation in Malda) । পরে তাঁরা পুরাতন মালদার নারায়ণপুরের একটি সিল্ক ফ্যাক্টরিও পরিদর্শন করেন। তবে এ নিয়ে তাঁরা সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি।
এদিন আইএএস অফিসারদের প্রতিনিধি দলটি শেরশাহী এলাকার রেশম কাটাই শিল্পের তত্ত্বতালাশ করে। শেরশাহী গ্রাম এই জেলায় রেশম সুতো উৎপাদনের হাব নামে পরিচিত। গ্রামের অনেক বাড়িতেই রয়েছে রেশমের কোকুন থেকে সুতো তৈরি করার যন্ত্র। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে সেই কাজ খতিয়ে দেখেন। এখনও পর্যন্ত এই শিল্পে কী কী সরকারি সুযোগ সুবিধে মিলেছে, আরও কী কী প্রয়োজন, তা তাঁরা নোট করেন। কথা বলেন সুতো তৈরির কারিগর থেকে শুরু করে কারখানার মালিকদের সঙ্গেও।
এনিয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ না খুললেও এলাকার এক রেশম রিলার মহম্মদ শরিফ আলি বলেন, "এদিন আইএএস অফিসারদের প্রতিনিধি দলটি রিলিংয়ের কাজ পরিদর্শন করেছে। দলের সদস্যরা রেশমগুটি ও সুতোর মানও খতিয়ে দেখেছেন। সুতোর বাজার দরের কথা জানতে চান। এখন প্রতি কিলো সুতো চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাঁরা সবকিছু খতিয়ে দেখে খুশি হয়েছেন। আমরা তাঁদের কাছে দাবি জানিয়েছি, সরকারিভাবে যেন আমাদের উন্নতমানের যন্ত্রপাতি এবং আর্থিক সহায়তা করা হয়।"
আরও পড়ুন : মালদায় মজুত করা কীটনাশকে থেকে দেখা দিচ্ছে রোগ, তদন্তে জেলা প্রশাসন
কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের এক ফিল্ড ডেমনেস্ট্রেটর লক্ষ্মণ মণ্ডল বলেন, "আমার এলাকায় প্রায় চার হাজার রিলার রয়েছেন। তাঁদের রিলিং মেশিনের যাবতীয় জিনিসপত্র আজ খুঁটিয়ে দেখেছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। সব দেখে তাঁরা খুশি হয়েছেন। রিলাররা তাঁদের কাছে সুতো রাখার জন্য বিজ্ঞানসম্মত গুদামঘরের দাবি জানিয়েছেন।"
মালদা জেলায় প্রায় 21 হাজার একর জমিতে তুঁতের চাষ করা হয়। জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লকে চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি রেশম উৎপাদন হয় কালিয়াচকের তিনটি ব্লকে। গোটা জেলায় এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ। প্রায় 61 হাজার পরিবার এই শিল্পের মাধ্যমে গ্রাসাচ্ছাদন করে থাকে। জেলায় প্রতি বছর রেশমচাষের ছ'টি মরশুম। বছরে গড়ে রেশম সুতো উৎপাদন হয় প্রায় 1500 মেট্রিক টন কোকুন।
আরও পড়ুন : রেশম চাষ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ নীতি আয়োগের প্রতিনিধি দলের
তা থেকে হলুদ ও সাদা রংয়ের সুতো হয়ে থাকে। হলুদ সুতো স্থানীয় ভাষায় নিস্তারী নামে পরিচিত। বর্তমানে এর বাজারদর কিলো প্রতি চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। আর উন্নত মানের সাদা সুতো বাইভোল্টাইন বা জাপানি সুতো নামে পরিচিত। এর বাজারদর কিলো প্রতি পাঁচ হাজার টাকা। জেলায় উৎপাদিত সুতো উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের অনেক জায়গার রফতানি হয়। দীর্ঘদিন ধরেই রেশম শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন দাবি জানিয়ে আসছেন এই জেলাতেই রেশম সুতো থেকে বস্ত্র তৈরির কারখানা করা হোক। তাতে জেলার রেশমচাষের পরিধি আরও বাড়বে।