মালদা, 5 অগস্ট: ডিউটি করার লাঠি দিয়ে পেটানোর পর শ্বাসরোধ করে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে উত্তাল হল পুরাতন মালদা (Husband Surrendered to the Police After Killing his Wife)। শুক্রবার বাড়ি থেকে সামান্য দূরে একটি আমবাগানে ঝুলন্ত স্ত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ঘটনার কথা চাউর হতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এলাকার মানুষজন । জনরোষ আছড়ে পড়ার আগেই স্থানীয় থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে অভিযুক্ত স্বামী । ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদার শনিবাথান এলাকায় । খবর পেয়ে মালদা থানার পুলিশ মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠিয়েছে ।
মৃতার নাম মাম্পি মণ্ডল । বয়স 23 বছর । বাপের বাড়ি মালদা থানারই পোপড়া গ্রামে । বছর পাঁচেক আগে দেখাশোনা করে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয় শনিবাথান গ্রামের জয়ন্ত মণ্ডলের সঙ্গে । বিয়ের সময় জয়ন্ত বেকার ছিল । বছর তিনেক আগে সে হোমগার্ডের চাকরি পায় । বর্তমানে পুরাতন মালদাতেই ট্রাফিকের ডিউটি করে । তাঁদের দুটি ছেলেও রয়েছে । বড়টির বয়স চার বছর, ছোটটির মাত্র সাত মাস ।
আরও পড়ুন: স্ত্রী'কে খুন করে সাইকেলে চেপে পুলিশের কাছে গেলেন স্বামী !
মালদা থানায় দায়ের করা অভিযোগপত্রে মাম্পির বাবা রামু মণ্ডল জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকে মাঝেমধ্যেই মেয়েকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলত জামাই । তাতে রাজি না-হওয়ায় মেয়ের উপর ব্যাপক অত্যাচার চালাত জামাই ও তার বাড়ির লোকজন । বিষয়টি শুনে তিনি জামাইকে টাকাপয়সাও দিয়েছিলেন । কিন্তু মেয়ের উপর অত্যাচার কমেনি । তাঁরা মাঝেমধ্যে মেয়ের বাড়ি গিয়ে তাকে বুঝিয়ে আসতেন । এরই মধ্যে গত পরশু জামাই তার ডিউটির লাঠি দিয়ে মেয়েকে মারধর করে । খুন করার জন্য ধারালো হাঁসুয়া নিয়ে তাড়া করে । সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে মেয়ে কোনওমতে রক্ষা পায় । এদিন সকালে শনিবাথান গ্রামের এক বাসিন্দা তাঁদের জানান, গলায় শাড়ির ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাঁর মেয়ের মৃতদেহ আমবাগানে দেখা গিয়েছে । তাঁদের অনুমান, মাম্পি আত্মহত্যা করেনি । তাকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
মাম্পির মা শকুন্তলা মণ্ডলের বলেন, "জামাই মদ খেয়ে আমার মেয়েকে খুব মারত । হাঁসুয়া নিয়ে তাড়াও করেছিল । মেয়ে আমাদের সব জানিয়েছিল । আমি ওকে মানিয়ে চলতে বলেছিলাম । ভাবতে পারিনি, জয়ন্ত আমার মেয়েকে খুন করে দেবে । ও নাকি আমার মেয়েকে বিয়ে করে সুখী ছিল না । আমার মেয়ের নাকি দোষ আছে । ও আমার মেয়েকে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে । আমি ওর শাস্তি চাই ।"
আরও পড়ুন: বাঁকুড়ায় ছেলের হাতে 'খুন' মা
একই দাবি, মাম্পির কাকা স্বপন মণ্ডলেরও । তিনি বলেন, "চাকরির জন্য জামাইকে এক লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম । সেই চাকরি হওয়ার পর থেকেই মেয়ের উপর অত্যাচার শুরু করে জয়ন্ত । চাকরি পাওয়ার পর বিয়ে করলে ও নাকি অনেক পণ পেত । আজ মাম্পির বড় ছেলে আমাদের সাফ জানিয়েছে, ওর মাকে লাঠি দিয়ে মেরে খুন করেছে বাবা ।"
মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত হোমগার্ড জয়ন্ত মণ্ডলকে আটক করা হয়েছে । মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে । গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে ।